আজ ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস। দেশে নারী শিক্ষার অগ্রদূত এবং সমাজ সংস্কারক বেগম রোকেয়ার অবদান স্মরণ করতে প্রতি বছরের মতো এবারো দিবসটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য নারীদের ‘বেগম রোকেয়া পদক’ প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
নারী শিক্ষার প্রসারে বেগম রোকেয়ার অবদানের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আলাদা বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা দুজনই ‘বেগম রোকেয়া পদক ২০২৪’ পেতে যাওয়া নারীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এদিকে বাংলা একাডেমির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৪৪তম জন্মবার্ষিকী ও ৯২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুরে বাংলা একাডেমি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রে এ আলোচনা সভা হবে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সিরাজাম মুনিরা এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল। মিঠাপুকুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বর্মণ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
আলোচনায় অংশ নেবেন তারাগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এআইএম মুসা এবং রংপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মো. মোতাহার হোসেন সুজন।
এদিকে বেগম রোকেয়ার জীবন, কর্ম ও আদর্শ সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে তার জন্মভূমি রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে গড়ে তোলা হয় স্মৃতিকেন্দ্র। মিলনায়তন, সেমিনার কক্ষ, গ্রন্থাগার, গবেষণাকেন্দ্র, সংগ্রহশালা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র মিলে বেশ সমৃদ্ধ এটি। আলো ছড়ানো কেন্দ্রটি ছয় বছর ধরে আঁধারে ঢাকা। এটি খোলার উদ্যোগ নেই কারো। স্মৃতিকেন্দ্রটি একটি ভবনেই শুধু সীমাবদ্ধ।
পাশাপাশি দখলদারদের দৌরাত্ম্যে হারিয়ে যেতে বসেছে বেগম রোকেয়ার বসতভিটা। চার পাশে দেয়াল ছাড়া আর কিছুই নেই। এসব স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই জেলা প্রশাসন ও দায়িত্বশীলদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে রোকেয়ার বসতভিটা। সেখানে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি। এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সংরক্ষণের অভাবে দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ ক্রমেই মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। ঘরের একটি জানালা ও কয়েকটি পিলার এখনো টিকে আছে। এসব দেখে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বেগম রোকেয়ার অনুরাগীরা ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেন।
অপরদিকে, রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র ঘুরতে এসে রোকেয়া সম্পর্কিত তেমন কিছু না পেয়ে হতাশ দর্শনার্থীরা। ভেতরে নেই স্মৃতিচিহ্ন। মিলনায়তন, সেমিনার কক্ষ, গ্রন্থাগার, গবেষণাকেন্দ্র, সংগ্রহশালা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র সবই আছে, কিন্তু সব কক্ষের দরজায় ঝুলছে তালা। সংস্কারের অভাবে ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দৃষ্টিনন্দন মিলনায়তনটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। বেশিরভাগ কক্ষের জানালার কাচ ভাঙা। সংগ্রহশালার ধূলিমলিন কাচের আলমারিগুলোতে নেই কোনো স্মারক। সব কক্ষের দেয়ালে পড়ে আছে শ্যাওলা। ভেতরের জিনিসপত্র এবং আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন উপকরণ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাকি জিনিসপত্র। নেই সংস্কারের উদ্যোগ। কার্যত ছয় বছর ধরে স্মৃতিকেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, একদিন উৎসব করে রোকেয়া দিবস পালন করা হয়। এজন্য কয়েকদিন আগে থেকে রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র ও বসতভিটার খোঁজ করতে থাকেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। দিনটি ঘিরে স্মৃতিকেন্দ্রটির ধোয়ামোছা, রঙ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। হয় আলোচনা সভা, সেমিনার আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চলে বড় বড় বক্তৃতার প্রতিযোগিতা। একদিন পরেই আর কারো কোনো খোঁজ থাকে না। বছরের বাকি দিন অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকে স্মৃতিকেন্দ্র ও বসতভিটা। রোকেয়ার স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলার কোনও পদক্ষেপ নেই। স্মৃতিকেন্দ্রটির কার্যক্রম ছয় বছর ধরে বন্ধ থাকলেও খোলার উদ্যোগ নেই।
বেগম রোকেয়ার মরদেহ ভারত থেকে দেশে আনার দাবি দীর্ঘদিনের। স্থানীয়রাসহ রোকেয়াপ্রেমীদের প্রত্যাশা, রোকেয়ার মরদেহ ভারত থেকে নিয়ে এসে পায়রাবন্দের মাটিতে সমাহিত করা হয়। এই দাবি যেন জেলা প্রশাসন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে ফাইল চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ