উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারগুলোর ওপর। প্রতি মাসে বাড়ছে শিক্ষাব্যয়। এর প্রভাব পড়েছে স্কুল শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়েও। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়। তবে গত ডিসেম্বরে কিছুটা উন্নতি হয়েছে স্কুল ব্যাংকিংয়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে স্কুল শিক্ষার্থীদের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭১ কোটি টাকা। এটি তার আগের মাস নভেম্বরে ছিল দুই হাজার ৪১ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে আমানত বেড়েছে ৩০ কোটি টাকা। তবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস শেষে আমানতের স্থিতি ছিল দুই হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আমানতের স্থিতি কমেছে ১০৮ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানতের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা। এটি তার পরের মাস আগস্টে কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৭২ কোটি। সেপ্টেম্বরে তা আরো কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। অক্টোবরে আমানতের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ৮৭ কোটি টাকা এবং নভেম্বরে কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে আমানত কমলেও ডিসেম্বরে এসে কিছুটা বেড়েছে।
ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ১৫৯টি। আগের মাস নভেম্বরে হিসাব সংখ্যা ছিল ৪৩ লাখ ৪২ হাজার ২৫৯টি। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৩৭ হাজার ৯০০টি। এর মধ্যে ছেলেদের হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ লাখ ৩২ হাজার ৬৭২টি আর মেয়েদের হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৮৭টি। নভেম্বরে ছেলেদের হিসাব সংখ্যা ছিল ২২ লাখ ৫ হাজার ৯৮৪টি আর মেয়েদের হিসাব সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৫টি। এক মাসের ব্যবধানে (ডিসেম্বর) ছেলেদের হিসাব বেড়েছে ২৬ হাজার ৬৮৮ ও মেয়েদের হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ১১ হাজার ২১২টি।
এর আগে ২০১০ সালে শিক্ষার্থীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনা ও তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। এ কার্যক্রমের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে টাকা জমানোর অভ্যাস তৈরি করা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় তাদের আরো উপযোগী করে গড়ে তোলা। তবে ২০১০ সালে স্কুল ব্যাংকিং শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। প্রথম বছরে অর্থাৎ ২০১১ সালে ২৯ হাজার ৮০টি স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয়।
জানা যায়, এখন পর্যন্ত ৫৯টি ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করেছে। ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। স্কুল ব্যাংকিংয়ে সব ধরনের ফিস ও চার্জের ক্ষেত্রে রেয়াত পাওয়া, বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়া, ন্যূনতম স্থিতির বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে ছাড় ও স্বল্প খরচে ডেবিট কার্ড পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। মাত্র ১০০ টাকা আমানত রেখেই এ হিসাব খোলা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, বিভিন্ন কারণে আমাদের ব্যাংক খাতের ওপর এক ধরনের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছিল। যদিও সেটি ধীরে ধীরে কেটে উঠছে। এর একটা প্রভাব স্কুল ব্যাংকিংয়েও পড়েছিল। এখন ব্যাংকগুলোকে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আরো বেশি উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ