আমদানি করা ফল বিলাসী পণ্য বিবেচনা করে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করা হয়েছিল। সরকার রাজস্ব বৃদ্ধির বিবেচনায় ফল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করলেও ফলাফল হয়েছে উল্টো। আমদানি কমে যাওয়ায় কমে রাজস্ব আদায়ও।
এই রমজানে ফলের বাজার স্থিতিশীল এবং সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখতে ফল আমদানিতে বাড়তি শুল্ক-কর প্রত্যাহারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
প্রতিষ্ঠানটি তাজা ফল আমদানিতে বাড়তি শুল্ক ও অগ্রিম কর (এটি) প্রত্যাহার এবং অগ্রিম আয়কর (এআইটি) কামানোর সুপারিশ করেছে; যা বিবেচনা করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি ট্যারিফ কমিশন থেকে এনবিআরকে সুপারিশ করে চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ফল আমদানিতে শুল্ককর কমানোর দাবিতে ফল আমদানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এনবিআরের একটি সূত্র জানায়, তাজা ফল আমদানিতে শুল্ক কর কমানোর কয়েকটি সুপারিশ ইতোমধ্যে এনবিআরে জমা হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছি। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ট্যারিফ কমিশনের চিঠিতে রোজায় খেজুরসহ অন্যান্য তাজা ফল যৌক্তিক মূল্যে ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর জন্য সরাসরি আমদানিকারকের মাধ্যমে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক অথবা ভ্যানে করে যৌক্তিক মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করার সুপারিশ রয়েছে। এটি করা সম্ভব হলে বাজার ব্যবস্থাপনায় যে সব মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্য ফলমূলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাদের দৌরাত্ম্য অনেকটা কমানো সম্ভব হবে।
চিঠিতে ট্যারিফ কমিশন বলেছে, ফলের চাহিদার বড় অংশ পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। কিন্তু গত কয়েক বছর ডলারের দাম ও শুল্ককর বাড়ার কারণে ফলের দাম বেড়েছে। শুল্ককর কাঠামো এবং ২০২১-২২ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আমদানির চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফল আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
যেমন- আপেল আমদানি কমেছে প্রায় ৫২ শতাংশ। এ ছাড়া মাল্টা আমদানি ৭১ ও আঙুর আমদানি ২৯ শতাংশ কমেছে। ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি ফলকে বিলাসী পণ্য বিবেচনা করে এর ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার কারণে আমদানি আরো কমে। ২০২৪ সালের জানুয়ারির তুলনায় গত জানুয়ারিতে ম্যান্ডারিন আমদানি কমেছে ৫১ শতাংশ। এ ছাড়া আঙুর ২১, আপেল তিন, নাশপাতি ৪৬, আনার, ড্রাগন ফল ৩২ শতাংশ আমদানি কমেছে। কারণ বর্তমানে ৮৬ টাকায় ফল আমদানি করা হলে তার ওপর কর দিতে হয় ১২০ টাকা। যা ভোক্তার জন্য অনেকটা অসহনীয়। বর্তমানে সবমিলিয়ে ফল আমদানিতে মোট শুল্ক ভার রয়েছে ১৩৬ দশমিক ২০ শতাংশ।
এ ক্ষেত্রে কমিশন বলেছে, এটি সমীচীন নয়। উচ্চ শুল্কের কারণে বৈধ পথে আমদানি কমে অবৈধ পথে বাড়বে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে তাজা ফলে অতি মাত্রায় কেমিক্যাল ব্যবহারের প্রবণতা বাড়তে পারে। আমদানি কমে গেলে শুধু ভোক্তার ক্ষতি নয়, রাজস্ব আহরণও কমে যাবে।
এসব দিক বিবেচনায় ফল আমদানির পরবর্তী পর্যায়ে তেমন কোনো প্রক্রিয়াজাত (মূল্য সংযোজন) করা হয় না; তাই অগ্রিম কর (স্থানীয় পর্যায়ের অগ্রিম ভ্যাট পাঁচ শতাংশ) আরোপ করা সমীচীন নয়। এতে ব্যবসায়ীদের রিফান্ড নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হয় এবং তা অনুমোদনের জন্য সময়ক্ষেপণসহ আর্থিক চাপের মুখে পড়তে হয়। তাই খাদ্য পণ্য হিসেবে এটি অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে।
চিঠিতে বলা হয়, মোট আমদানি মূল্যের ওপর ১০ শতাংশ এআইটি আরোপের কারণে তা সমন্বয়ের করতে ব্যবসায়ীদের অস্বাভাবিক মুনাফা দেখাতে হয়। বাস্তবতার সঙ্গে যার কোনো মিল নেই। বরং এতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ তৈরি হয়।
অন্যদিকে, রিফান্ড দাবি করার জন্য ব্যবসায়ীকে আর্থিক ও অন্য চাপের মুখে পড়তে হয়। তাই এআইটি ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে দুই শতাংশ করা যেতে পারে। এ ছাড়া নিত্যপণ্য আইন-১৯৫৬ অনুযায়ী তাজা ফল অত্যাবশ্যকীয় পণ্য যার ওপর আরোপিত অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার বা যৌক্তিক করা যেতে পারে।
কারণ রাজস্ব বাড়াতে এসব শুল্ককর বাড়ানো হলেও আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আনুপাতিক হারে এবং প্রত্যাশা অনুসারে বাড়েনি বলে উল্লেখ করেছে কমিশন।
সংস্থাটি বলেছে, ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি-২০২৩ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ মূলক শুল্ক কেবল জরুরি প্রয়োজনে আরোপ করা যাবে। কিন্তু ফল আমদানিতে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক রয়েছে। ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় এটিও যৌক্তিক করা যেতে পারে।
অন্যদিকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ট্যারিফ কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ন্যায্যমূল্যে ভোক্তাদের কাছে খেজুরসহ অন্যান্য ফল পৌঁছানোর জন্য ঢাকা শহরের বিভিন্ন জনবহুল স্থানে ফল আমদানিকারকদের মাধ্যমে অস্থায়ী ভ্যান বা ট্রাকের মাধ্যমে খেজুর ও তাজা ফল বিক্রি করার বিক্রি করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এই বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফআইএ) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে সরকারকে ফল আমদানিতে শুল্ককর ও শুল্কায়ন মূল্য যৌক্তিক করে ধার্য করতে হবে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ