চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় দুই লাখ টন আমদানি করা পণ্য বছরের পর বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এইসব পণ্য বন্দরের ১৮ শতাংশ জায়গা দখল করে রেখেছে।
কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, নিলাম প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণেই এই জট সৃষ্টি হয়েছে।
এতে একদিকে বন্দরের মূল্যবান জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে রাজস্ব আদায়ে ব্যাঘাত ঘটছে বলে মনে করছেন বন্দর ও কাস্টমসের কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আসা এসব কনটেইনার নানা কারণে আমদানিকারকরা খালাস করেননি।
বাজার দর কমে যাওয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকা, শুল্ক সংক্রান্ত জটিলতা, ও নিয়মবহির্ভূত চালান এনে জরিমানা এড়ানোর জন্যই এসব পণ্য খালাস হয়নি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্রুত এসব পণ্য ছাড় করাতে নিলাম আইন সংশোধনসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, পরিত্যক্ত কনটেইনার বন্দরের ১৮ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে। ফলে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানোর মতো জরুরি কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউ (প্রতিটি ২০ ফুট হিসাবে) কনটেইনার রাখার জায়গা আছে। কিন্তু, এর মধ্যে ১০ হাজারের বেশি কনটেইনার পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব কনটেইনার বাবদ বন্দরের ভাড়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা; যা আদায়ের সম্ভাবনা খুবই কম।
তিনি বলেন, এখন ভাড়া আদায়ের চেয়ে বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা খালি করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
বন্দর ও কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, দ্রুত নিলাম না হওয়ায় বিপুল পরিমাণ পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতি বছর শত শত কনটেইনার ভর্তি পণ্য ধ্বংস করা হয়। এতে বাড়তি খরচ হওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হচ্ছে বলে মনে করছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
পরিত্যক্ত কনটেইনারের মধ্যে ৩৮৩টি কনটেইনারে রয়েছে আপেল, কমলা, আদার মতো পচনশীল পণ্য। ৩৫৭টি কনটেইনারে রয়েছে দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ। বাকি কনটেইনারে রয়েছে ভোগ্যপণ্য, প্রসাধনী, প্লাস্টিক সামগ্রী, ইলেকট্রনিকস, চামড়াজাত পণ্য, নির্মাণ সামগ্রী, সিরামিক টাইলসসহ নানা ধরনের আমদানি পণ্য।
এ ছাড়া, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমদানি করা ৪৫৩টি গাড়িও বন্দরে আটকে আছে, যা ২০৮টি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নামে আনা হয়েছিল।
কাস্টমসের নিলাম তথ্য অনুযায়ী, পরিত্যক্ত এসব পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় আট হাজার কোটি টাকা হলেও, গত পাঁচ বছরে মাত্র ১৪৮টি নিলামের মাধ্যমে ৩৮০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করা গেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন বলেন, নিলাম প্রক্রিয়া দ্রুত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), অর্থ মন্ত্রণালয় ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়ম সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ৫০ জন কাস্টমস কর্মকর্তাকে নিলামের কাজের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা পণ্য তালিকাভুক্তকরণ ও দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে কাজ করবেন।
বর্তমানে প্রথম নিলামে সংরক্ষিত মূল্য (আমদানি মূল্য ও শুল্ককর) ৬০ শতাংশের কম দামে পণ্য বিক্রি করা যায় না। ফলে অনেক ক্রেতাই দ্বিতীয় বা তৃতীয় নিলামের জন্য অপেক্ষা করেন, যেন দাম কমে আসে। এতে প্রতিটি নিলামে তিন থেকে সাত দফা দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্তত নয় মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যায়।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ৬০ শতাংশ সংরক্ষিত মূল্য শর্ত শিথিল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইন দ্রুত নিষ্পত্তি করা ও স্পট নিলাম চালু করার বিষয়েও কাজ চলছে, যেন দ্রুত ক্রেতা পাওয়া যায়।
এ ছাড়া, সরকারি-বেসরকারি সর্বোচ্চ দরদাতা নির্দিষ্ট আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও নিলামে অংশ নেওয়ার সুযোগও রাখা হবে বলে জানান কাস্টমস কর্মকর্তারা।
আমারবাঙলা/এমআরইউ