গত সাত বছরে দেশে সুগন্ধি চালের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সেদ্ধ চালের তুলনায় কৃষকরা বেশি দাম পাওয়ায় তারা সুগন্ধি ধান উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সুগন্ধি চাল উৎপাদন হয়েছিল পাঁচ লাখ ৭৯ হাজার টন এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদিত চালের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৩ হাজার টন।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, চাহিদা বাড়ার কারণেই এই ধানের আবাদ বেড়েছে। সরকার কয়েক বছর আগে দামি চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়ায় অনেক কৃষক সুগন্ধি ধান উৎপাদনে মনোযোগ দেন। তাই উত্পাদন অনেক বেড়েছে।
তিনি মনে করেন, সুগন্ধি ধান চাষ বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো এ জাতের ধান স্থানীয় জাতের তুলনায় ভালো ফলন দেয় এবং খেতে সুস্বাদু।
জানা যায়, সুগন্ধি চাল দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় চাষ হয়। একই জাতের ধানকে অঞ্চলভেদে ভিন্ন নামে ডাকা হয়। আমন মৌসুমে এই জাতের ধান চাষ হয়।
ব্রি'র তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে ৩৩ ধরনের সুগন্ধি ধানের চাষ হচ্ছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে-বিদেশে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ও সুগন্ধি ধানের বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় চাষিরা এই ধান চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বেশি ফলন ও মুনাফার কারণে কৃষকরা দেশি জাতের সুগন্ধি ধানের তুলনায় উচ্চ ফলনশীল সুগন্ধি ধান চাষে বেশি আগ্রহী। তাই এর উৎপাদন বাড়ছে। স্থানীয় জাতগুলো চাষে বিঘাপ্রতি ধান পাওয়া যায় ১৮৭ থেকে ২৯৯ কেজি। উচ্চ ফলনশীল জাতে প্রতি বিঘায় ধান পাওয়া যায় ৪৪৮ থেকে ৮২১ কেজি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানাচ্ছে, দেশের মাটি-আবহাওয়া সুগন্ধি ধান চাষে উপযোগী। নওগাঁ, রাজশাহী, পঞ্চগড়, রংপুর, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, শেরপুর ও ঠাকুরগাঁও সুগন্ধি চালের বাণিজ্যিক উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র।
কিন্তু উৎপাদন দ্রুত বাড়লেও দেশীয় ক্রেতাদের চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় অনেক ব্যবসায়ী এই চাল রপ্তানি সহজ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, রপ্তানির সম্ভাব্য নেতিবাচক দিক নিয়ে সতর্ক করেছেন খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের কর্মকর্তারা।
এক কর্মকর্তার ভাষ্য, যেহেতু দেশে কৃষিজমির পরিমাণ ক্রমেই কমছে, সেহেতু সুগন্ধি ধান চাষ বেড়ে গেলে মোটা ধানের উত্পাদন কমে যেতে পারে। প্রাথমিক খাদ্য সরবরাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সতর্কতার সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, আমরা বর্তমানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে চাল আমদানি করছি। তবে এখন সুগন্ধি চাল রপ্তানির সঠিক সময় নয়। সীমিত পরিমাণে রপ্তানির সুযোগ দিলে কৃষকরা লাভবান হবেন। বেশি পরিমাণে রপ্তানির বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন লাগবে। তবে এখন পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুগন্ধি চাল রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ২৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। পরের বছর তা কমে হয় ২০ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ লাখ ৭০ হাজার ডলারের সুগন্ধি চাল রপ্তানি হলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে পরের অর্থবছরে (২০২২-২৩) রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ছয় মিলিয়ন ডলার।
ইপিবির প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়নি।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক নথিতে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে সুগন্ধি চাল আমদানি হয়নি।
তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই দশমিক ৬১ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৭ দশমিক ৭৬ টন ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৪ দশমিক ১৪ টন চাল আমদানি হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নথিতে আরো দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সরু বাসমতী চাল আমদানির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৮৯১ টন। পরের অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ছয় হাজার ৩৩৪ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা আরও বেড়ে হয় সাত হাজার ৭১২ টন। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি কমে চার হাজার ৬১৫ টনে নেমে আসে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা আরো কমে হয় ৭৯৯ টন।
আমারবাঙলা/এমআরইউ