বেসরকারি খাতে পরিচালিত এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আফজাল পদত্যাগ করেছেন। তিনি ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন এবং সেখান থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি সৈয়দ মিজানুর রহমানকে এমডি পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তারিক আফজাল ২০১৮ সালে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে এবি ব্যাংকে যোগ দেন। ২০১৯ সালের ৮ জুলাই তিনি ব্যাংকটির এমডি পদে দায়িত্ব পান।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি এবং উদ্যোক্তাদের অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কারণে ব্যাংকটির আর্থিক সূচক ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ বেড়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে চাহিদামতো নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হলে ডিসেম্বর শেষে এই ব্যাংককে আট হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক থাকলেও আর্থিক পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এরপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার যে বিশেষ ছাড় দিয়েছিলেন, তাতে ব্যাংকটি গত বছরে ৭২ কোটি টাকা মুনাফা দেখিয়েছে। তবে জুন শেষে মুনাফা কমে ১৪ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।
এবি ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন সাবেক বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটি তাঁর পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের পক্ষে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ওয়াহিদুল হক, যিনি মোরশেদ খানের চা-বাগানের পরিচালক ছিলেন। এরপর সাবেক ডেপুটি গভর্নর মোহাম্মদ এ (রুমী) আলীও তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন। এখন ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খায়রুল আলম চৌধুরী।
জানা গেছে, এবি ব্যাংকের শীর্ষ গ্রাহকদের বেশির ভাগই নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছেন না। এর মধ্যে অন্যতম হলো সিকদার গ্রুপ, আশিয়ান সিটি, বিল্ডট্রেড, মাহিন গ্রুপ, আমান গ্রুপ, এরশাদ ব্রাদার্স ও স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম ওরফে মিঠুর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণও ঠিকমতো আদায় করতে পারছে না ব্যাংকটি। এ ছাড়া মোরশেদ খানের মালিকানাধীন, বন্ধ হয়ে যাওয়া মোবাইল অপারেটর সিটিসেলের ঋণও খেলাপি হয়ে রয়েছে। ফলে ব্যাংকটির ঋণ থেকে যে সুদ আয় হচ্ছে, তা দিয়ে আমানতকারীদের সুদ পরিশোধ করতে পারছে না। গত জানুয়ারি-জুন সময়ে সুদ খাতে ব্যাংকের লোকসান হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা। এই সময়ে ঋণ থেকে সুদ আয় হয়েছে ১ হাজার ২৯২ কোটি টাকা, তবে আমানতকারীদের সুদ দিতে হয়েছে ১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। ব্যাংকটির শীর্ষ গ্রাহক তালিকায় ভালো প্রতিষ্ঠান নেই, তবে রয়েছেন প্রভাবশালীরা।
২০১৯ সালে এবি ব্যাংকের এমডি হয়ে তারিক আফজাল রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্য হন। ফলে এবি ব্যাংকের অনিয়ম ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নিশ্চুপ থাকে। আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে তিনি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। এরপর গত মাসে ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে আফজাল করিম কানাডায় চলে যান। আজ রোববার ওই ছুটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আজই তিনি ই–মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আমার বাঙলা/ এসএ