বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বাংলাদেশে কোনও দুর্ভিক্ষ হবে না। আমরা শ্রীলঙ্কা হয়ে যাইনি। আমাদের গ্রোথ কমেনি। বিনিয়োগ হার ও পরিবেশ ঠিক করছি। আমরা আশাবাদী, সামনে বিনিয়োগ আসবে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বণিক বার্তা আয়োজিত তৃতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন ‘বৈষম্য, আর্থিক অপরাধ ও বাংলাদেশের অর্থনীতির নিরাময়’ শীর্ষক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, যেকোনও পলিসি ইমপ্লিমেন্ট করলেও মূল্যস্ফীতি এক বছরের আগে কোনও দেশেই কমে না। মাত্র ৪ মাস সময় পার করছি। আমাকে আরও ৮ মাস সময় দিতে হবে। আমরা শুধু মুদ্রানীতির ওপর নির্ভর করছি না। সব প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলা রয়েছে। প্রয়োজন অনুসারে শুল্ক শিথিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বেক্সিমকো কয়েক মাস ধরে তাদের শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারছিল না। সরকার অর্থ দিয়ে তাদের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে। এখন গ্রুপটিতে রিসিভার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাতে এটি (বেক্সিমকো) সচল করা যায়। কোনও বিজনেস (আর্থিক) প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়নি। বেক্সিমকোয় রিসিভার দেওয়া মানে কোম্পানি বন্ধ নয়, বরং এটা সচল করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের ব্যাংক খাত। এখন যদি দ্রুত সংস্কার বা সমাধান চাওয়া হয়, আমার চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। কারণ, এক ব্যাংকের ২৭ হাজার কোটি টাকার অ্যাসেট এক পরিবারের হাতে ছিল। তারা ২৩ হাজার কোটি নিয়েছে। আমার হাতে ম্যাজিক নেই। তবে আমি বলতে পারি কোনও ব্যাংক বন্ধ হবে না। কারণ তাদের তারল্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
অর্থপাচার নিয়ে তিনি বলেন, দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে দেশ থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এটা ফিরে পাওয়া কঠিন। তবে আমাদের জাল ফেলা হয়েছে। এখন গোটানো বাকি। এরইমধ্যে আমরা দেশ ও দেশের বাইরেও যোগাযোগ করেছি। আমাদের সহযোগিতার জন্য চলতি সপ্তাহে আমেরিকার প্রতিনিধি আসছেন, যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি আসবেন, বিশ্বব্যাংক আসবে এবং সিঙ্গাপুরের সঙ্গেও কথা হবে। আমরা চাই না কোনও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বা শিল্প বন্ধ হয়ে যাক। কারণ, সেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। আবার কোনও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হিসাবও জব্দ করা হয়নি, হবেও না। ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। ঢাকায় টোটাল ব্যাংকিংয়ের ৫৯ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৭ শতাংশ, বাকিটা অন্য জায়গা। আমরা এটাকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমাদের এজেন্ট ব্যাংক বড় কাজ করছে। তাদের মাধ্যমে এমএফএস সেবা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
গভর্নর বলেন, কয়েকটি ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না। কিন্তু তাদের নগদ সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে গত ৩ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে কোনও নগদ সহায়তা দেওয়া হয়নি। কারণ ম্যাক্রো ইকোনমি স্ট্যাবল রাখতে হবে। এটা স্ট্যাবল না হলে কোনও বিনিয়োগ হবে না। এজন্য ব্যবসায়ীদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য—যারা ব্যাংকের টাকা মেরেছে, তারা ব্যাংকের সঙ্গে থেকে যেন টাকা ফেরত দেয়। বাইরে যে টাকা চলে গেছে সেসব কীভাবে আইনগত প্রক্রিয়ায় ফেরত আনা যায়, সেই চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, ফরেন এক্সচেঞ্জ শর্টেজ এখন নেই। আমি মনে করি সাপ্লাই সাইডে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্ট নিয়ে আসতে চাইছি। ব্যাংকিং খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর পাকিস্তানের থেকেও দুর্বল। এটা ঠিক হতে ২-৩ বছর সময় লাগবে।
বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সভাপতিত্বে আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডিসহ প্রায় চার শতাধিক অতিথি ।
আমার বাঙলা/ এসএ