ফাইল ফটো
বাণিজ্য

সুযোগ থাকতে পিছিয়ে রয়েছে চামড়া খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের চামড়াখাতে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের শতভাগই স্থানীয়ভাবে পাওয়া গেলেও এ শিল্পের আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে না। প্রতি বছর ঈদুল আজহার পর এ খাতে দুর্বলতা প্রকট হয়ে ওঠে। দুষ্প্রাপ্য পণ্য হলেও, কাঁচা চামড়ার দাম বছরের পর বছর ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।

গত পাঁচ থেকে ছয় বছরে কোরবানির পশুর দাম যেখানে দ্বিগুণ হয়েছে, সেখানে কাঁচা চামড়ার দাম কমে হয়েছে অর্ধেক। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও পিছিয়ে রয়েছে এ খাতটি। সরকারের ৫০০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্য থাকলেও চামড়াখাত থেকে ১০০ কোটি ডলারের বেশি হচ্ছে না। জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে এবং ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য চামড়া খাতের রপ্তানি রূপরেখা তৈরি করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ রূপরেখায় প্রবৃদ্ধির সম্ভাব্য দুইটি দৃশ্যকল্প বিবেচনা করা হয়। প্রথম দৃশ্যকল্প রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা, স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি এবং অতীতের প্রবণতার উপর ভিত্তি করে তৈরি। অন্যদিকে দ্বিতীয় দৃশ্যকল্পের প্রাক্কলন বের করা হয় সরকারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার উপর নির্ভর করে। কিন্তু রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ও প্রবণতা বিবেচনা করলে দেখা যায় যে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে খাতটি এখনো অনেক পিছিয়ে। এদিকে রপ্তানি আয়ের অধিকাংশই আসে চামড়ার জুতা থেকে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের আয় কমেছে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। এ সময়ে আয় হয়েছে ৯৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার, যা আগে ছিল ১১২ কোটি ডলার।

চামড়া ও চামড়া জাত পণ্য থেকে আয় সরকারের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২১ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম। জুলাই-এপ্রিল সময়ের জন্য সরকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১২২ কোটি ডলার, যার বিপরীতে আয় হয়েছে ৯৬ দশমিক ১৫ কোটি ডলার। চামড়ার জুতা থেকে রপ্তানি আয় ২৫ দশমিক ৯২ শতাংশ কমে ৪৭ দশমিক ৭২ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রক্রিয়াজাত চামড়া থেকে আয় ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়ে ১২ দশমিক ৫৭ কোটি ডলার হয়েছে। একই সময়ে আগের বছরে ছিল ১১ দশমিক ৪৫ কোটি ডলার। চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে অতি সামান্য।

গত বছর একই সময়ের তুলনায় ০ দশমিক ৮১ শতাংশ কমে আয় দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৮৫ কোটি ডলার। চামড়ার জুতা থেকে রপ্তানি আয় কমলেও কৃত্রিম চামড়ার জুতা থেকে আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ খাতটি গত ১১ মাসে আয় করেছে ৪৬ দশমিক ৩৩ কোটি ডলার। একই সময়ে গত বছরের আয় ছিল ৪৩ কোটি ডলার। বৈশ্বিক বাজারে পণ্যের চাহিদার ভাঁটা ও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্সের অভাবকে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা। তারা মনে করেন, কমপ্লায়েন্সের অভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় চামড়াজাত পণ্যের ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারছেন না।

অন্যদিকে, পরিবেশের রক্ষায় যে সব নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয় তা প্রতিপালনে ব্যর্থতার কারণে বৈশ্বিক ক্রেতারা পণ্য নিতে আগ্রহী নন। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা কমেছে। কারণ মানুষের ব্যয়যোগ্য আয় কমেছে। অন্যদিকে আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ঋতু অনুযায়ী চামড়াজাত পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। এ কারণে রপ্তানি বাজারে চাহিদা কম। ফলে সামগ্রিকভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মোমেন ভূঁইয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বাজার। কিন্তু বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা সেখানে আশানুরূপ ভালো করতে পারছেন না। ক্রেতা ধরতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ফলে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমেরিকান বাজারের সুযোগটা কাজে লাগাতে পারছি না।

তবে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্ল্যাহ বলেন, রাজধানী ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হলেও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্সের অভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় চামড়াজাত পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে, পরিবেশ রক্ষায় যে সব নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয় তা প্রতিপালনে ব্যর্থতার কারণে বৈশ্বিক ক্রেতারা পণ্য নিতে আগ্রহী নন। যে কারণে শতভাগ দেশীয় কাঁচামাল থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর কাছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করার জন্য চামড়া প্রক্রিয়াজাত এবং চামড়া পণ্য প্রস্তুতকারীদের আন্তর্জাতিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ থাকতে হয়। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ কারখানার এ সনদ নেই।

ফলে বৈশ্বিক বাজারে আমাদের অবস্থান শক্ত করতে পারছি না। প্রতিযোগী দেশগুলোয় যেমন: ভারতে ৩৫০টির বেশি সনদধারী ট্যানারি আছে। অথচ আমাদের এ সংখ্যা ১০টিরও কম। নদী ও পরিবেশ দূষণ কমাতে হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু কয়েক বছরে এর তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। সাভারে বর্তমান কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) অসম্পূর্ণ থাকায় দূষণ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি বলে মন্তব্য করেন ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সাভারে চামড়া শিল্প নগরে এখনও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হচ্ছে না। উন্মুক্ত জায়গায় কঠিন বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। অন্যদিকে সাভারে বর্তমান কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) অসম্পূর্ণ থাকায় দূষণ সমস্যার কোনো সমাধান মিলেনি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বেসরকারি ইটিপি স্থাপন দরকার। সিপিডির গবেষণা পরিচালক আরও বলেন, বাংলাদেশের চামড়া শিল্প দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ।

তবে পরিবেশগত কারণে রপ্তানি সেক্টরের ক্ষতি হচ্ছে বলে যে দাবি সেটা পুরোপুরি মানতে রাজি নন আবদুল মোমেন ভূঁইয়া। তার যুক্তি, ছোট কোম্পানিগুলো কমপ্লায়েন্স রক্ষা করতে পারছে না। যারা বড় কোম্পানি এবং রপ্তানি করে, তারা অনেকেই এখন সম্পূর্ণরূপে কমপ্লায়েন্ট এবং যাবতীয় মান রক্ষা করে রপ্তানি করছে।

এবি/এইচএন

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সভাপতি রাজন, সম্পাদক রাব্বানী

ক্রীড়া প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের মির্...

মানিকগঞ্জে ডিএনসির অভিযানে গ্রেফতার ১

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের...

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশ্বিক মহামারি...

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছরের এইচএ...

বাজেটে বিদেশ নির্ভরতা কমানো হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পররাষ্ট্রমন্ত্র...

বাজেটে বিদেশ নির্ভরতা কমানো হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পররাষ্ট্রমন্ত্র...

বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ঢাবি চিরস্মরণীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শ...

নবাব মুর্শিদ কুলি খান’র প্রয়াণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজকের ঘটনা কাল...

৪ খাবার কমাতে পারে মানসিক উদ্বেগ

লাইফস্টাইল ডেস্ক: বিশ্বের অধিকাংশ...

কলড্রপের জন্য গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : কলড্রপের জন্য...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা