বাণিজ্য ডেস্ক: বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কয়েকটি ব্যাংকে কৃষি ঋণ বিতরণে অনীহা দেখছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও ৮ ব্যাংক ২০ শতাংশও ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। একই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ঋণ বিতরণ করেছে এমন ব্যাংকের সংখ্যা ৫টি। এসব ব্যাংকের মধ্যে কোনো কোনো ব্যাংক ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন মতে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ব্যাংকগুলো ২১ হাজার ১৫৪ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে। এটি মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে (প্রথম ৭ মাস) এ ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা বা লক্ষ্যমাত্রার ৬০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সে হিসাবে গত বারের তুলনায় ২ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ বাড়লেও শতাংশের হারে কিছুটা কমেছে।
অর্থবছরের প্রথম ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও দুই ব্যাংক কোনো ঋণই বিতরণ করতে পারেনি। এ দুটি ব্যাংকের মধ্যে একটি হলো বেসরকারি খাতের সিটিজেন ব্যাংক অন্যটি বিদেশি খাতের উরি ব্যাংক।
বেসরকারি খাতের ব্যাংকের মধ্যে পদ্মা ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে লক্ষ্যমাত্রা মাত্র শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ, মধুমতি ব্যাংক ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, সীমান্ত ব্যাংক ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ ও সাউথ ইস্ট ব্যাংক ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ।
একই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ঋণ বিতরণ করেছে ৫ ব্যাংক। সবচেয়ে বেশি কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করেছে বিদেশি হাবিব ব্যাংক। ব্যাংকটি চলতি অর্থবছরের আলোচিত সময়ে বিতরণ করেছে ২২২ দশমিক ৮ শতাংশ। একই সময়ে এবি ব্যাংক বিতরণ করেছে ১৭৩ দশমিক ৩ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংক ১৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ১২১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ব্যাংক আল ফালাহ বিতরণ করেছে ১০৫ দশমিক ৩ শতাংশ ঋণ।
তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে রাষ্ট্র মালিকানাধীন আট ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ৭ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক একই সময়ে ১৩ হাজার ৬০৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫৯ দশমিক ২২ শতাংশ।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে বেশি ঋণ বিতরণ করলেও বর্তমানে বেসরকারিখাতের ব্যাংকগুলো বেশি বেশি ঋণ বিতরণ করছে। আবার বিদেশি ব্যাংকগুলোও এনজিও লিংকেজের মাধ্যমে ঋণ বিতরণে জোর দিয়েছে।
তবে অর্থবছরের ৭ মাসে কৃষি খাতে খেলাপি ঋণ কিছুটা বেড়েছে। আলোচিত সময়ে কৃষিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা, যেটি গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩১ কোটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে এই সাত মাসে ২০ হাজার ৩১০ কোটি টাকা আদায় করেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আদায়ের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। তথ্য বলছে গতবারের তুলনায় এ সাত মাসে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ১ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।
কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা হয়েছে। ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতদিন যেটা ছিল ৩০ শতাংশ। তাছাড়া কোন খাতে কী পরিমাণ ঋণ দিতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
এবি/এইচএন
