কক্সবাজার প্রতিনিধি: প্রতি বছর ৩ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী উদযাপন করা হয় বিশ্ব জেলিফিশ দিবস। মূলত মানুষের চেয়ে আদিম, প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বছর পূর্বের পৃথিবীতে আগত এ প্রাণীটির গুরুত্ব অনুধাবনে এ দিবসটি পালন করা হয়।
যদিও কবে থেকে এ দিবসটির উৎপত্তি, তা স্পষ্ট নয়। তবে বিভিন্ন সূত্রমতে ২০১৪ সাল থেকে এ দিবসটি নিয়মিত পালিত হয়ে আসছে। দক্ষিণ গোলার্ধে যখন বসন্ত কাল, তখন বিশ্ব জেলিফিশ দিবসটি পালন করার কারণ এ মৌসুম থেকেই তারা উত্তর গোলার্ধের দিকে অভিবাসন শুরু করে।
নাম জেলিফিশ হলেও এরা আসলে মাছ নয়। বাহ্যিক গঠনে এর সাথে মাছের কোনো মিল পাওয়া যায় না। এরা মূলত নিডারিয়া পর্বের অমেরুদন্ডী প্রাণী। এরা এতোটাই বৈচিত্রময় যে অনেক বিজ্ঞানী তাদের কেবল "জেলাটিনাস জুপ্ল্যাঙ্কটন" হিসাবে উল্লেখ করেন।
জেলিফিশের মাছের মতো আঁশ, ফুলকা বা পাখনা থাকে না। এর পরিবর্তে এরা গোলাকৃতি "বেল" খোলা এবং বন্ধ করার মাধ্যমে সাঁতার কাটে। এদের শরীর ৯৮ ভাগ পানি দ্বারা গঠিত।
যখন তারা উপকূলে ভেসে চলে আসে, তার মাত্র কয়েক ঘন্টা পরে এরা অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। তাদের দেহ অবিলম্বে বাতাসে বাষ্প হয়ে যায়। তাদের কোনো মস্তিষ্ক নেই, শুধুমাত্র একটি প্রাথমিক স্নায়ুতন্ত্র রয়েছে।
এদের যথেষ্ট অভিযোজন ক্ষমতা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে এদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রায় ২০০০-এরও বেশি জেলিফিশের প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে।
জেলিফিশের কিছু প্রজাতি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলে মানুষের খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চায়না, জাপান ও কোরিয়ার মতো বেশ কিছু জায়গায় এটি খুব মজার খাবার হিসেবে বিবেচিত।
প্রকৃতপক্ষে, জাপানিরা জেলিফিশকে ক্যান্ডিতে রূপান্তরিত করেছে। এটি এক ধরনের মিষ্টি ও নোনতা ক্যারামেল, চিনি, স্টার্চ সিরাপ ও জেলিফিশ পাউডার দিয়ে তৈরী করা হয়, যা ব্যয়বহুল ও সুস্বাদুও বটে।
এছাড়া সালাদে ও নুডলসে সয়া সস দিয়ে প্রায়শই এদের খাওয়া হয়। থাইল্যান্ড প্রতি বছর জেলিফিশ রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। জেলিফিশ কোলাজেন, সেলেনিয়াম ও কোলিনের উৎস হিসেবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রসাধনী ও ঔষধ শিল্পে ব্যবহার করা হয়।
সেই সাথে সারা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পাবলিক একুরিয়ামেও এটি প্রদর্শিত হয়।
বিশ্ব জেলিফিশ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট (বিওআরআই)-এ একটি সেমিনার আয়োজিত হয়েছে। সেমিনারটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “সুনীল অর্থনীতিতে জেলিফিশের অবদান: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট”।
উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অত্র প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডঃ তৌহিদা রশীদ মহোদয়। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেছেন বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি বিভাগের সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন সিদ্দিকী।
সেমিনারটিতে মোট ৩ টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। মূল প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন আবু সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ, সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার, বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি বিভাগ এবং ২ টি বিশেষ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উক্ত বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিমুল ভূঁইয়া ও সৌমিত্র চৌধুরী।
প্রবন্ধসমূহে সুনীল অর্থনীতিতে জেলিফিশের গুরুত্ব এবং সম্যক অবদান, গতবছরে ঘটে যাওয়া ৩ ও ৪ আগস্ট জেলিফিশ ব্লুম নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম ও তার ফলাফল, চলমান অর্থ বছরে জেলিফিশ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম ও ভবিষ্যতে এটি গবেষণা নিয়ে বিওআরআই-এর পরিকল্পনা এবং অর্থনীতিতে এ প্রাণীটির বিশেষ অবদান নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়।
সেমিনার থেকে আরও জানা যায়, এ বছর বিওআরআই-এর ৬ জন গবেষক বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে জেলিফিশের বৈচিত্রতা, কোন কোন স্থানে এবং কোন কোন সময়ে বিচরণ, জেলিফিশ ব্লুমে প্রাইমারি প্রোডাকটিভিটির প্রভাব, জেলিফিশে মাইক্রোপ্লাষ্টিক দূষণের মাত্রা নিরুপণ এবং প্রাপ্ত জেলিফিশ সমূহের ফুড ইন্ডাস্ট্রি, ফার্মাসিটিক্যাল এবং বায়োমেডিক্যাল শিল্পে যে অবদান, তা নিয়ে নিবিড়ভাবে গবেষণা করা হচ্ছে।
সেমিনারে সমাপনী বক্তব্যে প্রধান অতিথি বিওআরআই-এর মহাপরিচালক মহোদয় আগামীতে সুনীল অর্থনীতিকে গতিশীল করার নিমিত্তে আরও গভীরভাবে এবং বড় পরিসরে জেলিফিশ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে পরিকল্পনা ব্যক্ত করেন।
এবি/এইচএন