নিজস্ব প্রতিবেদক: মালিকদের একাংশের ধর্মঘটের কারণে ঢাকায় দুপুরের পর থেকে তেল সংকটে অধিকাংশ পেট্রোল পাম্প বন্ধ হয়ে গেছে। এ ধর্মঘট চলতে থাকলে যে কটি খোলা আছে, সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বলছে, তেলের মজুত আছে, কিন্তু মানুষ তরিঘড়ি করে তেল কিনছে বিধায় সংকট তৈরি হয়েছে।
এদিকে, রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, সব পেট্রোল পাম্প খোলা আছে; কিন্তু তেলের ডিপো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ মুহূর্তে ধর্মঘট প্রত্যাহার না করলে দেশে তেলের সংকট দেখা দেবে।
তিনি আরও বলেন, পেট্রোল পাম্পের গাড়ি ডিপোতে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। ‘তেল নিতে না পারলে, পাম্প বন্ধ করে দিতে হবে। যারা ধর্মঘট ডেকেছে, তাদের দাবি যৌক্তিক। তবে সরকারকে সময় না দিয়ে ধর্মঘট ডেকে মানুষকে বিপদে ফেলা অযৌক্তিক।’
তিনি বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিশনের দাবি ও লাইসেন্সের ঝামেলা মেটানো হবে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী। তাই মন্ত্রণালয়কে সময় দেয়া উচিত।
নাজমুল হক আরও বলেন, ‘যারা ধর্মঘট ডেকেছেন তারা আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের কেউ না। তারা আগে ছিলেন। এখন কেউ নেই। যারা আগে ছিলেন তাদের একজন তেল পাচারের অভিযোগে সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। বর্তমান পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মিজানুর রহমানকে ২০১৬ সালে অর্থ কেলেঙ্কারির জন্য বহিষ্কার করা হয়।’
যারা বর্তমানে ধর্মঘট ডেকেছে তারা জনগণকে জিম্মি করতে চায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এ নিয়ে তারা ২৩ বার ধর্মঘট ডেকেছে। মূলত জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং বিপিসিকে চাপে ফেলে সুবিধা আদায় করতে চায় তারা। এদের পেট্রোল পাম্প ছাড়া আরও অনেক ব্যবসা আছে। এসব ব্যবসায় সুবিধা আদায়ের জন্য তারা ধর্মঘট ডেকেছে।’
তবে বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ধর্মঘট নেই জানিয়ে নাজমুল হক বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে সরকার দলের কিছু লোকের প্রশ্রয়ে ডিপো আটকিয়ে তেল সরবরাহে বাধা দেয়া হচ্ছে।’
এছাড়া কোথাও যাতে ধর্মঘট না হয়, তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান নাজমুল হক। তিনি বলেন, ‘যারা সংগঠনের কেউ না, বিপিসি তাদের নিয়ে বসে এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা করে।’
এ বিষয়ে বিপিসির জয়েন্ট সেক্রেটারি অনুপম বড়ুয়া বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে যেসব গাড়ি ডিপোতে আটকে আছে সেখানে তেল সরবরাহ ঠিক রাখতে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। এছাড়া আমরা জেলা প্রশাসককে চিঠি দেবো ডিপোর নিরাপত্তা রক্ষার জন্য।’
তিনি আরও উল্লেখ করে বলেন, যারা ধর্মঘট ডেকেছেন তাদের তিনটি দাবির দুটি এরই মধ্যে মেনে নেয়া হয়েছে। আরেকটি দাবি এক মাসের মধ্যে মেনে নেয়া হবে। এ অবস্থায় ধর্মঘট ডাকতে পারে এটা বিপিসির ধারণার বাইরে ছিল।
আজকের (রোববার) মধ্যে ধর্মঘট প্রত্যাহার না করলে আগামীকাল (সোমবার) বিপিসি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে বলেও জানান অনুপম বড়ুয়া।
এদিকে, নাজমুল হক বলেন, তেলের ডিপো থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দেন, সরকার তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পারলে সব কয়টি পাম্পে তেল পাওয়া যাবে।
তিনি সময় সংবাদকে বলেন, ‘তেলের সরবরাহ সংকটের কারণে আমার নিজের পেট্রোল পাম্প দুপুর ১২টার পর বন্ধ হয়ে গেছে। রাজশাহী ও খুলনা বাদে কোনো জেলাতেই ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে না। কেবল ডিপো থেকে তেল সরবরাহ করতে বাধা দেয়ার কারণে পাম্পে তেলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’
এর আগে, শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হকের নেতৃত্বে থাকা একাংশ ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। আর পেট্রোল পাম্প মালিকদের অন্য একটি অংশ ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ রাখতে এ হরতাল ডাকে তারা।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান রতন সময় সংবাদকে জানান, ‘আমাদের দাবি তিনটি। এগুলো হলো: জ্বালানি তেল বিক্রির ওপর প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে ৭.৫ শতাংশ করা, জ্বালানি তেল পরিবহনকারী ট্যাংকলরির অর্থনৈতিক জীবনকাল ৫০ বছর করা এবং জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের কমিশন এজেন্ট হিসেবে গেজেট প্রকাশ করা।’
এবি/ওশিন