ঈদের দিন শহর থেকে গ্রাম– সর্বত্রই অতিথি আপ্যায়নের প্রধান অনুষঙ্গ সেমাই। প্রতিবছর ঈদ সামনে রেখে বাজারে এই পণ্যের সরবরাহ বাড়ে, সেই সঙ্গে বেড়ে যায় দাম। তবে এবার সেমাইয়ের দাম তেমন বাড়েনি। চিনি এবং সুগন্ধি চালের দামেও আছে স্বস্তি। তবে অন্য কয়েকটি পণ্যের দর কিছুটা বেড়েছে।
শনিবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর রামপুরা, মহাখালী, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুদি দোকানগুলোতে ক্রেতারা কেনাকাটায় ব্যস্ত। বিশেষ করে সেমাই, চিনি, নুডলসজাতীয় পণ্য বেশি কিনছেন। খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি খোলা লাচ্ছা সেমাই ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, প্যাকেটজাত ২০০ গ্রাম লাচ্ছা সেমাই ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সাধারণ মানের ২০০ গ্রাম লম্বা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। এ ধরনের সেমাই কেজি হিসেবে কিনলে দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। বাজারে সেমাইয়ের দাম স্বস্তিদায়ক থাকলেও সুপারশপগুলোতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সেমাই অনেক বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১০ থেকে ১১৫ এবং প্যাকেট চিনি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এমন সময় খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৪০-১৪৫ এবং প্যাকেট চিনি ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কমেছে সুগন্ধি চালের দামও। ভালো মানের সুগন্ধি চাল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, যা গত বছরের ঈদের আগের তুলনায় অন্তত ১০ টাকা কম।
সেমাই-চিনিতে স্বস্তি থাকলেও অনেক আগে থেকে কিছুটা খরচ বেড়েছে দুধে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতি লিটার তরল দুধের প্যাকেট ১০০ টাকা এবং ৫০০ মিলিগ্রামের প্যাকেট ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় তা ১০ টাকা বেশি। গুঁড়া দুধের দরে তেমন হেরফের দেখা যায়নি।
কারওয়ান বাজারের তুহিন জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. রায়হান বলেন, এবার রমজানেও পণ্যের দাম কম ছিল। এখন চিনিসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কম। তিনি বলেন, চাঁদরাত পর্যন্ত সেমাই-চিনি বেচাকেনা বেশি হবে।
রামপুরা ভাই ভাই স্টোরের বিক্রয়কর্মী জামাল হোসেন বলেন, সাধারণ চালের দর বেশি হলেও পোলাওয়ের চালের দর কমছে। গত বছরের এ সময়ের তুলনায় অন্তত ১০ টাকা কমেছে পোলাওয়ের চাল প্রতি কেজিতে।
ব্রয়লার মুরগির দাম আরো চড়া
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দাম। শনিবার আরেক দফা বেড়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। সোনালি জাতের মুরগির দাম ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা। আট-দশ দিন আগে ব্রয়লারের কেজি ১৯০ ও সোনালি মুরগির কেজি ২৮০ টাকার কাছাকাছি ছিল। গরুর মাংসের দরও বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়।
চাহিদা বাড়ছে ফলের, দরও বেশি
ঈদ সামনে রেখে শসা ও ফলের চাহিদা বেড়েছে। এসব পণ্যের দোকানেও ভিড় দেখা গেছে। দরও বেড়েছে কিছুটা। সপ্তাহখানেক আগে দেশি শসার কেজি ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। তবে নতুন করে আমদানি করা ফলের দর বেড়েছে। শহর থেকে গ্রামে ফেরার সময় অনেকেই ফল কিনে নেন। এতে চাহিদা বেড়েছে। এর সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। শনিবার প্রতি কেজি আপেল বিক্রি হয়েছে ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা। চার-পাঁচ দিন আগে দর ছিল ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা।
মাল্টার কেজি ২৮৫ থেকে ২৯০ টাকা। গত সপ্তাহে দর ছিল ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা। তরমুজেরও দাম বেড়েছে। দু-তিন দিন আগেও তরমুজের কেজি ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। গতকাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কারওয়ান বাজারের ফল বিক্রেতা মো. মামুন বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সময় অনেকেই ঢাকা থেকে ফল কেনেন। এ কারণে চাহিদা বেড়ে যায়। প্রতিবছর এ সময় পাইকারি বাজারে আমদানিকারকরা ফলের দাম বাড়িয়ে দেন। এ জন্য খুচরা বাজারে কিছুটা বেশি দরে বিক্রি করতে হয়।
আমারবাঙলা/জিজি