যাক, অবশেষে গোলের দেখা পেলেন নেইমার! বাক্যের শেষে বিস্ময়সূচক দেওয়ার কারণ, এ খবরটাও অনেকটা বিস্ময়ের মতোই। কিন্তু কেন?
ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার শেষ কবে জাল খুঁজে পেয়েছিলেন, সেটা হয়তো তিনি নিজেও ভুলে গেছেন। সে তারিখটা বের করতে শুধু ক্যালেন্ডারের পাতা বদলিয়ে পেছনে যেতে হবে, এমন নয়। বরং বদলাতে হবে ক্যালেন্ডারই!
নির্দিষ্ট করে বললে, ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে আল হিলালের জার্সিতে শেষবার গোল করেছিলেন নেইমার।
সেই গোলের ঠিক ৫০২ দিন পর, আজ শৈশবের ক্লাব সান্তোসের জার্সিতে গোলের দেখা পেয়েছেন ৩৩ বছর বয়সি এ ফরোয়ার্ড। নেইমারের পেনাল্টি গোল আর থাসিয়ানো ও গিয়ের্মের গোলে সাও পাওলোর পেশাদার লিগ ক্যাম্পেনাতো পাওলিস্তাতে আগুয়া সান্তার বিপক্ষে ৩-১ ব্যবধানের জয় পেয়েছে সান্তোস। একটি গোল করার পাশাপাশি গিয়ের্মের গোলে অ্যাসিস্টও করেছেন নেইমার।
নেইমারের এ গোলখরার পেছনে সবচেয়ে বড় দায়টা অবশ্য চোটের। ২০২৩ এর অক্টোবরের শুরুতে সৌদি ক্লাবটির হয়ে ওই গোলের পর একই মাসের ১৮ তারিখ জাতীয় দলের জার্সিতে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলতে গিয়ে চোটে পড়েন নেইমার। সে চোটের পর দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় তাকে মাঠের বাইরে থাকতে হয়।
৩৬৯ দিন মাঠের বাইরে থাকার পর গত অক্টোবরে প্রত্যাবর্তন হয় নেইমারের। কিন্তু ব্রাজিলিয়ান তারকার প্রত্যাবর্তনটা সুখকর ছিল না। দুই ম্যাচে মোটে ৪২ মিনিট খেলে আবারো চোটে পড়েন তিনি। চোটজর্জর নেইমারের এ হাল দেখে মৌসুমের বাকি অর্ধেকের জন্য আর নিবন্ধনই করায়নি সৌদি ক্লাবটি। পাশাপাশি নেইমারকে ছেড়ে দেওয়ার পথও খুঁজতে থাকে।
ক্লাবের হাব-ভাব বুঝে পুরোনো ক্লাব সান্তোসে নাম লেখান নেইমার। কিন্তু, সেখানে গিয়ে প্রথম তিন ম্যাচ থাকেন নিজের ছায়া হয়ে। অবশেষে রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) চতুর্থ ম্যাচে এসে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পান তিনি।
ম্যাচের ১২তম মিনিটে বল নিয়ে প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারকে ড্রিবল করে সতীর্থের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান করে বক্সে ঢোকেন নেইমার। সেখানে আবার ড্রিবল করে এগোতে গেলে ফাউলের শিকার হন তিনি। পেনাল্টি পায় হিলাল। নিজের আদায় করা পেনাল্টি থেকে স্বভাবসুলভ মাথা ঠান্ডা রেখে গোলকিপারকে বিপরীত দিকে পাঠিয়ে বল জালে জড়ান তিনি। তাতে ৫০২ দিনের দীর্ঘ অপেক্ষারও অবসান হয়ে যায়।
নেইমারের গোলের পর সান্তোসের হয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ (২-০) করেন থাসিয়ানো। আর প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের শেষ দিকে সান্তার হয়ে একটি গোল শোধ করেন নেতিনিও। দ্বিতীয়ার্ধেও সান্তোস বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু, আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের ব্যর্থতায় সেগুলো গোল পর্যন্ত যাচ্ছিলো না। ম্যাচের ৭০ মিনিটে ধারা ভাঙে সান্তোস। দলটির তৃতীয় গোলেও অবদান আছে নেইমারের।
সতীর্থের ক্রসে বক্সের ভেতর বল পেয়েছিলেন নেইমার। অনেকটা গায়ের সঙ্গে প্রতিপক্ষের একজন লেগে থাকায় শট নিতে পারেননি তিনি। ততক্ষণে নেইমারের পায়ে বলে লেগে কিছুটা দূরেও চলে গেছে। এমন সময় বুদ্ধি খাটিয়ে নিজের শরীরটাকে ঘুরিয়ে অনেকটা বসে পড়ার ভঙ্গিতে ফাঁকায় দাঁড়ানো গিয়ের্মেকে পাস দেন নেইমার। সেখান থেকে ফিনিশিং দিতে তেমন বেগ পেতে হয়নি ২৯ বছর বয়সি এ লেফট উইঙ্গারের।
জয় নিশ্চিত জেনে ম্যাচের ৮৫ মিনিটে নেইমারকে তুলে নেন কোচ। মাঠে যতোক্ষণ ছিলেন, ৭ বার ড্রিবলের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। এর মধ্যে সফল হয়েছেন ৩ বার। আর সফল পাস দিয়েছেন ৮৭ শতাংশ।
আমারবাঙলা/জিজি