দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে লড়াই করা ছাড়া যে আর উপায় থাকে না, বাংলাদেশের মেয়েদের জাতীয় ক্রিকেটাররা বোধহয় এই মন্ত্র জপ করেই মাঠে নেমেছিল। তা দেয়ালে পিঠ ঠেকার কথা আসছে কেন?
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের আগে সমীকরণ ছিল, আসন্ন ২০২৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা পেতে এ সিরিজ থেকে ৩ পয়েন্ট দরকার বাংলাদেশের। সহজ করে বললে, তিন ম্যাচের সিরিজে অন্তত দুটি ম্যাচ জিততে হবে নিগার সুলতানা জ্যোতিদের। কিন্তু, তিন দিন আগে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৯ উইকেটে হেরে নিজেদের পথটা কঠিন করে ফেলে বাংলাদেশ।
অর্থাৎ বাছাইপর্বের ঝক্কি এড়াতে শেষ দুই ওয়ানডেতে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না জ্যোতি-মুরশিদা-শারমিনদের। কিন্তু সে পথটা যে সহজ হবে না, সেটা তো প্রথম ওয়ানডের ফলই বুঝিয়ে দিয়েছে। তারওপর ম্যাচটা হচ্ছে উইন্ডিজের ঘরের মাঠে। বাংলাদেশের জন্য এটাকে দেয়ালে পিঠ ঠেকা বলবে না তো কী?
এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নেমে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ৬০ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। গত সোমবার মধ্যরাতে শুরু হওয়া ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নিগার সুলতানা জ্যোতির ৬৮ রানে ভর করে সব উইকেট হারিয়ে ১৮৪ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। পরে রান তাড়ায় নামা উইন্ডিজকে ১২৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে বিশ্বকাপের সরাসরি টিকিটের আশা ভালো ভাবেই বাঁচিয়ে রাখে জ্যোতির দল।
আসন্ন বিশ্বকাপে স্বাগতিক ভারতের বাইরে নারী চলমান চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ ৫ দল সরাসরি জায়গা পাবে। ভারত পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকায় পয়েন্ট টেবিলের ৬ষ্ঠ দল পর্যন্ত সরাসরি খেলবে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে।
বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার ভোরে শেষ হওয়া এ ম্যাচ জিতে বর্তমানে ২১ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের সপ্তম স্থানে আছে বাংলাদেশ। ৬ষ্ঠ স্থানে থাকা নিউজিল্যান্ডের পয়েন্টও সমান ২১। কিন্তু রান রেটে জ্যোতিদের (-০.৬০৮) চেয়ে এগিয়ে আছে কিউইরা (+০.১২৯)। ফলে নিউজিল্যাল্ডকে টপকে যেতে হাতে থাকা এক ম্যাচে জিততেই হবে বাংলাদেশকে।
ওয়ার্নার পার্কে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিলেন বাংলাদেশি দুই ওপেনার ফারজানা হক পিংকি ও মুরশিদা খাতুন। উদ্বোধনী জুটিতে ৩৪ রান পায় সফরকারীরা। কিন্তু ইনিংসের ১০ ও ১১তম ওভারে দুই ওপেনারকে হারিয়ে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ।
মুরশিদাকে (১২) মানগ্রুর হাতে ক্যাচে পরিণত করেছেন অ্যালেনা। ১ রানের ব্যবধানে মানগ্রুর হাতেই ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিয়েছেন ফারজানাও (১৮)। সে ধাক্কা সামলে ওঠার আগে বিদায় নেন শারমিন আক্তারও (১১)। বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে তখন ৫৬ রানে ৩ উইকেট।
সেখান থেকে বাংলাদেশের হাল ধরার দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নেন নিগার সুলতানা জ্যোতি। সোবহানা মোস্তারিকে সঙ্গে নিয়ে স্কোরবোর্ডে ৫১ রান যোগ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তাতে দলের রানও তিন অঙ্ক পেরিয়ে যায়। মোস্তারি ২৩ রানে আউট হলেও জ্যোতি ফিফটি তুলে নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ১২০ বলে ৫ চারে ৬৮ রান করেন জ্যোতি। শেষ দিকে স্বর্ণা আক্তারের ২১ ও নাহিদা আক্তারের ৯ রানে ১৮০ পেরিয়ে যায় বাংলাদেশের সংগ্রহ।
রান তাড়ায় নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ওপেনার কিয়ানা জোসেফকে হারায় উইন্ডিজ। বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যানকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন পেসার মারুফা আক্তার। এরপর হিলি ম্যাথিউস ও শেমাইন ক্যাম্পবেল প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চালান।
তবে ইনিংসের ৯ম ওভারের প্রথম বলে ম্যাথিউসকে (১৬) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন নাহিদা। পরের ওভারে দেন্দ্রা দতিনের উইকেট শিকার করেন মারুফা। সেই যে শুরু, এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট উদযাপন করতে থাকেন বাংলাদেশি বোলাররা। একইসঙ্গে জয়ের ক্ষণও গুনছিল সফরকারীরা। কিন্তু সে অপেক্ষা দীর্ঘায়িত করে বৃষ্টি। উইন্ডিজের স্কোরবোর্ডে ৮ উইকেটে ৯৮ রান থাকতে বৃষ্টি নামে ওয়ার্নার পার্কে। বৃষ্টির পর স্কোরবোর্ডে আর মাত্র ২৬ রান করতেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকদের ইনিংস।
বাংলাদেশের হয়ে নাহিদা আক্তার ৩১ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া মারুফা আক্তার, ফাহিমা খাতুন ও রাবেয়া খান ২টি করে উইকেট নিয়েছেন।
আমারবাঙলা/জিজি