ক্রীড়া ডেস্ক: সেরা আটে খেলতে নেমে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমে অস্ট্রেলিয়া ও পরে ভারতের বিপক্ষে পরাজয় দেখেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ব্যাটিং ব্যর্থতার চূড়ান্ত সীমায় অবস্থান করে গত মঙ্গলবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে নেমেছিল বাংলাদেশ। এই ম্যাচেও প্রেক্ষাপট তেমন বদলায়নি। সহজ লক্ষ্যও পার করতে পারেনি শান্ত বাহিনী।
তবে এই ম্যাচে ব্যতিক্রম ছিলেন লিটন দাস। ৪৯ বলে ৫৪ রানের স্বস্তির এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ছিলেন অপরাজিত। দীর্ঘদিন পরে রানে ফিরতে পেরে বেজায় খুশি থাকতে দেখা গেছে লিটনকে। তবে দলের জন্য তার এই রান কতটা কাজে দিয়েছে? বাংলাদেশ হেরেছে ৮ রানে। সেমিফাইনালে যাওয়ার সমীকরণ ছিল ১২.১ ওভারে ১১৬ রান তোলা। পরে কমে সেটি ১১৪ তে দাঁড়ায়।
এই সমীকরণ তো মেলাতেই পারেননি লিটন, উলটো ৮ রানে হেরে বসেছেন। জয় তুলে নেওয়ার জন্য খেলেননি। যদি তিনি খেলতেন তাহলে ৪৯ বলে রান ৫৪ হওয়ার কথা ছিল না। আর ৮ রানে হারের বিষয়টিও আসত না। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থেকেছেন। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়েছেন।
তবে আফসোসে ভাসিয়েছেন পুরো দেশকে। চলতি বছরে এটিই লিটনের প্রথম ফিফটি। কিন্তু সেটিতে নিজে তৃপ্তির ঢেকুর তুললেও দলের জন্য সফলতা তুলে আনতে পারেননি। বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৬টায় খেলা শুরু হলে দেশের ক্রিকেট সমর্থকরা চোখ রেখেছিলেন টিভি কিংবা মোবাইলের পর্দায়।
আফগান বাহিনী নির্ধারিত ২০ ওভারে ১১৫ রান তুললে ভক্তরা আশায় বুক বাঁধেন। টি-টোয়েন্টি ১২.১ ওভারে এই লক্ষ্য ভেদ করা কঠিন কিছু না। বাংলাদেশের সামনে হারানোর কোনো ভয় ছিল না। তাতে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে এই লক্ষ্য তাড়াই ছিল একমাত্র উদ্দেশ্য।
কিন্তু লিটনদের দেখে অন্যরকম কিছু মনে হয়। তারা ১২.১ ওভারে নয়, ২০ ওভারে খেলা শেষ করার কিংবা জয় তুলে নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আগাতে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে ভক্তরা সামাজিকমাধ্যমে তোলপাড় অবস্থা করে তোলেন। ম্যাচের মাঝে বেশ কয়েক বার বৃষ্টি বাগড়া বাধিয়েছে।
এর মধ্যে ১১.৪ ওভারে বন্ধ হয় খেলা। সে সময়ে সেমি নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ৩ বলে ৩৩ রান। যা রীতিমতো অসম্ভব বিষয়। অর্থাৎ কোটি কোটি ভক্তের আশা ভেঙে চৌচির অবস্থা। ঠিক তখন লিটন হাসি ও মজায় ব্যস্ত হলেন আফগান ক্রিকেটারদের সঙ্গে। এই ম্যাচ ঘিরে আফগানিস্তানের কোচ জনাথন ট্রট, বোলিং কোচ ডোয়াইন ব্রাভো যেভাবে নিবেদন দেখিয়েছেন, সেটি ক্রিকেটে বিস্ময়কর।
ফুটবলে সাধারণত এমনটা দেখা গেলেও ক্রিকেটে সচরাচর কোচদের এমন নিবেদন দেখা যায় না। বাংলাদেশের কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে কেবল শান্ত হয়ে বসে থাকাকে গুরুত্ব দিয়েছেন সেখানে শিষ্যদের কিছু ভুল কিংবা ব্যর্থতায় মাথা চেরার মতো অবস্থা করেছেন প্রতিপক্ষের কোচরা।
শুধু কোচ নয়, আফগান ওপেনার ও উইকেটরক্ষক রহমানউল্লাহ গুরবাজ কংক্রিটে নিজের মাথা ঠুকেছেন। জয় তুলে নেওয়ার পরে তো কান্না ছাড়া সেই আনন্দ প্রকাশের ভাষা কেউ খুঁজে পাননি।
এমন আনন্দে অঝোরে কেঁদেছেন সকলে। সেই জায়গাতে লিটনের মুখের ঐ হাসি বড্ড বেমানান লেগেছে ভক্তদের কাছে। কেবল লিটন নয়, নাফিস ইকবালের পাশে বসে সাকিব আল হাসানের পা দোলানো আর মুচকি হাসিও পুড়িয়েছে ভক্তদের। সবমিলিয়ে ম্যাচ হারার পাশাপাশি আফগানদের নিবেদনের কাছেও হেরেছে বাংলাদেশ।
এবি/এইচএন