ক্রীড়া ডেস্ক: দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে দুই কঠিন সমীকরণ সহজ করে নিলো বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ও পাওয়া হলো, বড় জয়ে নেট রানরেটও বাড়িয়ে নিলো সাকিব আল হাসানের দল।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের লাহোরে এশিয়া কাপের 'বি' গ্রুপের ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৮৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে বাংলাদেশের নেট রানরেট দাঁড়িয়েছে (+০.৩৭৩)। ফলে টাইগারদের সুপার ফোর নিশ্চিত হয়ে গেছে।
আফগানিস্তানের লক্ষ্য ছিল ৩৩৫ রানের। তাসকিন-শরিফুলদের আগুনে বোলিংয়ে ৪৪.৩ ওভারে ২৪৫ রানেই অলআউট হয়েছে আফগান বাহিনী।
রান তাড়া করতে নেমে ১ রানেই প্রথম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। টাইগার পেসার শরিফুল ইসলাম ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে রহমানুল্লাহ গুরবাজকে (১) এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন।
শুরুর ধাক্কা সামলে উঠতে জুটি গড়েন রহমত শাহ আর ইব্রাহিম জাদরান। ইব্রাহিম ওয়ানডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়েছেন। তবে অনেকটাই ধীরগতির ছিলেন রহমত।
অবশেষে তাসকিন আহমেদ ৯৭ বলে গড়া ইব্রাহিম-রহমতের ৭৮ রানের জুটি ভাঙেন। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে রহমতকে বোল্ড করেন টাইগার পেসার। রহমত ৫৭ বল খেলে ৩৩ রান করেন।
ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছিলেন ইব্রাহিম জাদরান। আফগান ব্যাটারদের বাকিরা দীর গতিতে খেললেও ইব্রাহিম মারমুখী ছিলেন। অবশেষে তাকে সাজঘরে ফেরান হাসান মাহমুদ। এই উইকেটে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমেরও বড় অবদান রয়েছে।
হাসান মাহমুদের বলে ইব্রাহিম ব্যাট ছোঁয়ালে মুশফিক বাজপাখির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে লুফে নেন দুর্দান্ত এক ক্যাচ। মুশফিকের এই ক্যাচের কারণে ইব্রাহিমকে সাজঘরে ফিরতে হয়। আফগান ওপেনার ৭৪ বলে ৭৫ রানের ইনিংসে ১০টি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা হাঁকান।
এরপর শহিদি আর নাজিবুল্লাহর ব্যাটিংয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছিলো। টানা দুই ওভারে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। ৩৭তম ওভারে এসে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে বোল্ড করেন মেহেদি হাসান মিরাজ (১৭)। পরের ওভারে শরিফুল ফেরান আফগান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদিকে (৫১)।
এই দুই উইকেট পড়ার পরই ম্যাচ থেকে আফগানিস্তান ছিটকে পড়ে। তাসকিন-শরিফুলরা ৫২ রানে আফগানদের শেষ ৭ উইকেট তুলে নেন।
তাসকিন আহমেদ ৪৪ রানে নেন ৪টি উইকেট। শরিফুল ৩৬ রানে শিকার করেন তিনটি। একটি করে উইকেট হাসান মাহমুদ আর মেহেদি হাসান মিরাজের।
এর আগে মেহেদি হাসান মিরাজ আর নাজমুল হোসেন শান্তর জোড়া সেঞ্চুরিতে ভর করে ৫ উইকেটে ৩৩৪ রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের।
ওপেনিংয়ে চমক লাগিয়ে নাইম শেখের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ৪৭ বলের জুটিতে অর্ধশত পূর্ণ করেন এই দুজন। ১০ ওভারে হয় ৬০ রানের জুটি। নাইম শেখকে বোল্ড করে ওপেনিং জুটি ভাঙেন মুজিব উর রহমান। নাইম ৩২ বলে ৫ বাউন্ডারিতে করেন ২৮ রান।
পরের ওভারে বাংলাদেশ আরও একটি উইকেট হারিয়ে বসে। নাজমুল হোসেন শান্তর বদলে তিন নম্বরে নামেন তাওহিদ হৃদয়। সুবিধা করতে পারেননি। নিজের মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হৃদয় (০)। তার উইকেটটি নেন গুলবাদিন নাইব।
এরপর শুরু হয় মিরাজ-শান্তর দুর্দান্ত ব্যাটিং। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তারা যোগ করেন ১৯৪ রান। ৬৫ বলে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন মিরাজ। আফগান পেসার ফজল হক ফারুকিকে ছক্কা হাঁকিয়ে ফিফটি পূরণ করেন শান্ত।
মিরাজ আর নাজমুল হোসেন শান্ত আফগান বোলারদের নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করেছেন। ওপেনিংয়ে নেমে মিরাজ করেছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, ১১৫ বলে। এরপর শান্তও ছুঁয়েছেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার।
তার আগেই অবশ্য উঠে গেছেন মিরাজ। শান্তর সঙ্গে জুটিতে ১৯৪ যোগ করে রিটায়ার্ট হার্ট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। ১১৯ বলে ১১২ রানের ইনিংসে মিরাজ ৭টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৩টি ছক্কা হাঁকান।
মিরাজ উঠে যাওয়ার পরপরই শান্ত সেঞ্চুরি পূরণ করেন। এই বাঁহাতি ১০১ বলে শতরান ছুঁয়েছেন। শান্তর ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি এটি। তার দুর্দান্ত ইনিংসটি সমাপ্তি হয়েছে দুর্ভাগ্যজনক রানআউটে।
রান নিতে গিয়ে মাঝপথে চলে গিয়েছিলেন শান্ত। ফেরার সুযোগ পাননি। পা পিছলে পড়ে যান মাঝ পিচে। ১০৫ বলে শান্তর ১০৪ রানের ইনিংসটি ছিল ৯ চার আর ২ ছক্কায় সাজানো।
এছাড়া মুশফিক ১৫ বলে ২৫, সাকিব শেষদিকে নেমে ১৮ বলে অপরাজিত ৩২ আর শামীম পাটোয়ারী ৬ বলে করেন ১১ রান।
এবি/এইচএন