জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতরা ‘জুলাই শহীদ’ ও আহতরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে খ্যাত হবেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিনদিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত তৃতীয় কার্য-অধিবেশন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
ফারুক-ই-আজম বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তারা জুলাই শহীদ নামে খ্যাত হবেন। এই নিরিখে তাদের পরিবারগুলো সনদ ও পরিচয়পত্র পাবেন। জুলাই অভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন, তারা জুলাই যোদ্ধা নামে খ্যাত হবেন। তারা এই নিরিখে সনদ ও পরিচয়পত্র পাবেন এবং অন্যান্য যেসব সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও আজীবন চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি তারা ভাতাও পাবেন।
তিনি আরো বলেন, যারা জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবেন সঞ্চয়পত্রের নিরিখে। এর মধ্যে এই অর্থ বছরেই তাদের সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। আগামী অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে বাকি ২০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রের নিরিখে পাবেন।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতের তিনটি ক্যাটাগরি করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, যারা এ-ক্যাটাগরিতে (গুরুতর) আহত, তারা এককালীন ৫ লাখ টাকা পাবেন এবং ২০ হাজার টাকা প্রতি মাসে ভাতা পাবেন।
বি-ক্যাটাগরিতে যারা (এক অঙ্গহানি হয়েছে) তারা এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন, সঙ্গে ১৫ হাজার করে টাকা মাসিক ভাতা পাবেন। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন মাত্রায় তারা প্রশিক্ষণ পাবেন। তারা সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি পাবেন।
কোটার ভিত্তিতে নয়, অবশ্যই মেধার ভিত্তিতে। আর আহত হয়েছিলেন তারা চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে গেছেন তারা সি-ক্যাটাগরির আহত (কম গুরুতর)। তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি বা অন্য কিছুতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকার পাবেন। তবে তারা কোনো টাকা বা ভাতা পাবেন না।
জুলাই অধিদপ্তর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, জুলাই অধিদপ্তর করার কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে, এই সপ্তাহে অধিদপ্তর হয়ে যাবে। অধিদপ্তর হওয়ার নিরিখে একটি নীতিমালাও হয়েছে। এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে।
রাজনৈতিক সরকার যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে জুলাই অধিদপ্তরের অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে! এমন আশঙ্কা কি করেন? জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো সরকারিভাবে এই জুলাই অধিদপ্তর করেছি। পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার যারাই নির্বাচিত হয়ে আসবেন তারা তো জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা নিয়েই আসবেন। আমরা মনে করি তারাও রক্ষা করবেন। তারা দেশ-জাতিকে মুক্তির জন্য, বৈষম্যমুক্ত করতে জুলাই অভ্যুত্থানে ত্যাগ স্বীকার করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ তাদের তালিকা পেয়েছি জানুয়ারির ১৬ তারিখে। সেই রাতের ৩টায় আমরা গেজেট করে তা প্রকাশ করেছি। তালিকাটাও তৈরি হচ্ছে খুব দ্রুত। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আহতদের তালিকা ক্যাটাগরিজ করা হচ্ছে। তালিকাটা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে আসা মাত্র তাৎক্ষিনক সেটা আমরা গেজেট প্রকাশ করবো। সুতরাং এখানে নতুন করে ঢুকানো বা বাদ দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।’
আহতরা দাবি তুলেছেন যে, ক্যাটাগরি তুলে দেওয়ার জন্য। সেব্যাপারে কোনো উদ্যোগ বা চিন্তা মন্ত্রণালয় করছে কি-না? জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘না এরকম কোনো তথ্য নেই। সেরকম কোনো পরিকল্পনা আপাতত জানা নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করছে। তারা তাদের কাজ শেষ করে আমাদের জানালে আমরা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নিবো। শুরুর দিকে যারা আহত ছিলেন, আহত হয়ে, অসুস্থ হয়ে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের অনেকে ডকুমেন্টস রাখেননি বা সংগ্রহ করেননি। এমনদেরও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।’
আমারবাঙলা/জিজি