রাজধানীর বাংলাবাজার থেকে প্রায় ১০ হাজার সরকারি বইসহ দুইজনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত বুধবার বিকালে ইস্পাহানি গলির বিভিন্ন গুদামে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের এসব বইয়ের বাজারমূল্য প্রায় আট লাখ টাকা।
ডিবি জানিয়েছে, আটক সিরাজুল ইসলাম উজ্জ্বল (৫৫) ও দেলোয়ার হোসেনের (৫৬) বাইরেও এমন আরও বেশ কয়েকটি চক্রের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদেরকে গ্রেফতারের ডিবির তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বছরের প্রথম দিন স্কুলে স্কুলে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার রেওয়াজের শুরুটা হয়েছিল ২০১০ সালে। তবে ক্ষমতার পালাবদলে বিভিন্ন সংকটের কারণে সেটি এবার হয়নি।
নতুন বছরের প্রথম দুই দিনে ৪১ কোটি বইয়ের মধ্যে ১০ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি।
বাকি বই ৩০ জানুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার আশা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সব বই না পাওয়া পর্যন্ত এনসিটিবির ওয়েবসাইটে আপলোড করা বইয়ের পিডিএফ কপি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
‘বই সংকটের’ মধ্যেই জানুয়ারির শেষভাগে এসে খোলাবাজার থেকে এই বিপুল পরিমান বই জব্দের তথ্য দিল ডিবি।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘একটি চক্র বাংলাবাজারের ইস্পাহানি গলিতে বিভিন্ন গোডাউনে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির বিনামূল্যে বিতরণের সরকারি পাঠ্যবই বিক্রয়ের উদ্দেশে মজুদ করেছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দুই ট্রাক বই জব্দ করা হয়। যেখানে বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় ১০ হাজার বই রয়েছে।
জব্দ করা বইগুলোর বিষয়ে আদালতকে অবগত করা হবে, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এনসিটিবিকে হস্তান্তরের কথাও জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।
এক প্রশ্নের জবাবে নাসিরুল বলেন, বইগুলো পরিবহনের জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, একটা চক্র বইগুলো নিয়ে যায়। এরপর অতিরিক্ত বইগুলো এনে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয় বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি।
অতিরিক্ত বই ছাপানোর সুযোগ রয়েছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ১১৬ টি প্রেসে বই ছাপানো হয়। ঢাকার বাংলাবাজার এবং ঢাকার বাইরেও কয়েকটি প্রেসে ছাপানো হয়, যারা সরকারি কার্যাদেশ পেয়ে থাকে। অতিরিক্ত বই ছাপানোর সুযোগ আছে কি না, বিষয়টা তদন্তাধীন। যদি অনুসন্ধানে পাই- অতিরিক্ত বই ছাপানো হয়েছে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এনসিটিবি অথবা মাউশির কেউ জড়িত রয়েছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল বলেছেন, “এনসিটিবির দুইটা গোডাউন রয়েছে একটা তেজগাঁও ও আরেকটা টঙ্গীতে। সেখানেই বইগুলো সংরক্ষণ করা হয়, এর বাইরে কোথাও সংরক্ষণের সুযোগ নেই। ভেতরের কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আটক সিরাজুল ইসলাম উজ্জল ১০ বছর আগে একই অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন জানিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এবার তার গোডাউন থেকেই বইগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি ১০-১২ টাকা করে বইগুলো কিনে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি করে আসছিলেন। বিতরণ এবং পরিবহনের অনিয়মে কার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন আরও কিছু নাম আমরা পেয়েছি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আমারবাঙলা/জিজি