সংগৃহীত
জাতীয়

বিদ্যুতে ভর্তুকিতে বাংলাদেশ শীর্ষে, ব্যবহারে কমের দিক থেকে দ্বিতীয়

আমার বাঙলা ডেস্ক

বিদ্যুতে ভর্তুকিতে প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু ব্যয় করে। অথচ মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারের দিক থেকে আমাদের অবস্থান সবচেয়ে কমের দিক থেকে দ্বিতীয়।

বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) এক বিশ্লেষণে এই তথ্য উঠে এসেছে।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীর রেল ভবনে সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছে বিআইপিপিএ তাদের এই বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে।

বিআইপিপিএ জানায়, বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুতে মাথাপিছু ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ১৮ দশমিক ৫৩ ডলার। যেখানে ভারতের ১৪ দশমিক ২৯ ডলার, পাকিস্তানের আট দশমিক ৭৪ ডলার এবং ভিয়েতনামের মাত্র শূন্য দশমিক ০৪ ডলার। দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা ২০২৩ সালে বিদ্যুতে ভর্তুকি বন্ধ করে দিয়েছে।

বিআইপিপিএর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মাথাপিছু বার্ষিক বিদ্যুতের ব্যবহার ৫৫৩ ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা)। একমাত্র পাকিস্তান এদিক থেকে বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে।

তারা আরো জানায়, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই আবাসিক গ্রাহকরা অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে; যা মোট ব্যবহারের প্রায় ৫৬ শতাংশ। শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকরা প্রায় ৩৯ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যা পাকিস্তানের পর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।

অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ, দ্রুত বিদ্যুৎ অবকাঠামো সম্প্রসারণ এবং অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জের কারণে ভর্তুকির বোঝা বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারের মোট ভর্তুকি বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশের বেশি শুধু বিদ্যুৎ খাতের জন্য রাখা হয়েছে। সরকার চলতি বাজেটে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার।

ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ ক্যাম্পাসের উপ উপাচার্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, বিদ্যুতে ভর্তুকি বৃদ্ধির প্রধান কারণ দুর্নীতি।

তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সই হওয়া অনেক চুক্তির স্বচ্ছতা ছিল না। তা ছাড়া, বিদ্যুৎ খাতের ইনডেমনিটি আইন ব্যবহার করে অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জের কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে কাজ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়েছে।

দেশের অর্থনীতির অবস্থার শ্বেতপত্র কমিটির সদস্য এনামুল আরো বলেন, কালো টাকার বড় উৎস ছিল বিদ্যুৎ খাত। আগের সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করা যায়, সে বিষয়ে কৌশলগত পর্যালোচনা করা উচিত। আইনি কারণে হয়তো কিছু চুক্তি থেকে আমরা বের হতে পারব না, তবে অতিরিক্ত খরচ কমানোর জন্য আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে পারি।

এর আগে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ক্যাপাসিটি চার্জ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে ২০২৫ অর্থবছরে বিদ্যুতের ভর্তুকি বাবদ বেশি টাকা বরাদ্দ রাখতে হয়েছে।

বিদ্যুতের দাম কয়েক দফা বাড়ানোর পরেও, নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি পেমেন্টের জন্য সরকারকে এখনো এই খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের দাম আট দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে তিনবার পাঁচ শতাংশ করে বাড়ানো হয়েছিল।

বিআইপিপিএ জানায়, আসন্ন গ্রীষ্মে (মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর) বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ হাজার ২৩২ মেগাওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। সেক্ষেত্রে হেভি ফুয়েল অয়েল (এইচএফও) ভিত্তিক কেন্দ্রগুলোকে চার হাজার ১৪৯ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হতে পারে।

সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর ১০ হাজার ৬৬৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও সেখান থেকে ছয় হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যেতে পারে। আর কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে পাঁচ হাজার ৫৫৮ মেগাওয়াট পর্যন্ত আসতে পারে।

সংস্থাটির সাবেক সভাপতি ইমরান করিম বলেন, যদি সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট হয়, তবু এইচএফও ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানোর প্রয়োজন হবে এবং ভবিষ্যতেও এই প্রয়োজন থাকবে।

বর্তমানে এইচএফও ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সর্বোচ্চ সক্ষমতা পাঁচ হাজার ৫২৫ মেগাওয়াট; যা ২০৩০ সালের মধ্যে চার হাজার ২৫ মেগাওয়াটে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বকেয়া পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে; যার মধ্যে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা পাবে বিআইপিপিএর অধীন কেন্দ্রগুলো।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাউজুল কবির খান, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ, পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম, বিআইপিপিএর বর্তমান সভাপতি ডেভিড হাসানাত এবং অন্য সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সিরাজগঞ্জে গ্রাহকদের গলার কাঁটা ত্রুটিপূর্ণ মিটার

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়া বেড়ার পল্লী ব...

শুধু গ্রামাঞ্চলেই নয়, শহরেও কুমড়া বড়ির চাহিদা অনেক

শীতকালীন সুস্বাদু কুমড়ার বড়ি তৈরির উৎসবে মেতেছেন গ...

জামিন পেয়ে হত্যা মামলার চার সাক্ষীকে কোপালেন প্রধান আসামি

ঢাকার সাভারে হত্যা মামলার প্রধান আসামি জামিনে কারা...

রাষ্ট্রায়ত্ব চার ব্যাংকের ‘ক্যানসার’ থার্মেক্স গ্রুপ

দেশের ব্যাংকিং খাতের শীর্ষ খেলাপী প্রতিষ্ঠান সমূহে...

কালুখালী উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার...

সার সংকটে তরমুজ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কায় পটুয়াখালীর চাষীরা

পটুয়াখালীতে চলমান তরমুজ আবাদ মৌসুম সার সংকটে পড়েছেন চাষীরা। প্রয়োজনের তুলনায়...

সাইবার সিকিউরিটি আইনের সব মামলা প্রত্যাহার হবে: আইন উপদেষ্টা

সাইবার সিকিউরিটি আইনের অধীনে সারা দেশে যতো মামলা রয়েছে সব প্রত্যাহার করা হবে...

সাবেক মেয়রের বাড়িতে গোপন বৈঠক, আটক ৮

জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানুর বাড়িতে গোপন বৈঠকের স...

হাসপাতাল থেকেই ভোটার হচ্ছেন অভ্যুত্থানে আহতরা

ভোটার তালিকা হালনাগাদে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা