নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশিদের ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার কোন যৌক্তিকতাই নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমেরিকা কেন আকস্মিকভাবে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করছে, সেটাই তার প্রশ্ন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে ভয়েস অব আমেরিকা’র (ভিওএ) সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার প্রশ্ন, কেন তারা আকস্মিকভাবে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করছে ? যদি তারা (আমেরিকা) মানবাধিকার বা ভোটাধিকারের কথাই বলে, তাহলে বলবো, আমরা আওয়ামী লীগই বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করেছি। আমাদের অনেক লোক ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে তাদের রক্ত দিয়েছেন।
ভিওএ বাংলা’র প্রধান শতরূপা বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন ডিসি সফরকালে এ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এই আন্তর্জাতিক মিডিয়া আউটলেটটি আজ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং সাক্ষাৎকারটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রচার করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট ২২ সেপ্টেম্বর কিছু বাংলাদেশি ব্যক্তির ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার ঘোষণা দেয়। এর আগে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে দেশটি।
এর আগেও, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশে সফলভাবে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য কৃতিত্বের দাবিদার বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
শেখ হাসিনা তার সরকারের ভূমিকা ব্যাখ্যা করে বলেন, আমরাই সব ধরনের সংস্কার করেছি। আজকে ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ভোটাধিকার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা, নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য আমরাই করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব- এই স্লোগানটিও আমার তৈরি। সেভাবেই আমি মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছি।
সরকারপ্রধান বলেন, সামরিক স্বৈরশাসকরা বেশির ভাগ সময় বাংলাদেশ শাসন করেছে এবং সামরিক-সমর্থিত শাসনামলে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি, কারণ কর্তৃপক্ষ ব্যালট বাক্স ভর্তি করে শুধু ফলাফল ঘোষণা করে।
তিনি বলেন, এর প্রতিবাদে আমরা একটি আন্দোলন করেছি এবং নির্বাচনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছি। জনগণ এখন তাদের ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতন। আমরা এটি করেছি। তাই আমি মনে করি না যে, হঠাৎ করে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা চাপানোর কোন যৌক্তিকতা আছে।’
দ্বিতীয়ত, দেশে কেউ অপরাধ করলে, সে যেই হোক না কেন, সে র্যাব, পুলিশ বা অন্য কোনো সংগঠনের সদস্যই হোক না কেন, সে বিচারের সম্মুখীন হয় এবং বিচারের সময় কাউকে করুণা করা হয় না। কিছু ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বাড়াবাড়ি করতে পারে, কিন্তু দেশের আইন অনুযায়ী তাদেরকে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়।
তিনি প্রশ্ন করেন, ‘তাহলে কোনও অপরাধের জন্য শাস্তি নিশ্চিত করার এমন ব্যবস্থা থাকার পরও, কেন এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে ?’
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ সব নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জনগণ ওই নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের মানুষ ভোটাধিকারের ব্যাপারে সবসময় সচেতন। তারা কোনো ভোট চোরকে ক্ষমতায় থাকতে দেয় না।’
প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক ঘটনার কথা স্মরণ করে বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি’র নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভোটে কারচুপি করলে, দেড় মাসও টিকতে পারেননি। জনগণের ব্যাপক আন্দোলনের কারণে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
তাছাড়া ২০০৬ সালে বিএনপি ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার নিয়ে যে ভোটার তালিকা তৈরি করে, সেই ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলে, জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং নির্বাচন বাতিল করা হয়।
তিনি বলেন, ‘সুতরাং আজ এদেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকারের ব্যাপারে খুবই সচেতন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক, এটাই আমাদের দাবি ছিল এবং আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠা করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাই, আজ তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে এবং তারা ভবিষ্যতে আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে কারণ- ‘এটি তাদের ইচ্ছা’। তার সরকার জনগণের খাদ্য, ভোট, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাসহ সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে বলেও জানান তিনি।
এবি/এইচএন