বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে লাগা আগুন পুরোপুরি নিভেছে। আগুন লাগার ১০ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তা পুরোপুরি নেভে।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসীম এক খুদে বার্তায় এই তথ্য জানান। খুদে বার্তায় বলা হয়, আজ দুপুর পৌনে ১২টায় আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
এর আগে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেল থেকে বলা হয়েছিল, আজ সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অর্থাৎ আগুন লাগার ছয় ঘণ্টা পর তা নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, তারা আগুন লাগার খবর পায় বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে। দিবাগত রাত ১টা ৫৪ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট কাজ করে। পরে ইউনিটের সংখ্যা বাড়ানো হয়। সবশেষ ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিল।
আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে ট্রাকচাপায় ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য নিহত হয়েছেন। তার নাম মো. সোহানুর জামান নয়ন।
বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল ঘটনাস্থলে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
জাহেদ কামাল বলেন, পানির পাম্প থেকে লাইনের সংযোগ দিতে সড়ক পার হওয়ার সময় ট্রাকের ধাক্কায় সোহানুর আহত হন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য নিহত হওয়ার তথ্য ছাড়া আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এ ছাড়া আগুন লাগার কারণও তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; অর্থ মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে।
এদিকে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডকে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকুক, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে ফেসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ বলেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বিগত সময়ে হওয়া অর্থলোপাট, দুর্নীতি নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল।
অন্যদিকে আগুনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সকালে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই আগুন নাশকতা কিনা, তা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না। আগুন লাগার কারণসহ সব বিষয়ে তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি হচ্ছে। কমিটির সদস্য পাঁচ থেকে ১১ জন হতে পারে। এই কমিটির তদন্তের পর সবকিছু বলা যাবে।
সচিবালয়ের মতো সুরক্ষিত জায়গায় আগুনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘দুর্ঘটনা যে কোনো জায়গাতেই হতে পারে।’
তিনি জানান, প্রথমে ভবনের ৬ তলায় আগুনের সূত্রপাত। পরে তা উপর দিকে উঠে। আগুনের উৎস অনুসন্ধানেও তদন্ত কমিটি হবে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ