ঢাকার কেরাণীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকে হানা দেওয়া ডাকাতরা সাড়ে তিন ঘণ্টা পর আত্মসমর্পণ করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলা দুইটার দিকে ডাকাত দল ব্যাংকটিতে ঢুকে পড়ে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তাদের অভিযানের একপর্যায়ে আত্মসমর্পণ করেন তিন ডাকাত। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আত্মসমর্পণ করা তিন ডাকাতের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
এ ঘটনায় কেউ হাতাহত হননি। কোনো অর্থ লোপাট যায়নি। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, আত্মসমর্পণ করা তিন ডাকাত হলেন- সারাফাত, নীরব ও সিফাত। এই নামগুলো সঠিক কিনা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এদিকে পুলিশ বলছে, ডাকাতদের কাছ থেকে যে চারটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলো আসল নয়, খেলনা পিস্তল।
র্যাব-১০-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপস কর্মকার বলেন, রূপালী ব্যাংকে ঢুকে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা তিন ডাকাত আগ্নেয়াস্ত্রসহ যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদেরকে কেরাণীগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে কেরাণীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় হানা দেয় একদল সশস্ত্র ডাকাত। তাতে ব্যাংকের গ্রাহক ও কর্মী মিলে ১৬ জন ভেতরে জিম্মি দশায় পড়েন।
বিকাল সাড়ে ৫টায় তিন ডাকাত আত্মসমর্পণ করেন জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা তাপস কর্মকার বলেন, ভেতরে ১৬ জন জিম্মি ছিলেন, যাদের মধ্যে চারজন ব্যাংক কর্মকর্তা, আর বাকি ১২ জন গ্রাহক। প্রত্যেকেই অক্ষত রয়েছেন। বিনা রক্তপাতে তিন ডাকাতকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
ডাকাতদের আত্মসমর্পণের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আমরা তাদের সঙ্গে আত্মসমর্পণের জন্য প্রস্তাব দিই। নেগোসিয়েশনের একপর্যায়ে তারা আমাদের কাছে আত্মসমর্পণের জন্য রাজি হন। তবে বিক্ষুব্ধ জনতার কাছ থেকে নিরাপদে তাদেরকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। সেই অনুযায়ী, তাদেরকে হেফাজতে নিয়ে কেরাণীগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক থেকে তিনজন ডাকাতকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। ব্যাপক পাহারার মধ্যে গাড়িটি চলে যায়। সেনা সদস্যরা তখনো ব্যাংকটি ঘিরে রাখেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, ডাকাত দলের সদস্যরা চিরকূটের মাধ্যমে নিজেদের মোবাইল ফোন নম্বর দিয়েছিল। সেই নম্বরের মাধ্যমে ডাকাত দলের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাব আল হাসান জানান, যৌথ বাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করা তিন ডাকাত কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হেফাজতে আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে যেসব অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে এর মধ্যে চারটি পিস্তল আছে, সম্ভবত খেলনা, তবু যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া চাকুও উদ্ধার হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনজন তাদের নাম সাফায়েত, নীরব ও সিফাত বলেছে। নামগুলো সঠিক কি না যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
পুলিশের কেরাণীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডাকাত পড়ার খবর পেয়ে প্রথমে স্থানীয়রা জড়ো হয়ে ব্যাংকের গেইটে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে ব্যাংকের ওই শাখার চারপাশে অবস্থান নেন। তারা আলোচনার মাধ্যমে ডাকাতদের আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা চালান।
জানা যায়, ডাকাতরা ব্যাংকে ঢুকলে পাশের মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হলে স্থানীয় কয়েকশ লোক ব্যাংকের ওই শাখা ঘিরে ফেলেন ও বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যাংকটি ঘেরাও করে রাখে।
এদিকে ব্যাংকে ডাকাত দলের হানা দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর উৎসুক জনতা সেখানে ভিড় করে। এ সময় নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংক-সংলগ্ন মূল সড়কের উভয় পাশের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ডাকাত দলকে আত্মসমর্পণের জন্য পাশের মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেষ্টায় সন্ধ্যার দিকে আত্মসমর্পণ করে তারা। প্রয়োজনে ব্যাংকের ভেতরে অভিযান চালানোর প্রস্তুতিও নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আমারবাঙলা/এমআরইউ