সংগৃহীত
জাতীয়

বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল

নিজস্ব প্রতিবেদক

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই বিভিন্ন সংগঠন ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে স্মৃতিসৌধে আসছেন। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন দল ও অঙ্গ সংগঠন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন।

শনিবার প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। সকাল ৭টা ৫ মিনিটে বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সর্বপ্রথম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অব অনার দেয় তিন বাহিনীর একটি দল।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা শনিবার সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

দেখা গেছে, স্মৃতিসৌধের ভেতর থেকে বাইরে পর্যন্ত মানুষের দীর্ঘ লাইন। এসময় শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের স্মৃতিচারণ করেন। অনেকেই কবরের পাশে চোখের পানি ফেলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অনেক সাধারণ মানুষকেও শহীদদের কবরের সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। আবার অনেককে ফাতেহা পাঠ করে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করতে দেখা গেছে।

প্রসঙ্গত, আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এ দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের মর্মন্তুদ এক দিন। বিজয়ের ঊষালগ্নে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণার দিন। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের শেষলগ্নে বাঙালি যখন চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা মেতে ওঠে দেশের বুদ্ধিজীবীদের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞে। বিজয়ের চূড়ান্ত মুহূর্তে বাঙালি মেধার সে নৃশংস নিধনযজ্ঞ গোটা বিশ্বকে হতবিহ্বল করে তোলে।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দু’দিন আগে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে ঘাতকচক্র কেবল ঢাকা শহরেই প্রায় দেড়শ বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশার কৃতী মানুষকে চোখ বেঁধে অপহরণ করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। সান্ধ্য আইনের মধ্যে সেই রাতে তালিকা ধরে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী ও পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে হত্যা করে ফেলে রাখা হয় নিস্তব্ধ, ভূতুড়ে অন্ধকারে। পরদিন সকালে ঢাকার মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজার ইটখোলায় বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় বুদ্ধিজীবীদের নিথর দেহ। কারো শরীর বুলেটবিদ্ধ, কারো বা অমানুষিক নির্যাতনে ক্ষত-বিক্ষত। হাত পেছনে বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নাড়ি-ভুঁড়িও বের করে ফেলা হয়েছিল অনেকের। আর ঘুম থেকে জেগে ওঠা স্বাধীনতা ছুঁইছুঁই উল্লসিত মানুষ স্বজন হারানোর সেই কালরাত্রির কথা জানতে পেরে শিউরে উঠেছিল।

বাঙালি জাতির দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে এসব বুদ্ধিজীবী স্বীয় মেধা-মনন ও লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রেরণা জুগিয়েছেন। দেখিয়েছেন মুক্তির পথ। গোটা জাতিকেও উদ্দীপ্ত করেছেন অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। আর সেটিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের জন্য।

১৪ ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞের শিকারের দিন হিসেবে স্মরণ করা হলেও মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই ইতিহাসের এ ঘৃণ্যতম অপকর্মের সূচনা হয়। সপ্তাহজুড়ে এই তালিকায় একে একে উঠে আসে অসংখ্য বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী মানুষের নাম। পরে কৃতী এসব বুদ্ধিজীবীর তালিকাই তুলে দেওয়া হয়েছিল কুখ্যাত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর হাতে। নেপথ্যে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা রাও ফরমান আলী। মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি করে, বেয়নেটে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা শুরু হয়। এই অপকর্মের চূড়ান্ত নীলনকশারই বাস্তবায়ন ঘটে ১৪ ডিসেম্বর।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ট্রান্সপোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিয়নের বিজয় দিবস উদযাপন

বাংলাদেশ ট্রান্সপোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিয়ন মহান বিজ...

ধূমপানে বুদ্ধি কমে, বলছে গবেষণা

ধূমপানে অনেক ক্ষতি। এতে করে ফুসফুস বা হৃদপিণ্ডের ক্ষতি হয়। ধূমপান মস্তিষ্কেও...

পালানোর পর প্রথমবার বিবৃতিতে যা বললেন আসাদ

বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে গত ৮ ডিসেম্বর দেশ ছেড়ে র...

ফিরল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অ...

সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তির লটারি আজ, ফল দেখা যাবে যেভাবে

দেশের সরকারি-বেসরকারি স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি...

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা: বাবরসহ ৬ জন খালাস, পরেশ বড়ুয়ার যাবজ্জীবন

চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় করা ম...

সংস্কার একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া: আমির খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, স...

সরিষা চাষে ঝুঁকছেন বরেন্দ্র জনপদের চাষিরা

দেশে ঊর্ধ্বমুখী ভোজ্যতেলের বাজার। সম্প্রতি সয়াবিন...

লেবানন থেকে ফিরেছেন আরো ৯৪ বাংলাদেশি

যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবানন থেকে দেশে ফিরেছেন আরো ৯৪ জন ব...

ইসরায়েল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে: খামেনি

সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সরকার পতনের ফলে তেহরানের ন...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা