ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে বিক্ষোভ, হামলা ও পতাকা পোড়ানোর ঘটনার পর ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাত থেকে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগ।
ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় দূতাবাসকেন্দ্রিক স্বাভাবিকের তুলনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে। ভারতীয় দূতাবাসের সামনে ও এর আশপাশ এলাকায় বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে।
আরো জানা যায়, এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গুলশান ও প্রগতি সরণি এলাকা থেকে ভারতীয় দূতাবাসমুখী রাস্তায় বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। যদিও ওই তল্লাশি চৌকি স্বাভাবিক সময়েও থাকে।
তবে বিএনপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, দূতাবাস এলাকাতে বিশেষ কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নয় বা কোনো কিছুর আশঙ্কাও করা হচ্ছে না। তবে আগরতলায় ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে উগ্র হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের হামলার ঘটনায় দেশে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও আমজনতা।
ভারত-বাংলাদেশ উত্তেজনার শুরু সম্প্রতি। বাংলাদেশে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেপ্তারের পর গত কয়েকদিন ধরে প্রতিবেশী দেশ ভারতে ডেপুটেশন জমা, মিছিল-সমাবেশ, কুশপুত্তলিকা দাহসহ নানা ধরনের বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। এরই রেশ ধরে সোমবার হঠাৎই আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, ভাঙচুর ও পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের পোড়া পতাকার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এই ঘটনার পর সন্ধ্যায় দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে শান্তিবাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে মমতা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি এ সময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতিসংঘের শান্তিসেনা পাঠানোর প্রস্তাব করেন। এ জন্য ভারত সরকারকে জাতিসংঘের সঙ্গে কথা বলার আর্জি জানান।
সর্বশেষ ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আমদানি পণ্য আসতে দিচ্ছে না বিক্ষোভকারীরা। কলকাতাসহ অনেক শহরের হাসপাতালে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি ত্রিপুরা রাজ্যের সব হোটেল বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হোটেল মালিকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হঠাৎ করে ভারত-বাংলাদেশ মধুর সম্পর্কটি তিক্ত হতে শুরু করে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ