ফাইল ছবি
জাতীয়

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরাতে রিভিউ শুনানি ১৯ জানুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে তিনটি আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ১৯ জানুয়ারি দিন ধার্য রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ রোববার (১ ডিসেম্বর) এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, শরীফ ভূঁইয়া ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে ১৬ অক্টোবর রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করে নাগরিক সমাজের পক্ষে সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। পরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে গতকাল সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার রিভিউ আবেদন করেন। তিনটি রিভিউ আবেদনের ওপর একসাথে শুনানি হবে।

বিএনপির পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদনে বিএনপির পক্ষে ১০টি যুক্তি পেশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তির মধ্যে রয়েছে-আদালতে প্রকাশ্যে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত আদেশ সংবিধান সংশোধনের পর পূর্ণাঙ্গ রায় থেকে বাদ দেয়া এবং তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের অবসরের ১৮ মাস পর রায় প্রকাশ করা একটি বিচার বিভাগীয় প্রতারণা। উন্মুক্ত আদালতে দেয়া রায় ছিল একরকম, পরবর্তীতে প্রকাশিত রায়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। বিষয়টি নিয়ে একটি ফৌজদারী মামলাও চলমান রয়েছে বলে যুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পূর্বেই সংবিধান সংশোধন করে তৎকালীন আওয়ামী সরকার। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংসদে বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। আদালতে ঘোষিত রায়ের সাথে প্রকাশিত রায় ভিন্ন ছিল। যা বিচার বিভাগীয় প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয় বলে মনে করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।

এই সিনিয়র অ্যাডভোকেট বলেন, গণতন্ত্র এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন জমজ সন্তানের মত একটি ছাড়া আরেকটি অর্থহীন। সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র গ্রহণযোগ্য বাহন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ ধ্বংস করা হয়েছে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তিতে আরো বলা হয়, সংবিধান একটি জীবন্ত রাজনৈতিক দলিল। সময়ের প্রয়োজন মেটাতে না পারলে এর কার্যকারিতা থাকে না। সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্ব সংবিধানকে প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যাখ্যা করা যান্ত্রিকভাবে নয়। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে এ রায় পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন। যুক্তিতে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী সংশ্লিষ্ট মৌলিক মর্যাদা অর্জন করে। সুপ্রিম কোর্ট এই মৌলিক স্তম্ভ অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারে না বলে যুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন গ্রাউন্ডগুলো গ্রহণ করে সর্বোচ্চ আদালত রিভিউ মঞ্জুর করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে। পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। মানুষ মুক্তি পায়। দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয়। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন ও ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশংসিত হয়েছিল।

ছোটখাটো কিছু অভিযোগ ছাড়া সকল রাজনৈতিক দলই ওই নির্বাচনগুলো মেনে নেয়। ওই সময় জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিতে অধিবেশন কার্যক্রম প্রাণবন্ত ছিল। ২০০৭ সালের এক এগারো পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচন বিতর্কিত প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য ছিল। যদিও ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি আওয়ামী লীগ জানায়াতসহ সকল রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। এক এগারোর কুশীলবরা ওই নির্বাচন পরিচালনা করেছিল।

ওই নির্বাচন পরবর্তী সংসদে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের এমপিগণ অধিবেশনে সরব ছিলেন। ২০০৮ এর নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলে উদ্যোগ নেন। এ নিয়ে গঠিত একটি সংসদীয় কমিটি বিভিন্ন অংশীজনের সাথে মতবিনিময় করেছিল। মতবিনিময়ে প্রায় সকলেই কিছু সংস্কারসহ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর অনুষ্ঠিত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হয়। এই তিনটি নির্বাচন বিতর্কিত, অগ্রহণযোগ্য ও ভোটারবিহীন হয়েছিল। দেশে বিদেশে এসব নির্বাচন কোনরূপ গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এরমধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনাভোটে আওয়ামী লীগ ও তার জোটের ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। যা ছিল নজিরবিহীন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

.

আমার বাঙলা/এসএইচ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নিন্দা জানিয়ে  মুক্তিজোটের বিবৃতি

বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে মুক্তিজোট। ৩ ডিসেম্ব...

পেশাজীবী অধিকার পরিষদের ঝালকাঠি জেলা আহ্বায়ক কমিটি 

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মো. মামুন সিকদারকে আহ্বায়ক এবং...

নবম-দশম শ্রেণির বইয়ের ৭ গদ্য, ৪ কবিতা বাদ যাচ্ছে

আগামী বছরের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্যবিষয়ক পাঠ...

বিশ্বের শীর্ষ ১০ সুখী দেশ

সুখ ব্যাপারটা বড়ই আপেক্ষিক। কে, কেন সুখী হবে, তা হয়তো মানুষ নিজেও জানে না। ধন...

বিবিসির প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় বাংলাদেশি রিক্তা

প্রতি বছরের মতো এবছরও বিশ্বের সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদা...

গজারিয়ায় খোলা জায়গায় ময়লার ভাগাড়ে আগুন

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় জামালদী থেকে বড় ভাটেরচর সড়কে...

‘দোলনা’য় ফাঁস লেগে কিশোরীর মৃত্যু

রাজধানীর বংশাল থানার আগামাছি লেনের একটি বাসার দ্বি...

ভারতীয় রুপির দামে রেকর্ড পতন

খারাপ সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে ভারতের অর্থনীতি। পূর্...

হংকং বিমানবন্দরে পর্যটকদের স্বাগত জানাবে ‘পান্ডা’

কোনো ব্যক্তি যদি বিমানবন্দরে নেমে দেখেন সাদা-কালো...

কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হতে বললেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা