সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতারের পরপর প্রতিদিনই ঘটনাবহুল হচ্ছে দেশ। মনের অজান্তে কোথায় যেন শোনা যাচ্ছে এক অশনি বাণী। দেশ কি দাঙ্গার মুখে পড়তে চলেছে? সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। এরপর পরই প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা। চট্টগ্রাম ও রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের আট দফা দাবি নিয়ে কয়েকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ঘটনা আরও ঘোলাটে হতে থাকে যখন চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার লালদিঘী এলাকায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের এক আইনজীবী নিহত হন। এরপর পরই সরব হতে শুরু করে দেশের বেশ কিছু মহল। ইসকনকে নিষিদ্ধ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান। এদিন আদালতে এসে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, যে কেউ কোনো অ্যাঙ্গেল থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
চিন্ময় কৃষ্ণের গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়ে চুপ নেই ভারতও। মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার ও জামিন নামঞ্জুরের বিষয়টি আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করছি। বাংলাদেশে উগ্রপন্থিদের দ্বারা হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর একাধিক হামলার পর এ ঘটনা ঘটেছে। তবে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের পাশাপাশি চুরি ও ভাঙচুর এবং দেবতা ও মন্দিরের অপবিত্রতার একাধিক নথিভুক্ত ঘটনা রয়েছে। অবশ্য এর জবাব দিয়েছে বাংলাদেশও। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ বলেছে, চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিবৃতিতে দেওয়া হয়।
ইসকনকে নিষিদ্ধের জোর দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাতে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দাবি জানিয়ে হেফাজতে আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সই করা এক বার্তায় বলা হয়ে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে উগ্র হিন্দুত্ববাদী ইসকনের কর্মী-সমর্থকেরা চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ভারতের উসকানি ও মদদে এ ষড়যন্ত্রমূলক অরাজকতা তৈরি করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
এদিকে, বুধবার ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামে নিহত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের জন্য শোক এবং সম্প্রীতি সমাবেশে অংশ নিতে জড়ো হতে থাকেন ছাত্ররা। বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটা থেকে শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত 'উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের হাতে শহীদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের জন্য শোক এবং সম্প্রীতি সমাবেশ' অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
অপরদিকে ইসকনকে নিয়ে সরাসরি কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের জানাজা শেষে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, এই বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে কাদের মন সবচেয়ে বেশি খারাপ হয়েছিল। আমরা আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট দেখেছি, যখন এই বাংলাদেশে অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ হওয়ার কথা ছিল, তখন কীভাবে আমাদের এই মাদ্রাসার ভাইয়েরা ওই মন্দিরে গিয়ে পাহারা দিয়েছে।
গত ৩০ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। মো. ফিরোজ খান নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন। জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে এ মামলা দায়ের হয়। এর পর এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়ে চিন্ময়কে।
.
আমার বাঙলা/এসএইচ