সংগৃহীত
জাতীয়

অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে কী ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে?

আমার বাঙলা ডেস্ক

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে– জনগণের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা পূরণ করা সরকারের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ।

সরকার যদি প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয় বা হোঁচট খায়, তাহলে বাংলাদেশ আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। এমনকি, সামরিক বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারে।

গত ১৪ নভেম্বর রাতে প্রকাশিত ‘আ নিউ এরা ইন বাংলাদেশ? দ্য ফার্স্ট হানড্রেড ডেজ অব রিফর্ম’ শীর্ষক সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সহকর্মীদের প্রতি মানুষের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উঠে আসা এই সরকারের পক্ষে দীর্ঘমেয়াদে জনসমর্থন অব্যাহত থাকবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আশা ভঙ্গ হলে মানুষের মাঝে সাধারণত অনেক বেশি হতাশা, ক্রোধ বা ক্ষোভের জন্ম হয়।

এই সমীকরণ যে বর্তমান বাস্তবতার বেলায়ও সত্য, তা সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে। সর্বশেষ উদাহরণ হলো, ‘চিকিৎসার দাবিতে’ জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের সড়কে নেমে আসা।

ব্রাসেলসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা আইজিসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার তিন মাস পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের এজেন্ডা আরো স্পষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সামনের পথের রূঢ় বাস্তবতাও ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে।

সরকার এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হিমশিম খাচ্ছে, অর্থনীতি ধীরগতিতে এগোচ্ছে, বিভিন্ন পক্ষের একের পর এক বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে এবং এই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান আকাঙ্ক্ষা– নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকেই মানুষ তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কথা জানাচ্ছেন। এটি একদিক থেকে ভালো যে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকারের কাছে সমস্যার কথা জানাতে পারছেন।

কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে বলেই বিক্ষোভ-কর্মসূচি বাড়ছে। সেইসঙ্গে, সবকিছু মেনে নেওয়ায় মানুষ বিরক্তও হচ্ছে, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, সরকার সব দাবি গ্রহণ করছে। সরকারের নির্ভরতার জায়গা হয়ে উঠছে মব, এটি ঝুঁকিপূর্ণ।

এ ছাড়া, বৃহস্পতিবার খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য ক্রেতা হিসেবে নিজেও চাপে রয়েছেন। তবে সরকারের তরফ থেকে এরকম কথা শুনলে সাধারণ মানুষের মনে আশা নয়, নিরাশার সঞ্চার হয় বলে মনে করেন অধ্যাপক নাসরীন।

তার মতে, মানুষ সরকারের ওপর অনেকটাই বিরক্ত এখন। আর জনরোষ বাড়ার উপাদানও স্পষ্ট। মব সন্ত্রাস তৈরি হয়েছে, জনগণের অনিরাপত্তা তৈরি হয়েছে। গণপিটুনি, নারী নিপীড়ন, ধর্ষণের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ কিছু অঞ্চলে ডাকাতি, চুরি ঘটছে। থানায়-আদালতে যেতে চাচ্ছে না মানুষ।

আইজিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন ধরে রাখাও এখন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা নির্বাচন চাইছে…অধ্যাপক ইউনূসের মিত্ররাও সাংবিধানিক সংস্কার এবং শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য জবাবদিহির মতো বিষয়গুলো নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করছেন এখন।’

এই কথার সঙ্গে একমত রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুমও। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহের ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, ছাত্র আন্দোলন ও সরকারের নেতৃত্বের মাঝে ফারাক লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

আইসিজি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই মুহূর্তে জনসমর্থন ধরে রাখা সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সরকার যেসব সংস্কারমূলক কাজ করছে, সেগুলোর ফলাফল দ্রুত দৃশ্যমান করা প্রয়োজন। সংস্কার আনতে গিয়ে সরকার হোঁচট খেলে এর পরিণতি হবে সামান্য অগ্রগতিসহ একটি আগাম নির্বাচন। পরিণতি হিসেবে এখানে সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতা চলে যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সামাজিক সমর্থনের ভিতকে শক্তিশালী রাখতে দ্রুত কিছু অর্জনের প্রতি নজর দেওয়া উচিত অন্তর্বর্তী সরকারের এবং দেশকে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা উচিত।

৩২ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন তৈরির জন্য সরকার থেকে শুরু করে, রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক বিশ্লেষক– অনেক পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে আইসিজি।

প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকার আরো এক বছর এবং সম্ভবত এর চেয়েও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কিন্তু এ সরকারের অনেক বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি এড়ানো উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কারণ গত ১৫ বছরে দেশের পুলিশ, বিচারব্যবস্থা ও আমলাতন্ত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে বিগত সরকার। সেইসঙ্গে, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, চরম সামাজিক বৈষম্য ও ক্রমবর্ধমান দুর্নীতির তো আছেই।

এসব কারণে এই সরকারের প্রতি মানুষের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেগুলো পূরণ করা তো দূরের কথা, সামলানোই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে।

প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের ইতিহাসে এ যাবৎকালের সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক হলেও এর সদস্যদের সরকার ও প্রশাসন পরিচালনায় তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় সরকার করা হলে এই সমস্যা এতটা প্রকট হতো না। কিন্তু এখন যেহেতু সেই সুযোগ কম, তাই তারাও মনে করছেন– নির্বাচনই হতে পারে এই সমস্যার একমাত্র সমাধান।

অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, সরকারের এই সমস্যার সমাধান নির্বাচন দেওয়া। গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি সরকার তৈরি করা। সেই সরকার গণতান্ত্রিক হবে কিনা জানি না। কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকারকে নিয়ে আসা বাংলাদেশের জন্য সমাধানের একটি পথ হতে পারে।

অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুমও একই কথা বলছেন। তার ভাষ্য, ৫ আগস্টের পর যে জনঐক্য দেখা গেছিল, তা ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে আসছে। এই সুযোগে ফ্যাসিবাদী শক্তি ঢোকার চেষ্টা করছে। সেটি নাগরিকের কাছে কাম্য হচ্ছে না। তাই, যথাসম্ভব দ্রুত নির্বাচন হতে পারে।

তবে অধ্যাপক নাসরীন মনে করেন, বর্তমান সরকারের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা নেই। সরকার কিন্তু এখনো কোনো পরিষদ তৈরি করেনি। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও না, জনগণের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও না। রাজনৈতিক দল বাদেও জনগণের নাগরিক প্রতিনিধি থাকতে পারে। সরকারের সেই আলাপ-আলোচনাকে বাইরে রেখে বলছে বিভিন্ন বিষয়ে লিখে পাঠান।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীনতা, সাম্যতা, প্রাপ্যতা। কিন্তু সরকার জননিরাপত্তা সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের জন্য সবচেয়ে ভালো ও সম্মানজনক সিদ্ধান্ত, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকার।

সূত্র: বিবিসি বাংলা।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঢাকা সিটি কলেজ

অনির্দিষ্টকালের জন্য সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকা...

আলু-পেঁয়াজের দামে অস্বস্তি

আলু আর পেঁয়াজ, প্রয়োজনীয় এই দুই পণ্যের দাম কমার ক...

১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ সাবেক লঙ্কান ক্রিকেটার

২০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন দুই মাসও পার হয়নি, এবার যোগ হলো আরও ১০ বছর। শ্রী...

ঝিনাইদহে মাদ্রাসার ছাত্রকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা

ঝিনাইদহে সাফওয়ান (৬) নামে এক মাদ্রাসার ছাত্রকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়েছে।...

কেনেডিকেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প

টিকাবিরোধী ও চিকিৎসাশাস্ত্রে ষড়যন্ত্রের তাত্ত্বিক...

নবান্ন উৎসব শুরু

আজ ১ অগ্রহায়ণ। নবান্ন উৎসবে মেতেছে বাংলাদেশ। শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭ট...

চা শ্রমিকরা আড়াই মাস ধরে বেতন পান না

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির অধীন চা বাগানের শ্রমিকরা আড়াই মাস...

রোনালদোর জোড়া গোল, কোয়ার্টার-ফাইনালে পর্তুগাল

এক ম্যাচ পর আবারো জালের দেখা পেলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সফল স্পট কিকের পর শে...

ঈগল ১০ হাজার ফুট উপর থেকে শিকার দেখতে পায়

ঈগল একটি শিকারি পাখিই নয়, এটি শক্তি ও সাহসের প্রতীক। এই পাখিকে যুক্তরাষ্ট্র,...

সাবেক প্রধান বিচারপতি ফজলুল করিম আর নেই

দেশের ১৮তম প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ইন্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা