নিজস্ব প্রতিবেদক: চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মিনিস্টার লিউ জিয়ানচাও জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের জন্য প্রতীক্ষায় রয়েছে চীন। এ সফর সফল করার জন্য উভয়পক্ষ এখন কাজ করছে।
সোমবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এসব কথা জানান।
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মিনিস্টার লিউ জিয়ানচাওয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বৈঠক করে। বৈঠক শেষে লিউ জিয়ানচাও সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ৫০ বছরের গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে। আমরা দুই দেশই আরও গভীর সম্পৃক্ততা চাই।
চীনা মিনিস্টার বলেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করবেন। এ সফরের জন্য আমরা প্রতীক্ষা করছি। সফর সফল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও চীনা পক্ষ একযোগে কাজ করছে। লিউ জিয়ানচাও বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ইত্যাদি খাতে দুই দেশই সহযোগিতা বাড়াতে চায়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরে এসব বিষয়ে ফল আসবে। সফরকালে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে বলেও আশা করেন তিনি। মিনিস্টার বলেন, চীন বন্ধু ও উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভূমিকা অব্যাহত রাখবে। আমরা এ সঙ্কটের সমাধান চাই।
চীনা মন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগের সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে চায়। সে লক্ষ্যে আমরা নানা উদ্যোগও নিয়েছি। এদিকে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, আগামী ৮ থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেইজিং সফর করবেন বলে আশা করছি। ওই সফরে উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী ৮-১১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর করবেন বলে আশা করছি। বাংলাদেশের উন্নয়নে অনেক ক্ষেত্রে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সামনে প্রধানমন্ত্রীর সফরে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে, সেটি আমরা প্রত্যাশা করেছি। আমরা এই সফরের দিকে তাকিয়ে আছি। চীনা মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে হাছান মাহমুদ জানান, চীন আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী এবং বড় বাণিজ্য সহযোগী। আমরা বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা চীন থেকে ইমপোর্ট করি প্রায় ১৩ বিলিয়ন। আর এক্সপোর্ট করি পৌনে এক বিলিয়ন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর ব্যাপারে আমরা বলেছি, ওষুধ, চামড়া ও সিরামিক পণ্যগুলো তারা আমাদের থেকে নিতে পারে। আমাদের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল চীন সফরে যাচ্ছে বলেও জানান ড. হাছান।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশেষ করে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীনের সহায়তা চেয়েছি। আমরা গাজা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি। এ ব্যাপারে চীনকে আমরা অ্যাকটিভ রোল প্লে করার প্রত্যাশা করি। যেকোনো ফরমেটে বাংলাদেশকে ব্রিকসে যুক্ত হতে চীনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, যেকোনো ফরমেটে ব্রিকসে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি হয় সেটা মেম্বার কান্ট্রি বা পার্টনার কান্ট্রি, যেটাই হোক। সেটা নিয়ে তাদের সমর্থন চেয়েছি।
বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনা বিনিয়োগ যেন বাংলাদেশে আরও আসে সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। চীনা মন্ত্রী আমাদের দেশে আরও বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। তিস্তা বহুমুখী প্রকল্প নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে আজকে আলোচনা হয়নি। উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল চীন সফর করবেন জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের দলের জুনিয়র নেতারা চীন সফর করেছেন। সিনিয়র সদস্যরা যাবেন, সেটি নিয়ে আলোচনা করেছি। দুই দেশের দলের মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছি।
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর সামনে রেখে ২২ জুন চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় এসেছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাওয়ের নেতৃত্বে আট সদস্যের প্রতিনিধিদল।
এবি/এইচএন