নিজস্ব প্রতিবেদক : ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা নেতাদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগ্রহ বাড়ছে কারণ এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অনেক প্রাক্তন নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৮ মে সারাদেশে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে এক ডজনেরও বেশি সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের অনেকেই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বা ছিলেন, আবার অনেকে এর বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা ইউনিট থেকে হাজির হয়েছেন। তবে, আ.লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন বয়কটের কৌশল অনুসারে তাদের মাতৃ সংগঠন বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এ বছর ছাত্রদলের কোনো নেতা নির্বাচনী দৌড়ে যোগ দেননি।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তফসিল অনুযায়ী, চলতি বছর চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে ১৪৮টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে মোট ১,৬৯৩ জন বৈধ প্রার্থী, ৬০১ জন চেয়ারম্যান পদে, ৬৪৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং ৪৪৭ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। ২৩ এপ্রিল তাদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। তবে চেয়ারম্যান পদে ছয়জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নয়জন এবং মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন- এরইমধ্যে ২৫ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট ২১ মে, তৃতীয় ধাপের ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ৫ জুন।
ছাত্র নেতারা বলছেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অনেক সাবেক ছাত্রনেতা ইতঃপূর্বে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিলেও সম্ভবত এই প্রথম অনেক বর্তমান ছাত্রনেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অতীতে স্থানীয় রাজনীতির জটিলতায় ছাত্রনেতারা সাধারণত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী হতে সাহস পেত না। কিন্তু গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লীগের অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য হন। এবার দলীয় প্রতীক ছাড়া উপজেলা নির্বাচন হওয়ায় ছাত্রনেতারা নির্বাচনে লড়তে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এবং এভাবেই গণমানুষের কাছে নিজেদের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা প্রমাণ করছেন।
এছাড়া দুই উপজেলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (জাসদ) নেতারাও প্রার্থী হয়েছেন। কৌশলগত কারণে এবারের উপজেলা নির্বাচনে দল বা সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতাকে প্রার্থী হতে বাধা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেছেন, তার দল পরোক্ষভাবে কোনো প্রার্থীকেও সমর্থন করবে না... মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা ৮ মে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে অন্তত ১৮টি উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে দুই উপজেলার দুই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। প্রথম ধাপে রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ। মাসুদ সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ সভাপতি ও সিদ্দিক নাজমুল আলম সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতারা যারা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মোহাম্মদ শরিফুল হাসান, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার মেহেদী হাসান রনি, ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু থেকে এম আমিনুল ইসলাম, সিলেটের কানিঘাট উপজেলার খায়ের চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম। খুলনার ডুমুরিয়া থেকে ইসলাম বাদশা। ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সাদ্দাম হোসেনও মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন।
এ প্রসঙ্গে সাদ্দাম বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। স্থানীয় জনগণের জন্য কাজ করার জন্য উপজেলা পরিষদ একটি উপযুক্ত প্লাটফর্ম এবং সে কারণেই আমি এখানে প্রার্থী হয়েছি। আমি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে, তরুণ রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে জনগণের উচ্চ প্রত্যাশা রয়েছে, তিনি যোগ করেছেন। এছাড়া ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি সাগর হোসেন সোহাগ এবং হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহ-সভাপতি আরিফ আল হাসান একই পদে প্রার্থী হয়েছেন।
স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ছাত্রলীগের রংপুর জেলা শাখার বর্তমান সভাপতি সাব্বির আহমেদ রংপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন, একই পদে মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম লড়ছেন জেলার দৌলতপুর উপজেলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন শোভন প্রার্থী হয়েছেন। সদর উপজেলা ও ঝিনাইদহ জেলা শাখার সাবেক সভাপতি রানা হামিদও একই পদে জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের গাজীপুর জেলা শাখার বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসির মোড়ল ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সংগঠনটির বিভিন্ন স্থানীয় পদে থাকা আরও কয়েকজন নেতাও এ বছর সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতীক পাওয়ার পর এসব প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা মেহেদী হাসান রনি বলেন, স্থানীয় নোংরা রাজনীতির কারণে সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং তারা পরিবর্তন চায়। তরুণ ছাত্রনেতাদের কাছ থেকে জনগণ অনেক প্রত্যাশা করে উল্লেখ করে মেহেদী বলেন, ‘এবারের উপজেলা নির্বাচনে ছাত্রনেতাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। আশা করি জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে যে দাবিগুলো প্রত্যাশা করেন ভোটাররা আমাদের সমর্থন করবেন। সিলেটের কানিঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী খায়ের চৌধুরী বলেন, সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার স্বপ্ন দেখেন তরুণ রাজনীতিবিদদের আমাদের সমর্থন করা উচিত। একজন তরুণ প্রার্থী হিসেবে সত্যিকার অর্থে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে উদাহরণ সৃষ্টি করাই আমার অঙ্গীকার।
এবি/এইচএন