সংগৃহিত
জাতীয়

১৫ মন্ত্রী নেই নতুন মন্ত্রিসভায় , নেপথ্যে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড

সৈয়দ জাফরান হোসেন নূর: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২২টি আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন বর্তমান মন্ত্রিসভার ১৫ জন মন্ত্রী ও ১৩ প্রতিমন্ত্রী।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাদ পড়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অনেকেই নানা কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ দক্ষতা দেখাতে না পারায় নতুন মন্ত্রিসভায় ডাক পাননি। এদিকে প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়িয়েছে ৩৭ জনে। তাদের মধ্যে ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রী এবং ১১ জন পাচ্ছেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) রাতে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হয়।

নতুন মন্ত্রিসভায় বাদ পড়া মন্ত্রীরা হলেন- কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জাব্বার (টেকনোক্রেট মন্ত্রী)।

প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন- পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম (টেকনোক্রেট), শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান (মনোনয়ন পাননি), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন (মনোনয়ন পাননি), পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টচার্য, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ (মনোনয়ন পাননি), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান (নির্বাচিত হতে পারেননি), বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী (নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন), মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

এছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমও ডাক পাননি।

দেশজুড়ে সর্বমহলে আলোচনা-সমালোচনায় ছিল মন্ত্রীদের যেসব বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড-

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক: ‘বিএনপিকে নানা প্রস্তাব দিয়েও নির্বাচনে আনা যায়নি, এমনকি নির্বাচনে এলে বিএনপি নেতাদের জেল থেকে মুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়’— এমন বিস্ফোরক মন্তব্যের কারণে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বাদের তালিকায় থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল: নিত্যপণ্যের বেসামাল বাজারদর এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে ওঠার পরও এসব নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে বাদ পড়তে পারেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অবশ্য, অসুস্থতার কারণে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বাদ পড়তে পারেন, এমন আলোচনা আগে থেকেই ছিল।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি: ‘আমরা সিন্ডিকেটের সঙ্গে পারি না’। বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ছাড়াও নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেটের কাছে এই ‘আত্মসমর্পণ’কে মন্ত্রীর পদ থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বাদ পড়ার মূল কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক: করোনার টিকা নিয়ে সীমাহীন অব্যবস্থাপনা ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে। মানিকগঞ্জে সরকারি ওষুধ কারখানার জন্য যে এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করা হবে, সেই জায়গাগুলো নিজে, ছেলে-মেয়ে, ভাইয়ের নামে কেনার অভিযোগে বিতর্কিত হন এই মন্ত্রী। এসব কারণে নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়তে পারেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন: বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে নানান বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বাদ পড়তে পারেন।

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান: ‘কচুরিপানা খাওয়া’ এবং নিকলীর সড়কে অর্থ অপচয়সহ নানা মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মধ্যে পড়েন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান। তার মন্ত্রিত্ব হারানোর পেছনে এসবও কারণ হতে পারে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন: ব্যাপক অভিযোগ ছিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তার ছেলে, ভাই, স্বজনরা মিলে পাহাড়ের জায়গা দখলের অভিযোগ, বনের গাছ নিয়ে অভিযোগ, জনপ্রতিনিধি হয়েও নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে ঠিকাদারি কাজের অভিযোগসহ নানা কারণে সমালোচনার মধ্যে পড়েন শাহাব উদ্দিন। যা মন্ত্রিসভা থেকে তার বাদ পড়ার কারণ হতে পারে বলে অনেকের ধারণা।

এছাড়া নতুন মন্ত্রিসভায় দলের সক্রিয় নেতাদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখান থেকে কারও কারও বাদ পড়া হয়ত যৌক্তিক। আবার কারও কারও বাদ পড়ার পেছনে কী কারণ তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা

অপরদিকে, দলের মনোনয়ন ও মন্ত্রিত্ব দুইটিই হারিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। আর মনোনয়ন পেলেও নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, স্বপন ভট্টাচার্য্য ও এনামুর রহমান।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক পুরোনো মুখ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণের চেয়ে নতুনদের স্থান করে দেওয়ার জন্যই অনেকে মনোনয়ন পাননি। সেই ধারাবাহিকতায় এবার মন্ত্রিসভায় দলের সক্রিয় নেতাদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অনেকের ধারণা, এখান থেকে কারও কারও বাদ পড়া হয়ত যৌক্তিক। আবার কারও কারও বাদ পড়ার পেছনে কী কারণ তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এবার মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ব্যক্তিদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বারবার সংসদ সদস্য হয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের কথা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে।

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২২টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। একাদশ সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে পেছনে ফেলে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ৬২ জন; যাদের মধ্যে ৫৯ জন আওয়ামী লীগেরই নেতা। আর জাতীয় পার্টির আসন অর্ধেকের বেশি কমে নেমেছে ১১টিতে। দুটিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং একটিতে জয় পেয়েছে কল্যাণ পার্টি। একটি আসনের ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে।

এদিকে, নতুন মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বিদায়ী মন্ত্রিসভার অনেকেই নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। আর প্রথমবারের মতো যুক্ত হচ্ছেন ১৪ জন। নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য ৩৭ জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ শপথ নিচ্ছেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। ইতোমধ্যে ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রী ও ১১ প্রতিমন্ত্রীর তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নতুন সরকারে কে কোন মন্ত্রণালয় পাবেন, দফতর বণ্টনের পর তা জানা যাবে। শপথ গ্রহণের পর দফতর বণ্টন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

এবি/এইচএন

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

এখন থেকে প্রকল্পের তথ্য ওপেন থাকবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : এখন থেকে প্রকল্পের সব তথ্য ওপেন থাকবে। শু...

সাবেক ৩ সিইসির বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবু...

ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৬ জ...

ফরিদপুরে ৫ জনের যাবজ্জীবন

জেলা প্রতিনিধি : ফরিদপুরে সাদ্দাম শেখকে (২১) হত্যার দায়ে ৫ জ...

কর্মস্থলে না ফেরা পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক : এখনও পুলিশের যেসব সদস্য কাজে যোগদান করেনন...

আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭৬

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে গত আগস্ট মাসে ৪৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনা...

কারাগার থেকে পালানো আসামি গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি : গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে পালানো মৃত্...

বিভিন্ন খাত সংস্কারে সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরে বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা...

আশুলিয়ায় আজও বন্ধ ২২ কারখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার অধিকাংশ পোশাক কারখানা...

ঢাবির হলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা