সংগৃহীত
অপরাধ

রানা প্লাজা ধসের এক যুগ: বিচারের অপেক্ষা ফুরায় না

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাভারের রানা প্লাজা ধসের বিচার শেষ হয়নি এখনো। আজ বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পূর্ণ হলো। এ দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগীসহ দেশবাসীর অপেক্ষা আর ফুরায় না। এ ঘটনার তিনটি মামলার একটি উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে আটকে আছে। সাক্ষী না আসার কারণে অন্য দুটির বিচার চলছে ধীরগতিতে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার অভিযোগও উঠছে।

এদিকে মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানা ছাড়া অন্য সবাই জামিনে মুক্ত। এমন পরিস্থিতিতে দেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্র্যাজেডির বিচার নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। হাজারো ভুক্তভোগী শ্রমিক ও হতাহতের পরিবারে দেখা দিয়েছে হতাশা।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ১০ তলা রানা প্লাজা ভবন ধসে পড়ে। ওই ভবনে থাকা কয়েকটি পোশাক কারখানার পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিক তার নিচে চাপা পড়েন। কয়েকদিনের উদ্ধার তৎপরতায় এক হাজার ১৩৬ জনের লাশ তুলে আনা হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক আহত ও পঙ্গু হন।

ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এই শিল্প দুর্ঘটনার পাঁচদিন পর ২৯ এপ্রিল ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে সোহেল রানাকে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

ঘটনার পরের দিন অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ২১ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। এ ছাড়া ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে আরেকটি মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। দুর্নীতি দমন কমিশন ভবন নির্মাণ-সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে মামলা করে। হত্যা মামলার ৩৯ আসামির মধ্যে কারাগারে আছেন কেবল রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা। অন্যদের মধ্যে সাতজন পলাতক এবং ৩১ জন জামিনে আছেন।

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিনুল হক আমিন বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার কারণে ভয়াবহ এই ট্র্যাজেডির বিচার আজও শেষ হয়নি। বিচার বিভাগেরও দায় রয়েছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার চাইলে বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব।

দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণ করেছেন সাভারের শিউলি খানম। এক যুগেও বিচার না হওয়ায় তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় আমার ডান পাশ অবশ হয়ে গেছে। ভারতে গিয়ে তিনবার চিকিৎসা নিয়েছি, চার মাস পর আবার যেতে হবে। প্রায় সাত বছর আগে শিউলির স্বামী মারা গেছেন। এখন তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারের কাছে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং সুচিকিৎসা প্রত্যাশা করেন তিনি।

হত্যা মামলার পরিস্থিতি: হত্যা মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ভবন মালিক, গার্মেন্ট মালিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের ৪১ জনের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। বর্তমানে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৯৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

১৫ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল, কিন্তু সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন আগামী ১৯ মে।

রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবুল কালাম খান বলেন, মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য এখনো নেওয়া হয়নি। বিচার শেষ করতে হলে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। তিনি জানান, সাক্ষীরা হাজির না হলে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে। এতে সাক্ষী অনুপস্থিতির সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে।

ইমারত আইনে মামলায় স্থগিতাদেশ: ভবন নির্মাণে ত্রুটি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে করা মামলায় ২০১৬ সালের ১৬ জুন ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। তবে চার্জ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। এই স্থগিতাদেশ এখনো প্রত্যাহার না হওয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ইশতিয়াক হোসেন বলেন, উচ্চ আদালত ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শিগগির অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে হাইকোর্টে আবেদন করে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হবে।

ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ইকবাল হোসেন বলেন, এতদিনেও বিচার কাজ শেষ না হওয়ার পেছনে ‘বিগত সরকারের অবহেলা রয়েছে।

ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলায়ও ধীরগতি: রানা প্লাজা ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে করা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ জিয়াউর রহমানের আদালতে। ২০১৭ সালের ২১ মে সোহেল রানাসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন (জাহাঙ্গীর) বলেন, গত ২৪ মার্চ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল, কিন্তু সাক্ষী উপস্থিত হননি। আগামী ১২ মে পরবর্তী শুনানি হবে।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পূবাইলে রাস্তার উদ্বোধন

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন পূবাইলের ৪০ ও ৪১নং ওয়ার্ড...

কমলগঞ্জে ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে এক গৃহবধূ (২৫) ধর্ষণের শিকার...

সংসদ ভবনে ৫ আগস্ট পালিয়ে ছিলেন শিরীন শারমিন-পলকসহ ১২ জন

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ৫ আগস্ট সকাল থেকে রাত আড়াইট...

শিক্ষা উপদেষ্টার অনুরোধ সত্ত্বেও অনড় অনশনরত কুয়েট শিক্ষার্থীরা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট)...

কোন ধর্ম ও বিশ্বাসের কত অনুসারী?

বিশ্বে নতুন নতুন ধর্মের উত্থান হয় এবং তা ছড়িয়ে পড়ে...

নতুন রাজনৈতিক দল আনছেন ইলিয়াস কাঞ্চন

এবার রাজনীতিতে নামছেন দেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। নতুন একটি রাজনৈত...

ইতালিপ্রবাসী ফাহমিদুলকে ডাকা হবে সিঙ্গাপুর ম্যাচে

১০ জুন ঢাকায় এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে সিঙ্গাপুরের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ফুটবল দল...

সবার আকাঙ্ক্ষা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, কমিশনের লক্ষ্য হ...

বাবার ঠিকাদারি ইস্যুতে ক্ষমা চাইলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজী...

নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করলো মহিলা জামায়াত

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছে জামায়াতে ইসলামীর মহিলা শ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা