একটি যৌথ ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ এবং সমৃদ্ধির জন্য এশীয় দেশগুলোকে স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য একে অপরের সঙ্গে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ নির্ধারণ করতে হবে যাতে আমরা যৌথ ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারি।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক বার্তায় জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) চীনের হাইনানে আয়োজিত বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় এই আহ্বান জানান ইউনূস।
তিনি বলেন, আর্থিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আর আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিতে হবে। আমাদের দরকার নির্ভরযোগ্য তহবিল, যা আমাদের চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান করবে এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে পারবে।
সেই সঙ্গে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের অন্য সব অঞ্চলের তুলনায় অন্তর্ভুক্তির দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে এশিয়া। এই দুর্বল যোগাযোগ বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই দ্রুত বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ সাশ্রয়ী কৃষি উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে এবং স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। আর সেজন্য টেকসই কৃষি প্রযুক্তি ও জলবায়ু-বান্ধব কৃষি উদ্ভাবন হতে পারে মূল চাবিকাঠি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা হবে নবায়নমূলক, সমতাভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। আমাদের জ্ঞান ও তথ্য ভাগ করে নেওয়া দরকার এবং প্রযুক্তি উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করা উচিত। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের উন্নয়নের পথকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ও যুবশক্তিকে এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার কেন্দ্রে রাখতে হবে। আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে— যে সমাজ নিজেই নিজেকে সংরক্ষণ করবে এবং নিজেকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলবে। আমাদের এমন একটি সংস্কৃতি গড়তে হবে, যেখানে শূন্য-অপচয় নীতির জীবনধারা অনুসরণ করা হবে। ভোগবাদ সীমিত হবে কেবল জরুরি চাহিদার মধ্যে। আমাদের অর্থনীতিকে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক ব্যবসা নীতির ওপর ভিত্তি করে, যা বর্তমানে ব্যবসার ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে; যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ব একসঙ্গে মিলিত হয়।
ইউনূস বলেন, যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বোয়াও ফোরাম ও এশিয়ার অন্যান্য উদ্যোগগুলোকে কাজ করতে হবে, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরো বাসযোগ্য করে তোলা যায়।
তিনি বলেন, প্রতিটি তরুণকে তিনটি মূল লক্ষ্য অর্জনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে— শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ, এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে শূন্য বেকারত্ব। এটিই সেই যৌথ ভবিষ্যৎ, এই এশিয়ায় আমাদের সেটা গড়ে তুলতে হবে একসঙ্গে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ