নাড়ীর টানে আনুষ্ঠানিক বাড়ি ফেরা শুরু হয়েছে সোমবার (২৪ মার্চ) থেকেই। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) ছিল দ্বিতীয়দিনের ঈদযাত্রা। এদিন স্বস্তিদায়ক হয়েছে রেলপথ, বাস ও লঞ্চে ঈদযাত্রা। ট্রেনে চাপ একটু বাড়লেও যাত্রীরা ঠিকভাবে যেতে পেরে খুশি। বাসে তেমন চাপ ছিল না। আর রাজধানীর সদরঘাটে লঞ্চ চলাচল ছিল স্বাভাবিক। যাত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ ছুটির কারণে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হচ্ছে।
ট্রেনে স্বস্তি, ছিল চাপও: মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন কললাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি প্ল্যাটফর্মেই যাত্রীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দিনের শুরুর প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। সময় ধরে ট্রেন চলায় যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি ছিল। এদিকে অনলাইনে ফিরতি ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। গতকাল মিলেছে ৪ এপ্রিলের ফিরতি টিকিট।
মঙ্গলবার সারা দিনে মোট ৪৩টি আন্তঃনগর ট্রেন এবং ২৫টি মেইল ও কমিউটার ট্রেন ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যায়। প্ল্যাটফর্মে টিকিটবিহীন প্রবেশ বন্ধে কয়েক স্তরের চেকিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়, ফলে যাত্রীদের জন্য স্বস্তিকর পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। যাত্রীরা বিনা ঝামেলায় ট্রেনে উঠতে পেরেছেন।
বরাবরের মতো বাংলাদেশ রেলওয়ে এবারো ঈদযাত্রায় বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিনা টিকিটে যাত্রী প্রতিরোধে ও স্টেশনে নিরাপত্তা জোরদার করতে দেশব্যাপী বড় স্টেশনগুলোতে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ এবং র্যাব সদস্যরা সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকছে।
রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রী আয়েশা আক্তার বলেন, আমি বাড়ি যাওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছি। ট্রেন দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে। একটু আগেই এসেছি। আমরা দুই বান্ধবী বাড়ি যাচ্ছি ধূমকেতু এক্সপ্রেসে।
কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের প্রতিদিন ৪৩টি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। ২৫টি মেইল এক্সপ্রেস/কমিউটার ট্রেন ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। আগামী ২৭ তারিখ থেকে স্পেশাল ট্রেন ছেড়ে যাবে। কোনো রকমের অঘটন বা সমস্যা না হলে ট্রেন বিলম্বের কোনো কারণ নেই।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শাহীন মিয়া বলেন, আমরা দুজনের টিকেট পেয়েছি, তবে আন্তঃনগর ট্রেনের পাইনি। রাজশাহী কমিউটার ট্রেন দিয়ে যাব। একটু পরেই ট্রেন চলে আসবে।
মঙ্গলবার সকালে ট্রেনে উঠে নিজের আসন নিশ্চিত করেন কিশোরগঞ্জগামী এগারসিন্দুর প্রভাতীর যাত্রী সৈয়দা শাকিলা জাহান। তিনি বলেন, ট্রেন সময় মতোই এসেছে। ট্রেন সাড়ে ১০টায় ছেড়ে যাবে। প্লাটফর্মে তো ১০ মিনিট আগেই আসছে। তাই উঠে বসে আছি। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আমি আগেই বাড়ি চলে যাচ্ছি ঈদ করতে। তাদের বাবা বৃহস্পতিবার বাড়ি যাবে।
সরেজমিন দেখা যায়, কমলাপুর স্টেশনে ঢোকার মুখেই বাঁশ দিয়ে কয়েকটি প্রবেশপথ বানানো হয়েছে। তিনধাপে টিকেট পরীক্ষা করে তারপর যাত্রীরা ঢুকতে পারছেন স্টেশন ও প্ল্যাটফর্মের ভেতরে। দু-একজন বিনা টিকিটের যাত্রী পেলে তাদের থেকে ৫০ টাকা জরিমানাসহ গন্তব্য স্টেশনের ভাড়া নেওয়া হয়।
বিনা টিকেটে যাতে কোনো যাত্রী ট্রেনে চড়তে না পারেন, সেজন্য তল্লাশি ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন। ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রির তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, সোমবার ৩ তারিখের ফিরতি টিকিট দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ফিরতি টিকিটের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ বিক্রি হয়েছে। ফিরতি টিকিটের ক্ষেত্রে একসঙ্গে এত চাপ থাকে না। মঙ্গলবার ৪ তারিখের টিকিট দেওয়া হচ্ছে, ৩৩ হাজার ৮১৭টি টিকেটের বিপরীতে ১৪ হাজার ২০০ টিকেট বিক্রি হয়েছে।
তিনি জানান, অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা মেটানোর জন্য এবার ৪৪টি কোচ বিভিন্ন ট্রেনে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর স্পেশাল ট্রেনের মধ্যে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর, ঢাকা-চট্টগ্রাম, জয়দেবপুর-পার্বতীপুর, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে প্রতিদিন স্পেশাল ট্রেন চলবে। আর ঈদের দিন চলবে কেবল ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রুটে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি (অপারেশন) মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া গতকাল কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, স্বস্তিতে যাত্রীরা বাড়ি ফিরছেন। কোনো ধরনের সমস্যা চোখে পড়েনি। গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকজন কালোবাজারিকে ধরা হয়েছে।
রেলওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার পোশাক গার্মেন্টসগুলো ছুটি হলে ভিড় বাড়বে। সে জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনে আমাদের বিশেষ ব্যবস্থা আছে, আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।’ রেল পুলিশের পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপত্তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, আনসারসহ অনেকে কাজ করছেন বলে তিনি জানান।
বাসে চাপ ছিল কম: রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে ভিন্ন চিত্র। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহাখালী, গাবতলীসহ অন্যান্য বাস টার্মিনালগুলোতে ছিল না অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ। বেশিরভাগ কাউন্টারই ফাঁকা। অল্প সংখ্যক যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার বাসগুলো ছেড়ে যায়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকেই আগেভাগে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। দীর্ঘ ছুটির কারণে যাত্রীরা ধাপে ধাপে ঢাকা ছাড়ছেন, ফলে চাপ কমেছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে।
ট্রেনের ছাদে চড়া নিষেধ: ঈদযাত্রায় ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা যাবে না বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এবার আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, স্টেশনে কোনো মই ও টুল থাকবে না। আশা করব, ২৭ তারিখ থেকে মই ও টুল আপনারা স্টেশনে দেখতে পাবেন না।’
মঙ্গলবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।
রেলসচিব বলেন, ‘ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা যাবে না। এটি বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে। এর আগে আপনারা দেখেছেন, মই ও টুল ব্যবহার করে ছাদে উঠে যেতেন। এবার আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, স্টেশনে কোনো মই ও টুল থাকবে না। আশা করব, ২৭ তারিখ থেকে মই ও টুল আপনারা স্টেশনে দেখতে পাবেন না।’
ফাহিমুল ইসলাম বলেন, এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ঈদ। তাই এবার যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করার বিষয়টি বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রেলওয়ে কর্মচারীর পরিচয়ে ট্রেনের টিকিট বিক্রির বিজ্ঞাপন ও পোস্টের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে রেলওয়ে সচিব বলেন, কেউ কর্মচারীর পরিচয় দিলে সে যে কর্মচারী, তা তো নয়। এটি একটি প্রতারক চক্র। তারা টিকিট বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে টাকা নিয়ে পরে উধাও হয়ে যায়। তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে মন্ত্রণালয়কে জানাতে অনুরোধ করেন সচিব। তিনি বলেন, তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিনা টিকিটে যাত্রী ঠেকাতে তিন স্তরের তল্লাশিব্যবস্থা রাখা হয়েছে জানিয়ে ফাহিমুল ইসলাম বলেন, কমলাপুর স্টেশন থেকে খিলগাঁওসহ বেশ কয়েকটি পকেট গেট বা আইসিবি রয়েছে। এগুলো দিয়ে অনেক সময় বিনা টিকিটে যাত্রীরা উঠে পড়ে। সেসব জায়গায় কেউ যাতে বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠতে না পারে, তা দেখতে রেলের সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রেলসচিব আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে কমলাপুর স্টেশন, বিমানবন্দর স্টেশন, রাজশাহী স্টেশন ও চট্টগ্রাম স্টেশনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। এমনকি রেলযাত্রার বিষয়টি দেখভাল করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একজন অতিরিক্ত সচিবকে রেল পূর্বাঞ্চলে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৮ দফা নির্দেশনা: ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকাসহ সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে পুলিশকে আট দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নির্দেশনাগুলো হলো-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়ানো, টহল বৃদ্ধি, আবাসিক হোটেল ও বস্তিতে অভিযান পরিচালনা, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও দেশবিরোধী ধ্বংসাত্মক আন্দোলন ও সমাবেশে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা।
এ ছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও ভাড়া আদায় বন্ধ করা, কন্ট্রোল রুম স্থাপন, ঈদের আগের তিন দিন ও পরের তিন দিন পণ্যবহনকারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করা এবং মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অষ্টম সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সভায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ কওে বুধবার স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। এ ছাড়া ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাতে আইনশৃখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেটি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ঈদের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সড়কের নিরাপত্তা রক্ষায় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, কন্ট্রোল সেন্টারের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় জয়েন্ট অপারেশন সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ঈদের সময় ট্রাফিক, যানজট নিয়ন্ত্রণÑ যেমন পদ্মা সেতু ও যমুনা সেতুতে দ্রুত টোল আদায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিবহনকারী এবং সমুদ্রবন্দর, নৌবন্দর থেকে ছেড়ে আসা নির্মাণসামগ্রী বহনকারী লম্বা যানবাহনসমূহ ঈদের আগে তিন দিন ও পরের তিন দিন যেন মহাসড়কে চলাচল না করে, এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
ঈদের সময় লঞ্চ ও বাসে যেন বাড়তি ভাড়া আদায় ও অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা না হয়, সে বিষয়ে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, দখলবাজি ও সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতকারীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা বৃদ্ধি করা হবে।
ঈদের আগে গার্মেন্ট ও শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
নারী ও শিশু নির্যাতনকারীদের বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান আছে বলে উল্লেখ করেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা, এ বিষয়ে সরকারের জিরো টলারেন্স ও অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
মহাসড়কে নামল সেনাবাহিনী: ঈদকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি লাঘব এবং নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক ছাড়াও লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও নোয়াখালী জেলা সড়কের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লা সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ এবং সম্ভাব্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধে ডিভিশনের প্রায় তিন শতাধিক সেনাসদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
দুপুরে কুমিল্লার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে দায়িত্ব পালন করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ সময় তারা মহাসড়কের পাশে অবাধে যাত্রী উঠানামা ও অবৈধভাবে পার্কিং বন্ধ এবং মহাসড়কের উপর থেকে যেকোনো ধরনের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেন।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের এই যাত্রা যেন সুখকর হয় সেজন্য সেনাবাহিনী সব বাস মালিক সমিতি ও চালকদের ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে না নামানো এবং অধিক গতিতে গাড়ি না চালনোর অনুরোধ করছে। পাশাপাশি যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানো, অযথা লেন পরিবর্তন, ক্লান্তি নিয়ে গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকতেও সচতেন করা হচ্ছে পরিবহন শ্রমিকদের।
এ ছাড়া মহাসড়কের দুইপাশে যাতে ভাসমান দোকান বসিয়ে রাস্তা সংকীর্ণ না করা হয় সে বিষয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম, কুমিল্লা-সিলেট, কুমিল্লা- নোয়াখালী, কুমিল্লা-চাঁদপুর, কুমিল্লা-লক্ষ্মীপুর সড়কের পাশে অবস্থিত সব বাজার মালিক সমিতিকে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রায় বিঘ্ন ঘটে এমন কোনো কারণ প্রতিহত করতে সেনাবাহিনী তার ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করবে।
‘সমরে ও শান্তিতে সর্বত্র দেশের তরে’- লক্ষ্যকে সামনে রেখে সেনাবাহিনী অতীতে জনগণের পাশে ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকতে বদ্ধপরিকর বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
ঢাকা-বরিশাল নৌপথে বেড়েছে লঞ্চ: ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এসব লঞ্চ মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে চলাচল শুরু করেছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, ঈদযাত্রায় নৌপথে বাড়তি যাত্রীদের চাপ সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগে পালা করে প্রতিদিন দুটি লঞ্চ চললেও এখন তা বাড়িয়ে ৫-৬টিতে উন্নীত করা হয়েছে।
লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্যসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী জানিয়েছেন, তারা ঈদ উপলক্ষে রোটেশন বা পালাপ্রথা তুলে দিয়ে লঞ্চের সংখ্যা বাড়াচ্ছেন।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে শৃঙ্খলায় ৭ শতাধিক পুলিশ: ঢাকা-টাঙ্গাইল- যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ চাপ বেড়েছে। তবে স্বাভাবিক গতিতেই চলাচল করছে যানবাহন।
মঙ্গলবার যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, সেতুটি দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ হাজার ৯৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ২৬ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা।
এদিকে ঈদযাত্রায় যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে উত্তরবঙ্গগামী লেনের এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার।
মঙ্গলবার দুপুরে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, আগের তুলনায় মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। তবে গণপরিবহনের সংখ্যা কম লক্ষ্য করা গেছে।
মহাসড়কের সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদযাত্রার প্রথম দিনে মঙ্গলবার মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত সকাল থেকে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। যানজট নিরসনে মহাসড়কে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, মহাসড়ককে চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। বিকেল থেকে মহাসড়কে সাত শতাধিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল বলেন, ঈদযাত্রায় যমুনা সেতুর দুই পাশে নয়টি করে মোট ১৮ বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। এর মধ্যে দুই পাশেই মোটরসাইকেলের জন্য দুটি করে বুথ রয়েছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ