‘ওই কীরে কী, মধু, মধু... রসমালাই’ — তরমুজ বিক্রি করার সময় এই কথাগুলো বলে ‘ভাইরাল’ হয়েছেন বিক্রেতা রনি।
গত কিছুদিন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রনির তরমুজের দোকানে তাকে দেখা যাচ্ছে না।
তার ভাইয়ের দেওয়া নম্বরের মাধ্যমে রনির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, পুরান ঢাকায় আছেন; মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে আসবেন।
রনি বলেন, ’ভাইরাল’ (আলোচিত) হওয়ার পর এখন লুকিয়ে থাকছি। আমাকে দোকানে দেখলেই ইউটিউবাররা (যারা ইউটিউবে প্রচারের জন্য ভিডিও তৈরি করেন) ভিড় করেন। ভিডিও করতে চান। অনেক মানুষ ছবি তুলতে দোকানে যান। এতে আমার আর তরমুজ বিক্রি করা হয় না। পাশাপাশি আশপাশের বিক্রেতারা বিরক্ত হন। এ কারণে আমাকে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে।
রনি বলেন, দোকানদারেরা বলছে, ভাই আপনার জন্য তো আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আমি এখন দোকানে থাকতে পারতেছি না। আমার কষ্ট হোক, তবু আমার কারণে আমি কারো ক্ষতি চাই না।
রনির বাড়ি মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। কারওয়ান বাজারে প্রায় দেড় দশক ধরে মৌসুমি ফল বিক্রি করেন। তরমুজ বিক্রিতে হাতেখড়ি কিশোরকাল থেকে। তিনি জানান, তার দাদা ও বাবা তরমুজের ব্যবসা করতেন। তাদের কাছ থেকে কোনটি পাকা, অর্থাৎ ভেতরে লাল রং ধারণ করা তরমুজ, তা চিনতে শিখেছেন।
এবারের পবিত্র রমজান মাসে আশপাশের বিক্রেতাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তরমুজ বিক্রির সময় ক্রেতা আকর্ষণের জন্য ‘ওই কীরে কী, মধু, মধু...রসমালাই’ কথাটি বলতেন রনি। তখন তার হাতে থাকত সদ্য কাটা ভেতরে লাল টুকটুকে তরমুজ। তিনি বলেন, এটি দেখে একজন ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করেন। তারপরই তিনি ভাইরাল হন।
রনি বলেন, ভাইরাল হওয়ার পর শত শত ইউটিউবার ও উৎসুক ব্যক্তি আমার দোকানে আসেন। তরমুজ বিক্রি ও কেটে দেখানোর ভিডিও করা শুরু করেন। একপর্যায়ে ইউটিউবার ও উৎসুক মানুষের ভিড়ের চাপে দোকানে ক্রেতা আসা কমে যায়। আশপাশের দোকানদারেরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন।
রনি আরো বলেন, একপর্যায়ে আমার ভাই আমাকে দোকানে আসতে নিষেধ করেন।
রনির দোকানের পাশেই দীর্ঘদিন ধরে লেবু বিক্রি করছেন জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান, রনি ভাইরাল হওয়ায় আমারও ক্ষতি হয়েছে। আগে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার লেবু বিক্রি করতাম। এখন ৫০০টি বিক্রি করতেই কষ্ট হয়।
ভাইরাল হওয়ার পর কিছু প্রতিষ্ঠান রনিকে তাদের বিজ্ঞাপনে নিয়েছে। বিজ্ঞাপন করে কত টাকা পেয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রনি বলেন, ‘সবাই আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমাকে মোবাইল ফোন গিফট করবে বলে একটি দোকানে নিয়ে বিজ্ঞাপন করে ছেড়েছে, কিন্তু আমাকে কিছুই দেয়নি। ডেকে নিয়ে তারা আমাকে টাকা দেয়নি, বরং নাটক করেছে।’
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভর্তি সহায়িকার বিজ্ঞাপনেও নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করে রনি বলেন, ‘তারা বিজ্ঞাপন করেছে পুরস্কার দেবে বলে। কিন্তু পরে তারা ভাইগ্যা গেছে। আর কিছুই দেয়নি। যদিও আমি কারো কাছে টাকা চাই না।’
রনি বলেন, ‘শুধু পিৎজা বার্গ আমার কাছ থেকে কিছু তরমুজ কিনেছে। আর বাকি সবাই প্রতারণা করেছে। আমি ট্যাকাপয়সা চাই না দাদা, আমি চাই ভালোবাসা।’
আমারবাঙলা/এমআরইউ