চাকা পৃথিবীর একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। প্রায় ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নিওথিলিক এবং ব্রোঞ্জ যুগের মধ্যে পরিবর্তনের সময় কাঠের তৈরি ছিদ্র অক্ষ যুক্ত চক্র বা চাকার দেখা পাওয়া যায়। যদিও প্রাচীনতম চাকাটি মেসোপটেমিয়াতে আবিষ্কৃত হয়েছিল। তবে এটি পরিবহনের জন্য নয়, বরং মাটির পাত্র তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। চাকা, এক্সেলের সাথে যুক্ত হয়ে প্রাথমিক ধীরগতির যানবাহন থেকে দ্রুত গতির যানে রূপান্তরিত হয়েছে।
মানুষ প্রতিনিয়ত চলার পথকে সহজ করার জন্য চাকাযুক্ত নিত্যনতুন যান আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে দূরবর্তী স্থানগুলো কাছাকাছি আসতে থাকে। দূরত্ব কমতে থাকে গ্রাম থেকে গ্রামের, শহর থেকে শহরের, দেশ থেকে দেশের, মহাদেশ থেকে মহাদেশের, গ্রহ থেকে গ্রহের।
প্রাচীনকালে মানুষ ও পশু উভয়ই দেহের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। অর্থাৎ ফল পাড়তে পশু ও মানুষ উভয়কেই গাছে উঠতে হতো। কিন্তু মানুষ যখন ঢিল ছুড়ে ফল পাড়তে শুরু করলো, তখন সে দূরের জিনিসকে সহজেই কাছে আনতে সক্ষম হল। মানুষকে আর গাছে না উঠলেও চলে কিন্তু পশুকে এখনও গাছে উঠেই ফল পাড়তে হয়। পশু দূরের বিষয়কে এখনও কাছে আনতে পারেনি। আর মানুষ - গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ফল পাড়া থেকে যে দেহ বা শরীরের ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছিল, তা আজ হাজার হাজার মাইল তথা মহাশূন্য, গ্রহ, নক্ষত্রের বিভিন্ন অভিযান, মিসাইল হামলা, মহাশূন্য থেকে ভোট দেওয়া সবই ইন্টারনেটের মধ্য দিয়ে ঘরে বসেই সম্পন্ন করছ।
এভাবে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ প্রযুক্তির উত্তোরণের ফলে মানুষ তাঁর শরীরের ঊর্ধ্বে উঠে মস্তিষ্ক বা বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে ও যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছে। যোগাযোগের মধ্য দিয়ে যেমন পারস্পরিকতা বা সামাজিকতা তথা সমাজ গড়ে ওঠে, ঠিক তেমনি যোগাযোগের সূত্র ধরে সমগ্র পৃথিবীটাই এক মানবসমাজে পরিণত হয়েছে। এই মানব সমাজে পৃথিবী নামক একটাই গ্রাম আছে। সেই গ্রামে একটাই
চন্দ্র, সূর্য মহাশূন্য আছে। তাই কোনো দেশই আজ এই মানবসমাজের বাইরে নয় বা থাকা সম্ভবও নয়। এই মানবসমাজের ভালো- মন্দের উপর সব দেশের ভালো-মন্দ নির্ভরশীল(করোনার মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত)। তাই সমগ্র বিশ্বের প্রত্যেক মানুষকেই বিশ্ব নাগরিক বোধে আসা উচিত। একজন নাগরিকের যেমন দেশের প্রশ্নে কিছু কর্তব্য থাকে,তেমনিভাবে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে আমাদের সেই ধরনের বোধ আসা উচিত। সর্বোপরি পৃথিবী নামক গ্লোবাল ভিলেজ তথা বৈশ্বিক এই গ্রামকে স্বাগতম।