ভোলা প্রতিনিধি: ভোলায় ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ মেলা এবং ৮ম বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে ঢল নেমেছে দর্শনার্থী ও ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের।
বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রচেষ্টায় উদ্ভাবন করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক যন্ত্রপাতি, যা ব্যবহারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের বিজ্ঞান বিষয়ে ধারণা বিকশিত হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে এবং উপজেলা প্রশাসন ২ দিন ব্যাপী এ অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে এর ঘটে।
আয়োজকরা বলেন, এমন মেলার মাধ্যমে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা খাটিয়ে আরও বেশি এগিয়ে যাবে এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আগ্রহ পাবে। যার মধ্যমে তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটবে।
কেউ তৈরি করেছে লাইফবোট, কেউ গ্রীণ হাউজ, ওয়াটার এলাম, পানি-বাতাস দূষণ বা ও ট্রেন দুর্ঘটনা রোধের সংকেত যন্ত্র। স্রোতের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ফসলের ক্ষেত থেকে ক্ষতিকর পোকামাকড় দূর করার যন্ত্রও আবিস্কার করেছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
এ যেন ক্ষুদে বিজ্ঞানিদের মেলা। যা দেখতে ভীড় জমাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
এ বছর মেলার প্রতিপাদ্য ছিল- 'বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত উদ্ভাবনেই সমৃদ্ধি'। বিজ্ঞানের এসব উদ্ভাবন ব্যবহারের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও সহজ হবে বলে মনে করছে শিক্ষার্থীরা।
ভোলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অংশ নেয়া ক্ষুদে বিজ্ঞানী ছামিউল ইসলাম জানায়, আমার প্রজেক্টের নাম “রিভার ক্লিনার এক্সপ্রেস”। এটি নৌপথে চলাচল করা বিভিন্ন যানবাহনের সাথে থাকবে। এর মাধ্যমে নদীর মধ্যে থাকা পলিথিন, বোতল, কচুরিপানাসহ বিভিন্ন ময়লা পরিষ্কার হবে এবং নদী দূষণ কমে আসবে।
ভোলা এ রব মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অংশ নেয়া রাহাত জানায়, আমি নৌপথে লঞ্চ দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য একটি প্রজেক্ট নিয়ে এসেছি। যেহেতু ভোলা একটি দ্বীপ জেলা। এই জেলার সাথে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে লঞ্চ।
ঝড়ের কবলে পড়ে এই লঞ্চগুলো অনেক সময় দুর্ঘটনার স্বীকার হয়। তাই লঞ্চ দুর্ঘটনা থেকে যাত্রী ও লঞ্চকে রক্ষা করতে আমার এই প্রজেক্ট কাজ করবে।
ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইলমি জানায়, আমরা বন্যপ্রাণী রক্ষা ও ট্রেন দুর্ঘটনার হাত থেকে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে একটি প্রজেক্ট নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশে এমন কিছু জায়গা আছে, যেখানে বনের মধ্যে দিয়ে ট্রেন লাইন গিয়েছে। যেমন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।
এখানে অনেক প্রাণী এসে দল বেঁধে ট্রেন লাইনের উপর থাকয় ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ে মারা যায়। তাই আমাদের এই প্রজেক্টের মাধ্যমে ট্রেনের বিকট শব্দ পেয়ে সেন্সারের মতো কাজ করবে। তখন প্রাণীরা ট্রেন লাইনের উপর থেকে সরে যাবে।
এতে প্রাণীদের জীবন সুরক্ষার কাজ করবে। এছাড়া বাংলাদেশের রেল লাইনের লেভেল ক্রসিং পদ্ধতিটি সনাতন। আমাদের এই ডিভাইসের সেন্সরের মাধ্যমে আগে থেকেই এলার্ম ও লাইট জ্বলে উঠবে।
মানুষের সহযোগিতা ছাড়াই এটি নিজে নিজেই রাস্তা বক্ল করে দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে সহযোগিতা করবে।
গতকাল মেলার প্রথমদিন বিপুল সংখ্যক মানুষের ঢল নামে। মেলা দেখতে এসে অনেকেই নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎসাহ পেয়েছেন।
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকল্প নেই। এ ধরনের মেলার মাধ্যমে অনেকেই বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হবে। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় আকৃষ্ট করতে আমাদের এমন আয়োজন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। তার এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।
সে কারণে আমরা বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করেছি। এ মেলা থেকে শিক্ষার্থীরা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিজেদেরকে তৈরি করতে পারবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন কলেজ ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সাংবাদিকবৃন্দ। এবারের মেলায় ১৭ টি স্টল স্থান পেয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা এতে অংশগ্রহণ করে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারা মেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরছে।
মেলায় পরিবেশ দূষণ, উপকূলীয় বেড়িবাঁধ রক্ষা, নদীভাঙ্গন রোধ, পানি পরিশোধন, স্যাটেলাইট শহর প্রতিষ্ঠা, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, যানজট নিরসনসহ সমসাময়িক নানা সমস্যা সমাধানের কৌশল নিয়ে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি মেলায় উপস্থাপন করে ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা।
এবি/এইচএন