মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে কর্মরত ডেপুটি হাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীরকে মালয়েশিয়ায় দেখতে চান না প্রবাসীরা। একাধিক দুর্নীতি, আওয়ামী ঘনিষ্ঠতা ও প্রবাসীদের হয়রানির অভিযোগে তাকে দ্রুত হাইকমিশন থেকে প্রত্যাহার ও বিচারের দাবি করেছেন তারা।
৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের বিশ্বস্ত এই আমলাকে প্রবাসীদের দাবির প্রেক্ষিতে পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হিসেবে বদলির অর্ডার করা হয়। পরে সমালোচনার মুখে সেই বদলীর আদেশও বাতিল করে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র তৌফিক হাসান এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তারপর এখনও বহাল তবিয়তে তিনি আছেন মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে। অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে চেষ্টা করছেন স্বপদে বসে থাকতে।
এদিকে, অসংখ্য অভিযোগের পরেও মালয়েশিয়াতে এখনো ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এই আমলা। সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছের লোক হলেও বর্তমান সময়ে তার খুঁটির জোর কোথায়, কেনই বা তাকে দেশে ফেরত নিয়ে আইনের আওতায় নেওয়া হচ্ছে না-- এমন প্রশ্ন বেশিরভাগ মালয়েশিয়া প্রবাসীর কণ্ঠে।
ছাত্র জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষ নেয়া খাস্তগীরের কুয়ালালামপুরের থার্ড পার্টি অফিস ইএসকেএল থেকে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশেস্থ অফিসের কিছু অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজসে পাসপোর্টের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রবাসীদের ক্ষেপিয়ে তুলে ফ্যাসিবাদি হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা রাজনীতিবিদদের সুরে ছাত্র জনতার আন্দোলনকে কটাক্ষ করেন। যার প্রমান পাওয়া যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের হোয়াটসআপ গ্রুপ বিএফএসএ (BFSA) তে।
বিএফএসএ গ্রুপে মালেয়শিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীরকে অত্যন্ত নেতিবাচক মন্তব্য করতে দেখা যায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয়ে।
খাস্তগীর মালয়েশিয়ায় ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে খুশি করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে প্রতিবাদকারী বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
তিনি ওই সময় অন্দোলনকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেন এবং পরে তার তত্ত্বাবধানে কুয়ালালামপুরের কাজাং থানায় মামলাও করা হয়।
এ ছাড়া পররাষ্ট্র ক্যাডারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএসএ) হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ফাঁস হওয়া চ্যাটে দেখা যায়, খোরশেদ আলম খাস্তগীর প্রবাসে যারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিলেন তাদের পাসপোর্ট বাতিলেরও সুপারিশ করেছিলেন।
খাস্তগীরের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের সংবাদ প্রকাশ করলে ডিবিসি নিউজ এর মালয়েশিয়া প্রতিনিধি মো: মনিরুজ্জামানকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
মালয়েশিয়ায় প্রবাসী অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী খোরশেদ আলম খাস্তগীর জুলাই বিপ্লবে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের হুমকি দিয়েছিলেন জেলে ভরার। খুনী হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করায় মামলাও করেছিলেন। সেই খাস্তগীর এখনো প্রবাসীদের নানাভাবে হয়রানি করে যাচ্ছেন। হুমকি-ধামকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমরা প্রবাসীরা অতি দ্রুত এই দুর্নীতিবাজকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচার করার দাবি জানাচ্ছি।’
আমার বাঙলা/ এসএ