প্রবাসীদের ঘামে ঝরানো উপার্জনের প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মালয়শিয়ায় পাসপোর্ট ও ভিসা সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এক্সপাট সার্ভিস কুয়ালালামপুর-ইএসকেএল। নিয়মবহির্ভূতভাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর গত আট মাসে এই টাকা প্রবাসীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত আদায় করেছে তারা। দৈনিক আমার বাংলার হাতে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত সকল নথি এসেছে।
জানা গেছে, ই-পাসপোর্ট ও ভিসা সার্ভিসের জন্য গত বছর কুয়ালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন, ইএসকেএল এর সঙ্গে কোনোরকম নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করেই এক বছরের চুক্তি করে। ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর চুক্তি হলেও ইএসকেএল কাজ শুরু করে এ বছর ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে। তারপর থেকেই হাইকমিশনের অসাধু কর্তাব্যক্তিদের যোগসাজশে একের পর এক অনিয়ম করতে থাকে ইএসকেএল। এর মধ্যে অন্যতম প্রবাসীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়। সেবার জন্য নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ অর্থ আদায় করছে তারা।
দৈনিক আমার বাংলার হাতে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন এর মে-ব্যাংক এর হিসাবে জমাকৃত টাকার ট্রানজেকশন কপি এসেছে। পাশাপাশি প্রবাসীদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থের প্রমাণ এসেছে। এ দুটো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সেবা প্রদান শুরু করার পর গত ৮ মাসে ইএসকেএল প্রায় ১০ কোটি টাকার সমপরিমান অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছে। প্রবাসীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা এখনো চলমান।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, এর বাইরেও ইএসকেএল নানান অবৈধ উপায়ে প্রবাসীদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সম্প্রতি দৈনিক আমার বাংলায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর, প্রতিষ্ঠানটিতে বিতর্কিত ডকুমেন্ট নষ্ট করা হয়েছে। ডকুমেন্ট নষ্ট করার ভিডিও ফুটেজও এসেছে আমার বাঙলার হতে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ইএসকেএল এর বিরুদ্ধে আরো রয়েছে নানা অভিযোগ। নিয়মিত প্রবাসীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে থাকে ইএসকেএল এর নিরাপত্তাকর্মীরা। এমনকি প্রবাসীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ড ও মার্কেটিং কর্মকর্তা আরমান পারভেজ মুরাদকে।
ইএসকেএল এর এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা লিখিত অভিযোগও জানয়েছেন বাংলাদেশ হাইকমিশনে। তবে কোনো প্রতিকার পাননি।
গত ১৬ই জুলাই ইএসকেএল এর এসব অনিয়মের কথা মন্ত্রনালয়ে চিঠি লিখে জানিয়েছেন হাইকমিশনের কাউন্সেলর মিয়া মোহাম্মদ কেয়ামউদ্দিন। সেই চিঠিতে ইএসকেএল-এর আর্থিক কেলেঙ্কারির উল্লেখও আছে। তবে এখনো মন্ত্রনালয় থেকে এ ব্যাপারে কোনো অ্যাকশন নেয়া হয়নি।
গত ৩০ অক্টোবর হাইকমিশনের পাসপোর্ট সংক্রান্ত এক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কুয়ালালামপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছে প্রবাসী অধিকার পরিষদ। সেখানেও তারা ইএসকেএল এর স্বেচ্ছাচারিতার সমালোচনা করেছেন। হাইকমিশন এবং ইএসকেএল এর এই যৌথ অনিয়ম বন্ধ না হলে রেমিটেন্স শাট ডাউনের হুমকি দেন তারা।
তারা বলেন, ইএসকেএল-কে সুবিধা করে দিতে হুট করে এমআরপি পাসপোর্ট দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে হাইকমিশনের অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত বলে তাদের দাবি।
এ প্রসঙ্গে আমার বাঙলার পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন ইএসকেএল মার্কেটিং ব্যবস্থাপক আরমান পারভেজ মুরাদ।
আমার বাঙলা/ এসএ