ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ সামনে আসছে। এবার খোদ যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন এমন রেকর্ড সামনে এসেছে। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর যে হলফনামা দিতে হয় তাতে বাংলাদেশে নিজের মালিকানায় থাকা ফ্ল্যাট নিয়ে ওই প্রতারণার আশ্রয় নেন টিউলিপ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়া শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের দুর্নীতির সঙ্গে তার জড়িত থাকার প্রমাণ সামনে আসে। এতে দলের ভেতর-বাইরে চাপে পড়েন টিউলিপ। শেষমেশ বাধ্য হয়ে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
ওই পদে তার কাজ ছিল যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। কিন্তু নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশ-বিদেশে কোণঠাসা হয়ে পড়েন টিউলিপ; পদত্যাগের পরও এর প্রভাব বিদ্যমান। সে সঙ্গে শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। সেসব তদন্তে নামে দুদক। প্রাথমিকভাবে যার প্রায় সব কটিরই বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পায় সংস্থাটি। এখনও তদন্ত চলমান।
ব্রিটিশ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমও টিউলিপকে নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেসব প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির সঙ্গে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের যোগসূত্র স্পষ্ট।
ডেইলি মেইল শনিবার (৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে জানায়, সাবেক নগরমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক তার জন্মভূমি বাংলাদেশে একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করেছেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুরোধে রাজধানী ঢাকার ছয় লাখ পাউন্ড মূল্যের অ্যাপার্টমেন্টটি জব্দ করেছে সরকার। এ নিয়ে লেবার এমপির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
৪২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক কোনো অন্যায় করেননি দাবি করে মেইলকে জানান, ২০০২ সালে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে উপহার হিসেবে ফ্ল্যাটটি পেয়েছিলেন। ২০১৫ সালের মে মাসে সংসদে নির্বাচিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ‘আইনসম্মত এবং বৈধভাবে’ সেটি তার বোন আজমিনাকে (৩৪) হস্তান্তর করেন।
ওয়েস্টমিনস্টারের নিবন্ধন বহিতে বলা হয়েছে, তিনি ২০১৫ সালের জুন মাসেও পরিবারের একজন সদস্যের সঙ্গে সম্পত্তিটির সহমালিকানাধীন ছিলেন। পরের মাসের মধ্যেই মালিকানা হস্তান্তর করেন।
কিন্তু গত সপ্তাহে ঢাকা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে মেইল কর্তৃক অনুসন্ধানে দেখা যায়, টিউলিপ এখনো ফ্ল্যাটটির মালিক; যেমনটি দুদকের অভিযোগও বলা হয়েছে। এটি কার মালিকানাধীন, এখন সিদ্ধান্ত নেবেন বাংলাদেশের আদালত।
গত মাসে দুদক জানিয়েছে, টিউলিপ ২০১৫ সালে হেবার মাধ্যমে ফ্ল্যাটের মালিকানা আজমিনার কাছে হস্তান্তর করার চেষ্টা করেছিলেন। হেবা একটি ইসলামিক দলিল, যা ভালোবাসার বশবর্তী হয়ে পরিবারের সদস্যের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তরের অনুমতি দেয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশি আইন অনুসারে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সম্পত্তির মালিকানা পরিবর্তন না করা পর্যন্ত সম্পত্তি হস্তান্তর বৈধ বলে বিবেচিত হয় না।
দুদক দাবি করেছে, হেবা করার যে দাবি করা হচ্ছে তাও জাল। কারণ, যে ব্যারিস্টারের মাধ্যমে এটি করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে তিনি এতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, তার স্বাক্ষর জাল করে দলিল করার করা হয়েছে।
তবে টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবীরা বলেছেন, হেবার আইনটি সঠিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে। তার প্রতিনিধিরা দুদকের অভিযোগগুলো মিথ্যা এবং বিরক্তিকর বলে অভিহিত করেন।
দুদকের দাবি, পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে প্রায় ৬০ কাঠা (এক একর) সরকারি জমি শেখ হাসিনা, তার সন্তান ও নিকটাত্মীয়দের নামে অবৈধভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
টিউলিপের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে যে, ঢাকায় তার অন্য একটি সম্পত্তি থাকার কারণে জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে তিনি অযোগ্য ছিলেন। তবে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিয়মকানুনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে এই মূল্যবান জমি বরাদ্দ নেন। এ জন্য তারা পাবলিক লটারি এবং যোগ্যতার মানদণ্ড এড়িয়ে গেছেন, যা মূলত সরকারি কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত ছিল।
এদিকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে প্রচার চালাচ্ছেন ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ এ কাজ চাতুরতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে নিয়োগ করেছেন আইনজীবী। সেই আইনজীবীদের তরফে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদককে) একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এমন তথ্য মার্চের শেষ দিকেই জানিয়েছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এপ্রিলের শুরুতে আইনজীবী নিয়োগের বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করেন টিউলিপ। এরপর থেকে টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন তার আইনজীবীরা।
আমারবাঙলা/এমআরইউ