বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে বেরিয়ে নতুন ছাত্রসংগঠন করতে যাচ্ছে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের একটি অংশ। এ ছাত্রসংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে আজ বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি)। এদিন বিকাল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আল মাশনুন নামের এক শিক্ষার্থী এ তথ্য জানান। নতুন এই ছাত্রসংগঠনের সম্ভাব্য নাম হিসেবে আলোচনায় রয়েছে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’।
সূত্র জানায়, সংগঠনটির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সমন্বয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল বা মূল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকবে না। দলটি কোনো লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে জড়িত হবে না। কোনো ‘মাদার সংগঠনে’র অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন বা কোনো রাজনৈতিক দলের কথামতো তারা সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে না।
বলা হচ্ছে সংগঠনটির আয়ের উৎস হবে অভ্যন্তরীণ নেতাকর্মীদের মাসিক চাঁদা। প্রয়োজন মাফিক শুভাকাঙ্ক্ষীদের থেকেও অনুদান সংগ্রহ করা হতে পারে।
সংগঠনটির নির্বাচনে ‘টপ টু বটম’ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। তা ছাড়া সংগঠনের সম্ভাব্য কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী বয়স নির্ধারিত থাকবে। কোনো শিক্ষার্থী সংগঠনটিতে আসতে চাইলে তার বয়স সর্বোচ্চ ২৮ হতে পারবে। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির ক্ষেত্রে তার অনার্সে ভর্তির পর থেকে সাত বছর সময় হতে পারবে। তার মানে ছাত্র ব্যতীত কেউ এ সংগঠনের কমিটিতে আসার সুযোগ পাবে না।
তা ছাড়া মূলধারার রাজনৈতিক পরিসরে নারীদের যে অনুপস্থিতি রয়েছে সেটিকে চিহ্নিত করে নারীর রাজনৈতিক মানদণ্ড বিনির্মাণ করা, রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ তৈরি করা এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নারীবান্ধব করে তোলার মাধ্যমে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান সুযোগের সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সংগঠনটি কাজ করে যাবে বলেও প্রত্যাশা রাখেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এই ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে থাকছেন কার্যক্রম স্থগিত হওয়া ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র সাবেক নেতারা। তাদের পাশাপাশি এই সংগঠনের সঙ্গে আরো যুক্ত হচ্ছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগী এবং আওয়ামী লীগের শাসনামলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বাধ্য হয়ে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া কোনো না কোনোভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ততা ছিল, এমন শিক্ষার্থীদেরও কেউ কেউ নতুন সংগঠনে থাকছেন।
ঘোষণা দেওয়ার আগে মঙ্গলবার রাতে নতুন ছাত্রসংগঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছাত্রনেতারা নিজেদের মধ্যে একটি বৈঠক করেন। সেখানে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্ব ঠিক করা হয়েছে বলে একাধিক জানিয়েছে।
নতুন ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হচ্ছেন আবু বাকের মজুমদার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী। তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব ছিলেন।
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব হচ্ছেন সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলের সম্পাদক জাহিদ আহসান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। জাহিদ একসময় ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক ছিলেন।
এ ছাড়া নতুন ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখ্য সংগঠক হচ্ছেন তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী আর মুখপাত্র হচ্ছেন আশরেফা খাতুন। তারা দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
নতুন ছাত্রসংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্বও চূড়ান্ত হয়েছে অভ্যন্তরীণ বৈঠকে। সূত্র বলছে, সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক হচ্ছেন সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। কাদেরের সঙ্গে সদস্যসচিব হিসেবে থাকছেন মহির আলম। কাদের ও মহির দুজনই ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। কাদের আগে ছাত্রশক্তির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আর মহির ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কোনো পদে ছিলেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখ্য সংগঠক হচ্ছেন হাসিব আল ইসলাম আর মুখপাত্র হচ্ছেন রাফিয়া রেহনুমা হৃদি। দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই দুই সমন্বয়ক গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তিরও নেতা ছিলেন।
অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) বিকাল ৩টায় জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে নতুন রাজনৈতিক দলে ঘোষণা আসবে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ