আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি দিন কিংবা একদিন আগে-পরে শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসতে পারে। দল ঘোষণাকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতিও শেষ করেছে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের প্ল্যাটফরম জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণ করতে প্রস্তুতি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ১৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যে কোনো দিন আমাদের দলের ঘোষণা আসতে পারে। তবে এখনো কোনো তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। তবে আমরা একটি প্রস্তুতি কমিটি করেছি, তারা দলের আত্মপ্রকাশকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ও সামগ্রিক কাঠামো সম্পর্কে জানা গেছে, দল ঘোষণা উপলক্ষে জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাইদের বাড়ি থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের শহীদ ওয়াসিমের বাড়ি পর্যন্ত লংমার্চ করা হবে। দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর দেশব্যাপী ১৫ দিনের এ লংমার্চ করা হবে। দলের নাম এখনো চূড়ান্ত না হলেও প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি এবং ঈদের পর কাউন্সিলের মাধ্যমে দলীয় কাঠামো চূড়ান্ত করা হবে। আহ্বায়ক কমিটি হওয়ার পরেই নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জনের জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলায় প্রয়োজনীয় কাঠামো নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে রাজনৈতিক দলের নাম চূড়ান্ত করতে ইতোমধ্যে জনমানুষের প্রত্যাশা জানতে সপ্তাহব্যাপী ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আগামী দুই দিনের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের মতামত সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।
নাগরিক কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নতুন দলের নেতৃত্বে আসছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এ ছাড়া সম্ভাব্য সদস্য সচিব পদে আলোচনায় আছেন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ। এর বাইরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন, যুগ্ম সদস্য সচিব মাহবুব আলম ও অনিক রায় আহ্বায়ক কমিটিতে শীর্ষ নেতৃত্বে আসছেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
এদিকে রাজনৈতিক দলের ঘোষণার পাশাপাশি ছাত্র সংগঠনেরও ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। প্রাথমিকভাবে ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার এবং আব্দুল কাদের ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া সমন্বয়ক রশিদুল ইসলাম রিফাত, হাসিব আল ইসলাম এবং জাহিদ আহসানও নেতৃত্বে আসতে পারেন। কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ঘোষণার পরে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, জেলায় নতুন ছাত্র সংগঠনের কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রনেতারা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, বৈষম্যবিরোধীদের সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা হচ্ছে। এই দলের ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র ও দলের নাম চূড়ান্তসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ এখনো চলমান। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা এই দুই প্ল্যাটফর্মের সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিল তাদের সমন্বয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করা হচ্ছে। দল গঠনে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শসহ নানা বিষয়ে দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে দল আত্মপ্রকাশে আসতে পারে। দলের বিভিন্ন দিক নিয়ে দেড় শতাধিক সদস্য কাজ করছেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির দপ্তর সম্পাদক মনিরা শারমিন বলেন, দলের নাম এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। দলের গঠনতন্ত্র ও নাম চূড়ান্তের কাজ চলছে। ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে কাজ শেষ হলে দল আত্মপ্রকাশে আসতে পারে। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে অনলাইনে দেশের মানুষের কাছে দলের নাম, প্রতীক চেয়েছে এবং পাশাপাশি দেশের মানুষের মতামত চাওয়া হয়েছে।
নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার কারণে নীতিনির্ধারণী নেতারা চাচ্ছেন ছাত্র উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে কেউ একজন দলের হাল ধরুক। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত হলো তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম যেন নতুন দলের আহ্বায়ক হন। আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই সবকিছু জানা যাবে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ