বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় আসে বিএনপি ও জামায়াত। এদিকে খুলনা জেলা বিএনপিতে স্থান পেতে তোড়জোড় শুরু করেছেন অনেকে।
এরই মধ্যে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করা , দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগে খুলনা জেলা এবং মহানগরের শতাধিক নেতাকর্মীকে শোকস ও বহিষ্কার করা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় জেলা কমিটি। তবে চাঁদাবাজি ও দখল বাণিজ্য নয়, কর্মীদের সুখ-দুঃখ বুঝবে এমন নেতা চান দলসংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, খুব দ্রুত ঘোষণা হতে যাচ্ছে জেলা কমিটি। কেমন হতে চলেছে খুলনা জেলা বিএনপি কমিটি এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা এখন তুঙ্গে। তবে নেতাকর্মীদের মুখে আলোচনায় সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে একাধিক নেতার নাম।
এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। তবে নতুন কমিটিতে কারা জায়গা পাবেন তা নিয়ে চলছে যাচাই-বাছাই। আর দল ও নেতাকর্মীদের কাছে যাদের ক্লিন ইমেজ রয়েছে তাদেরই নতুন কমিটিতে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া, খুলনা জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব আসতে পারেন। দু-এক সপ্তাহের মধ্যে জেলার নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে।
জানা গেছে, নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে নানামুখী তৎপরতা, তদবির, জল্পনা-কল্পনা চলছে। বিএনপির খুলনা জেলাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে যারা সক্রিয়, তারা নিজ নিজ বলয় থেকে নেতৃত্ব উঠিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তারা। একই সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও তার নিজস্ব চ্যানেলে যোগ্য ও ক্লিন ইমেজের নেতৃত্বের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
তবে খুলনার হেভিওয়েট দুই নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল ও আজিজুর বারি হেলাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের আস্তাভাজন হওয়ায় এই দুইজনের হাত ধরেই যোগ্য প্রার্থী ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব নির্বাচিত হতে পারে বলে ধারণা বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, তারেক রহমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চান। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সম্পূর্ণ ক্লিন ইমেজের নেতাদের দিয়ে জেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করতে চান তিনি।
তাদের মতে, আগের কমিটি নিয়ে খুলনার নেতাকর্মীদের মাঝে অনেক আলোচনা-সমালোচনা শুনা গেলেও বর্তমান কমিটি হবে ক্লিন ইমেজের গ্রহণযোগ্য একটি কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা জেলা বিএনপির নতুন কমিটিতে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তার মধ্যে আহ্বায়ক বা সভাপতি হিসেবে অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলামের এর নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। তিনি সাবেক জেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক খান জুলফিকার আলী জুলু, সাবেক জেলা বিএনপির সদস্য মনিরুজ্জামান মন্টু, সাবেক জেলার আহ্বায়ক আমির এজাজ খানের নামও শুনা যাচ্ছে।
এ ছাড়া সদস্য সচিব বা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় শীর্ষে রয়েছেন সাবেক জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক আবু হোসেন বাবুর নাম । সদস্য সচিব হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী, সাবেক যুগ্ম আহবায়ক কেএম আশরাফুল আলম নান্নুও।
সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম বলেন, এখনো কিছু বলতে পারছি না। তবে কেন্দ্র থেকে যাকে দিবে তার হয়ে কাজ করব ।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আবু হোসেন বাবু বলেন, আমাদের প্রাণের নেতা আদর্শের প্রতীক তারেক রহমানের আদর্শে আমি দল করছি। আওয়ামী লীগের আমলে হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েও নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। কখনো দখলবাজি ও চাঁদাবাজির রাজনীতি করিনি। দীর্ঘ ১৭টি বছর বাড়িতে ঘুমাতে পারিনি। এতকিছুর পরও মিছিল মিটিং থেকে শুরু করে সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের আনাগোনায় মুখর রেখেছি জেলা বিএনপিকে। সব সময় চেষ্টা করেছি কর্মীদের পাশে থাকতে। তবে আমার কার্যক্রমে যদি আমাদের নেতা যুবসমাজের আইকন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চান; তাহলে আমি আমার জেলার দায়িত্ব পালন করে একটি মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তুলবো। তবে যাকেই দল সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করবে তার হয়ে কাজ করবো আমরা।
জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, আমাদের ব্যক্তিগত কোন চাওয়া-পাওয়া নেই কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত নিবে সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা কাজ করবো। সেখানে আমাকে যদি সভাপতি পদ দেওয়া হয় তাহলে আমি তার যোগ্য প্রমাণ দিব।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কেএম আশরাফুল আলম নান্নু বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাকে যোগ্য বলে মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দিবেন। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের হামলা মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি সর্বদায়িক জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশে রয়েছি যদি আমাদের খুলনার বকুল ভাই, হেলাল ভাই, মনা ভাইসহ নেতারা যদি চান আমাকে দায়িত্ব দিবেন তাহলে আমি আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করব।
জেলা সাবেক সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী বলেন, আমাদের একটি আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়। আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ ছিল তিন মাস। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হামলা মামলা নির্যাতনের কারণে আমরা সম্মেলন করতে পারিনি। আর এ কারণেই তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি দুই বছর নয় মাস ১২ দিন আমরা কমিটিতে থাকার পর আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জেলা কমিটি ভেঙে দেন। আমরা সেই সময় থেকে দলকে সংগঠিত করার জন্য হামলা মামলার শিকার হয়েও কখনো পিছুপা হয়নি। আগামীতে যদি আমার নেতা আমাকে আবার খুলনা জেলার দায়িত্ব দেয় তাহলে আমি নতুনভাবে জেলাকে সাজাবো এবং যদি আমাকে দায়িত্ব না দেওয়া হয় তবে যাকে দায়িত্ব দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব, দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখবো।
সাবেক জেলার আহবায়ক আমির এজাজ বলেন, আমার জীবনের সবটুকু সময়ই আমি বিএনপির রাজনীতিতে ব্যয় করেছি। আমার বিরুদ্ধে শুধু খুলনায় নয় ঢাকাতেও মামলা দেওয়া হয়েছে বছরের অধিকাংশ সময়ই জেলে কাটিয়েছি। মামলা ও পুলিশের ভয়ে কখনো বাসায় ফিরতে পারিনি। নেতাকর্মীদের সুখ-দুঃখে পাশে রয়েছে। সুতরাং আমি আশা করি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার সুদৃষ্টি আমার উপর রাখবেন। তবে ভুঁইফোর এবং সুবিধাবাদীর নেতাদের স্থান হবে না কমিটিতে এমনটাই প্রত্যাশা করেন এই নেতা।
জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম মনা বলেন, আমাদের ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতা রক্ষার্থে আমাদের নেতা তারেক রহমান আগে থেকেই বলে দিয়েছেন। কোনো চাঁদাবাজ দখলবাজ এবং দুর্নীতিবাজদের স্থান হবে না কোনো কমিটিতে। আমাদের ভারপ্রাপ্তের চেয়ারম্যান তারেক রহমান জেলা এমন একটি কমিটি দিবেন, যে কমিটিতে কোন চাঁদাবাজ দুর্নীতিবাজ লুটেদের স্থান হবে না। যারা আগামীতে খুলনা জেলার রাজনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে এমন একটি কমিটি আমরা চাই। ইতিমধ্যেই নানা অপরাধে জেলা ও মহানগরের প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে আমরা বহিষ্কার ও নোটিশ দিয়েছি।
আমারবাঙলা/আরইউ