অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হতে বের হলো ঢাকার সরকারি ৭ কলেজ। আলহামদুলিল্লাহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়। তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি, অধিভুক্ত সরকারি ৭ কলেজ (২ লাখের অধিক শিক্ষার্থী) চালানোর মতো প্রশাসনিক ও আধুনিক কারিগরি দক্ষতা ও লোকবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। আন্তরিকও নয়। তারা এখনো পুরোনো পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল।
এক্ষেত্রে ৭ কলেজ অনেক এগিয়ে। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও বেশ এগিয়ে। আমি ঢাকার দুটো ঐতিহ্যবাহী কলেজে বেশি চাকরি করেছি, ঢাকা কলেজ (১৮৪১) আর কবি নজরুল সরকারি কলেজ (১৮৭৪)। এ দুটো কলেজের অধ্যক্ষ ছিলাম। তাই এ দুটো কলেজের কথাই বলি-অনলাইন ভর্তি, ক্লাস, পরীক্ষা, কার্যক্রম, আর্থিক লেনদেন, ডাটাবেজ ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফলাফল নির্ণয় অস্বাভাবিক অগ্রগতি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগের ৩০-৫০ জন ছাত্রের ফলাফল এখনো ম্যানুয়ালি তৈরি করা হয়। তাও তৈরিতে কত সময় নেয়, সবাই জানি। মাঝে মাঝে পত্রিকার শিরোনামও হয়। সেখানে ৭ কলেজের কোন কোনো বর্ষে শিক্ষার্থী ৩ হাজার হতে ৫ হাজার। এর ফলাফল এখনো ম্যানুয়ালি ২/৩ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তৈরি করেন। আর্থিক লাভ অনেক বেশী হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগন এটি হাতছাড়া করতে রাজী নন। কমিটির ভেতর নিজেদের সহকর্মীদের সাথেও শেয়ার করতে রাজী নন। ফলে ফলাফল তৈরিতে কয়েক মাস লেগে যায়। কলেজকে দায়িত্ব দিলে এটি ৫/৭ দিনে তৈরি সম্ভব। শিক্ষা বোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ফলাফল খুব দ্রুত তৈরি করে।
আমি ৭ কলেজের সমন্বয়ক ছিলাম। আমরা পরীক্ষার খাতা OMR করার চাপ দিলাম, যাতে দ্রুত ফল প্রকাশ হয়। বিজ্ঞান অনুষদের ডীন (সাবেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি) অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ দায়িত্ব পান। ৬ বছর আগে দ্রুত OMR এর কয়েক কোটি টাকার খাতা কিনে ৭ কলেজের গোডাউনে রক্ষিত। বাস্তবায়ন হয়নি। সে খাতার বস্তা আজ পর্যন্ত কেউ খুলেও দেখেনি। নিশ্চয়ই উইপোকার খাদ্য হয়েছে। সব চলছে পুরোনো নিয়মে। অনেকের বিশাল আর্থিক সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবার ভয়ে এটি বাস্তবায়ন হলো না।
আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসকল শিক্ষক ৭ কলেজের এসব বিশাল অংকের আার্থিক সুবিধা পান না, তাদের কাজই হলো ৭ কলেজের বিরোধিতা করা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উসকে দিতে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া কয়েকজনের অভ্যাসে দাঁড়িয়েছিলো। যেন ৭ কলেজের জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যত অধপতন! বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক কামরুল ইসলাম মামুন, তার কাজই ছিলো নিয়মিত ফেসবুকে উস্কানিমূলক পোস্ট দেওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের উস্কানি দেওয়া। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের সকল সরকারি-বেসরকারি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিলো।
আমার শ্রদ্ধেয় বেশীরভাগ শিক্ষকের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগন শতাধিক সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি আর ট্রেজারার হবার দৌঁড়ে থাকেন। সম্প্রতি শিক্ষা উপদেষ্টা এ নিয়ে কটাক্ষও করেছেন, যা মিডিয়ায় এসেছে। অন্যত্র বেশী বেতনে শিক্ষক হন। ৫/৭ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত এখনো অন্যরা সার্টিফিকেট বিক্রি করে চলে। সরকারের বিভিন্ন লাভজনক সংস্থায় পদায়ন পেতে অস্হির থাকেন। বিদেশে গেলে আসেন না, আসতে চান না, অতিরিক্ত অবস্থান করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারি নিয়োগ, আর্থিক কেলেংকারী কত না পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। পিএসসি নিয়েও কেলেংকারী কম নেই।
না জেনে কথায় কথায় অমুকের সিদ্ধান্তে এ পরিণতি বলি। ৮ বছর হলো, এই আট বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরি কমিশনের দায়িত্ব প্রাপ্তগন পরিস্থিতি সমাধানে কী ভূমিকা পালন করেছেন, বুকে হাত দিয়ে বলুন। আর্থিক বরাদ্দ, আলাদা কর্মকর্তা ও কর্মচারি, আলাদা বিল্ডিং, ৭ কলেজের জন্য অতিরিক্ত একজন প্রোভিসি (প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব ছিলো), ৭ কলেজের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও পিএইচডি বৃত্তি প্রদান, ডাটাবেজ তৈরি, অটোমেটেড ফলাফল নির্ণয়, ল্যাবরেটরি সাপোর্ট, সিলেবাস নিয়মিত আপডেট, একই প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পরীক্ষা কোন কাজটি হয়েছে?
আমি ঢাকা কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলাম, ৭ কলেজের সমন্বয়ক ছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য ছিলাম, শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস এসোসিয়েশনের নির্বাচিত সভাপতি ও মহাসচিব ছিলাম। অনেক কিছু কাছ থেকে দেখেছি।
আইকে সেলিম উল্লাহ খন্দকার: শিক্ষক, সমন্বয়ক