বি. খন্দকার: এক হাজার টাকা খরচ করেও সবজির ব্যাগ ভরতে পারলাম না৷ একসময় বাজারের সব বড় মাছ কিনে আনতাম কিন্তু এখন দ্বিতীয়বার ভাবি সত্যি কি আমার এটা প্রয়োজন আছে? এখন সবজি খাওয়াটাও বিলাসিতার মধ্যে পড়ে গেলো৷
মাথার মধ্যে শুধু একটি বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে৷ যদি আমার মতো মানুষেরই বাজার করতে গিয়ে এমন অবস্থা হয়; তাহলে, তাদের কি অবস্থা যারা মাসে ১৫/২০ হাজার টাকার বেতনে চাকরি করে? তারা কিভাবে জীবন যাপন করছে, বাসা ভাড়া কিভাবে দিচ্ছে, বাচ্চার স্কুলের বেতন কিভাবে জোগাড় করছে, বিল কিভাবে দিচ্ছে?
গতবারও দেশে এসে এই ব্যাগ শুধু সবজি দিয়ে ভরতে ৩০০ টাকাও লাগতোনা অথচ এখন ১০০০ টাকাতেও হচ্ছেনা৷ তারমানে প্রায় তিনগুন দাম বেড়েছে৷ সাধারণ মানুষ যে এখন পর্যন্ত পথে ঘটে ছিনতাই করছেনা এটার জন্য শুকরিয়া আদায় করতে হচ্ছে৷
আমি নিজেই যেখানে ৪/৫ ব্যাগের নিচে কোনোদিন বাজার করিনি, সেখানে এখন এক ব্যাগও ভরতে হিমশিম খাচ্ছি৷ যারা এতোদিন মাছ, মাংস না খেয়ে শুধু সবজি দিয়ে সংসার চালাতো এখন সবজি খাওয়াটাও বিলাসিতার মধ্যে পড়ে গেলো৷
সত্যি বলতে আমি আকাশ থেকে পরে গিয়েছি৷ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ও ব্যয়বহুল শহর মেলবোর্নে আমার বসবাস৷ বাজার করতে গিয়ে সেখানেও আমি এতোটা বিভ্রান্তিতে পরতে হয়না যতটা বাংলাদেশে এসে পরতে হয়৷
টমেটো কিনলাম ১৮০ টাকা কেজিতে৷ যারা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া কানাডাতে থাকেন তারা ডলার দিয়ে কনভার্ট করে দেখুন, ওখানকার ডলারের ইনকামের সাথে দেশের কয়েক হাজার টাকার ইনকামের সাথে তুলনা করে দেখুন মাথা ঘুরে যাবে আপনার৷
দেশে লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক বসে আছে তারা কিভাবে চলছে? অসুস্থ হলে চিকিৎসা কিভাবে করছে? পথে ঘাটে গরিব মানুষকে দেখলে বুক ফেটে কান্না চলে আসে৷ আমি ছোট থেকেই বাহিরে তাই দরিদ্র মানুষ দেখলে আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা৷ মন চায় চিৎকার করে কাঁদি৷ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি..
হে আল্লাহ আমাদেরকে আপনি রক্ষা করুন৷
এই অসহায় মানুষগুলোকে আপনি সাহায্য করুন৷ আপনি আমাদের রিজিকের মালিক, আমাদের রিজিকের পথগুলো সহজ করে দিন৷ আমাদেরকে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ও সারাবিশ্বকে আপনি এই মন্দ অর্থনীতির অভিশাপ থেকে রক্ষা করুন৷
লেখক : অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি- ইউনাইটেড গ্লোরি অব বাংলাদেশ (ইউজিবি)