আমার বাঙলা ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স্রোতে এক সময় হয়ে উঠে ইতিহাস। পৃথিবীর বয়স যতোই বাড়ে ইতিহাস ততোই সমৃদ্ধ হয়। এই সমৃদ্ধ ইতিহাসের প্রতিটি ঘটনার প্রতি মানুষের আগ্রহ চিরাচরিত। ইতিহাসের প্রতিটি দিন তাই ভীষণ গুরুত্ব পায় সকলের কাছে।
আমার বাঙলার পাঠকদের আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে সংযোজন করেছে নতুন আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিন’।
আজ মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ১২ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৫ রমজান ১৪৪৪ হিজরী। এক নজরে দেখে নিন ইতিহাসের এ দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম-মৃত্যুদিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।
ঘটনাবলী:
১৭৭৪ - কলকাতায় হাই কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৮৭১ - প্যারি কমিউন প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৮৮৫ - নিউইয়র্কে বাণিজ্যিকভাবে চলচ্চিত্রের জন্যে ফিল্ম প্রস্তুত শুরু।
১৯৪৮ - পশ্চিমবঙ্গে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ঘোষিত।
১৯৫২ - জুমো কেনিয়াত্তার নেতৃত্বে কেনিয়ায় ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরু হয়।
১৯৫৩ - যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসাবিদ এবং চিকিৎসা গবেষক ডা. জোনাস সাল্ক ঘোষণা করেন তিনি পোলিও রোগের টিকা নিয়ে পরীক্ষায় সফল হয়েছেন।
১৯৭১ - বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়।
পাকিস্তানি শাসকেরা ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ রাতে নৃশংস গণহত্যা আরম্ভ করে, যা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম আক্রমণের পর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
২৫ মার্চের নৃশংসতার মূল কেন্দ্র ছিল প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে আক্রমণ চালানো হয়। সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র হিন্দু আবাসিক হল জগন্নাথ হল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয় এবং হলের প্রায় ৬০০-৭০০ ছাত্রকে হত্যা করে।
সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করলেও, যুদ্ধপরবর্তীতে হামুদুর রহমান কমিশন সাব্যস্ত করে যে, সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইপুয়েট, বর্তমানে বুয়েট) অধ্যাপক নূরুল উলা জগন্নাথ হল ও এর আশেপাশের হলগুলোতে হত্যাযজ্ঞের চিত্র গোপনে ভিডিয়োটেপে ধারণ করেন।
এছাড়া ঢাকার বাইরেও গণহত্যা শুরু হয় এবং সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে হিন্দু জনগোষ্ঠীরা আতঙ্কে ভারতে শরণার্থী হতে থাকে।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২ আগস্ট টাইম সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, হিন্দুরা ছিল মোট শরণার্থীদের তিন-চতুর্থাংশ। তারা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ক্রোধ ও আক্রোশ বহন করছিল।
২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরুর পরপরই ৫ জন বিশ্বস্ত সহযোগীসহ শেখ মুজিবুর রহমানকে তার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের বিচারের জন্য ব্রিগেডিয়ার রহিমুদ্দিন খানকে প্রধান করে একটি সামরিক ট্রাইবুনাল গঠন করেন। রহিমুদ্দিন খানের ট্রাইবুনালের রায় কখনোই প্রকাশ করা হয়নি। তবে ইয়াহিয়া খান যেকোনো মূল্যে শেখ মুজিবের ফাঁসি চাইছিলেন।
এছাড়া অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতাকেও গ্রেফতার করা হয়। কয়েকজন গ্রেফতার হওয়া ঠেকাতে ঢাকা থেকে পালিয়ে যান। ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে সমস্যা নিষ্পত্তির সর্বশেষ প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে যায়। সেই রাতে শুরু হওয়া গণহত্যার প্রেক্ষিতে শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে প্রচারিত এক বেতার ভাষণে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
“ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি, যে যেখানে আছ, যাহার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানী বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।”
শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পূর্বেই বেতার ভাষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে জনগণকে প্রতিরোধের আহ্বান জানান। শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণাটি তৎকালীন ইপিআরের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করা হয়। তবে বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচারক্ষমতা কম হওয়ায় খুব কম সংখ্যক মানুষই সেই ঘোষণাটি শুনেছিলেন।
চট্টগ্রামের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ. হান্নান ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাটি প্রথম পাঠ করেন বলে মনে করা হয়।
৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-প্রধান মেজর জিয়াউর রহমান বেতারকেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতের অনুরোধ জানান এবং ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ মার্চ তিনিও স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
১৯৭২ - বাংলাদেশ প্রথম স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন করে।
১৯৭৯ - মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিন যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যস্থতা একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন।
১৯৯২ - বাংলাদেশ-ভারত ৩ বিঘা নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর।
১৯৯৬ - সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল পাস।
১৯৯৭ - মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন কার্যক্রম শুরু করে।
১৯৯৭ - সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ব্যাপক আয়োজনে বহুল আলোচিত শিখা চিরন্তন স্থাপন।
১৯৯৮ - মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান একটেল (বর্তমানে রবি) চট্টগ্রামে সেবাদান কার্যক্রম শুরু করে।
২০১৫ - গুগল অনুবাদে বাংলা ভাষার ৭ লাখ শব্দ যোগ করে রেকর্ড সৃষ্টি ৷
জন্মদিন:
১৮৯৩ - ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, ডি.জি. নামে পরিচিত বাংলা সিনেমা জগতের অন্যতম পথিকৃৎ। (মৃ. ১৯৭৮)
১৯০৭ - মহাদেবী বর্মা, হিন্দি ভাষার ছায়াবাদ ঘরানার কবি।
১৯১৩ - পল এর্ডশ, অতিপ্রজ (prolific) হাঙ্গেরীয় গণিতবিদ।
১৯২৬ - খালেক নওয়াজ খান, ভাষাসৈনিক ও বাঙালি রাজনীতিবিদ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। (মৃ. ১৯৭১)
১৯৩১ - লিওনার্ড নিময়, মার্কিন অভিনেতা।
১৯৪১ - রিচার্ড ডকিন্স, ইংরেজ বিবর্তনবাদ বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান লেখক।
১৯৭৩ - লরেন্স "ল্যারি" পেইজ মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী এবং ইন্টারনেট উদ্যোক্তা এবং গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
মৃত্যুবার্ষিকী:
১৮২৭ - লুডউইগ ভ্যান বেইটোভেন, জার্মান সুরকার এবং পিয়ানো বাদক। (জ.১৭৭০)
১৯৭১ - অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, বাঙালি শিক্ষাবিদ।
১৯৭১ - আতাউর রহমান খান খাদিম, বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ।
১৯৭১ - গোবিন্দ চন্দ্র দেব, বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবী।
১৯৯৯ - আনন্দ শঙ্কর, প্রখ্যাত সুরস্রষ্টা ও অর্কেস্ট্রাবাদক। (জ.১৯৪২)
২০০৯ - গোবিন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়, মহামহোপাধ্যায় উপাধি ও রাষ্ট্রপতি সম্মানে ভূষিত সংগীত শিল্পী। (জ.১৯১৮)
২০১৫ - টমাস ট্রান্সট্রোমার, নোবেল বিজয়ী সুয়েডীয় কবি ও অনুবাদক। (জ. ১৯৩১)
২০১৫ - ফ্রেড রবশাহম, নরওয়ের চলচ্চিত্র অভিনেতা। (জ. ১৯৪৩)
২০১৫ - ইয়ান মইয়ার, স্কটিশ ফুটবল খেলোয়াড়। (জ. ১৯৪৩)
দিবস:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। (১৯৭১)
সূত্র: উইকিপিডিয়া
এবি/এইচএন