নিজস্ব প্রতিবেদক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স্রোতে এক সময় হয়ে উঠে ইতিহাস। পৃথিবীর বয়স যতোই বাড়ে ইতিহাস ততোই সমৃদ্ধ হয়। এই সমৃদ্ধ ইতিহাসের প্রতিটি ঘটনার প্রতি মানুষের আগ্রহ চিরাচরিত। ইতিহাসের প্রতিটি দিন তাই ভীষণ গুরুত্ব পায় সকলের কাছে।
আমার বাঙলার পাঠকদের আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে সংযোজন করেছে নতুন আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিন’।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর), ২৬ ভাদ্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৪ সফর ১৪৪৪ হিজরী। এক নজরে দেখে নিন ইতিহাসের এ দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম-মৃত্যুদিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।
ঘটনাবলী:
১৭৯৪ - কলকাতায় বিলাতের অনুরূপ মিউনিসিপ্যাল স্বাস্থ্যবিধি চালু হয়।
১৮২৩ - দক্ষিণ আমেরিকার একাধিক দেশের স্বাধীনতার অগ্রাধিনায়ক সিমন বলিভার পেরুর রাষ্ট্রপতি হন।
১৮৯৮ - অষ্ট্রিয়ার সম্রাজ্ঞী এলিজাবেথকে হত্যা করা হয়।
১৯১৯ - প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে মিত্র ও সহযোগী শক্তিদের সাথে অস্ট্রিয়ার সাঁ-জের্মাঁ চুক্তি (Traîte de Saint-Germain) স্বাক্ষরিত।
১৯৩৯ - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কানাডা জার্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের জোটে যোগ দেয়।
১৯৬৭ - জিব্রাল্টারের জনগণ স্পেনের অংশ হওয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের অধীনেই থাকার পক্ষে ভোট দেয়।
১৯৭৪ - পর্তুগালের কাছ থেকে আফ্রিকার দেশ গিনি-বিসাউ স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৯১ - যুগোশ্লাভিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ম্যাসিডোনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
১৯৯৩ - দীর্ঘ ৪৫ বছরের বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে ইসরাইল ও পিএলও পরস্পরকে স্বীকৃতি দেয়।
২০০২ - সুইজারল্যান্ড জাতিসংঘের ১৯০ তম সদস্য রাষ্ট্র হয়।
২০০৮ - বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার চালু করা হয়।
জন্মদিন:
১৭৭১ - মঙ্গো পার্ক, আফ্রিকা আবিষ্কারক অভিযাত্রী।
১৮৩৯ - চার্লস স্যান্ডার্স পেয়ার্স, মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী ও দার্শনিক।
১৮৭২ - কুমার শ্রী রঞ্জিতসিংজী, কিংবদন্তি ক্রিকেটার ও ভারতীয় রাজা। তিনি ইংল্যান্ডের পক্ষে ১৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন। (মৃ.০২/০৪/১৯৩৩)
১৮৮৭ - গোবিন্দ বল্লভ পন্থ , ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও আধুনিক ভারতের রূপকার। (মৃ.০৭/০৩/১৯৬১)
১৮৮৯ - পুণ্যলতা চক্রবর্তী, বাঙালি শিশুসাহিত্যিক। (মৃ.২১/১১/১৯৭৪)
১৮৯০ - অসিত কুমার হালদার ,বাংলা স্কুলের ভারতীয় চিত্রশিল্পী এবং শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম সহকারী। (মৃ.১৩/০২/১৯৬৪)
১৮৯২ - আর্থার কম্পটন, ১৯২৭ নোবেলজয়ী মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী। (মৃ.১৫/০৩/১৯৬২)
১৯২২ - ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, প্রখ্যাত বাঙালী সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার। (মৃ.২৭/১২/১৯৯২)
১৯২০ - সি আর রাও, পরিসংখ্যানে আন্তর্জাতিক পুরস্কারে (গণিতে নোবেল) সম্মানিত ভারতীয়-আমেরিকান পরিসংখ্যানবিদ।
১৯৪১ - এটিএম শামসুজ্জামান, বাংলাদেশী অভিনেতা, পরিচালক ও লেখক। (মৃ. ২০/০২/২০২১)
১৯৮৬ - ইয়ন মর্গ্যান, আয়ারল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়।
মৃত্যুবার্ষিকী:
১৭৯৭ - মেরি ওলস্টোনক্রাফট, ইংরেজ নারীবাদী লেখিকা।
১৮০৬ - ইয়োহান ক্রিস্টফ আডেলুং, জার্মান ভাষাবিজ্ঞানী।
১৯১৫ - বাঘা যতীন, বাঙালি বিপ্লবী। (জ.০৭/১২/১৮৭৯)
১৯২৩ - সুকুমার রায়, বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ শিশু সাহিত্যিকদের একজন। (জ.৩০/১০/১৮৮৭)
১৯৪৩ - ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ৪ জন শহীদ- সত্যেন্দ্রচন্দ্র বর্ধন (জ.১৮৮৮), ভাক্কম আব্দুল খাদের (জ.১৯১৭), ফৌজি সিং, আনন্দন।
১৯৭৫ - জর্জ প্যাগেট থমসন, নোবেলজয়ী ইংরেজ পদার্থবিদ।
১৯৮৮ - অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারতীয় বাঙালি লেখক ও প্রাবন্ধিক। (জ ১৯১৬)
দিবস:
বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস৷
বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস একটি সচেতনতামূলক দিন, যেটি বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর আত্মহত্যা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশে ২০০৩ সাল থেকে পালন করা হয়।
এ দিবসটি পালন করতে আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থার সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য ফেডারেশন একসাথে কাজ করে।
২০১১ সালে অনুমানিক ৪০ টি দেশ এ দিবসটি উদ্যাপন করে। ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করা মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের নিম্ন আয়ের কোন দেশেই আত্মহত্যা প্রতিরোধে কোনো কৌশল বা কর্মপন্থা ঠিক করা নেই, যেখানে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশসমূহের ১০% এবং উচ্চ আয়ের সব দেশেই এ প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হয়।
২০০৩ সালে সর্বপ্রথম পালিত হওয়া দিবসে, ১৯৯৯ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ বিষয়ে নেওয়া কিছু পদক্ষেপেরও আলোকপাত করা হয়। আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ এবং এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য বৈশ্বিক সংস্থার সাথে সাথে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন খাতে এ ব্যাপারটি গুরুত্ব দেওয়া।
বিভিন্ন দেশের আত্মহত্যা প্রতিরোধের নীতিমালাসমূহ ও পরিকল্পনাসমূহের বিকাশ ঘটানো এবং তাদের দক্ষতাকে শক্তিশালীকরণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, এটি প্রতিরোধে প্রধান বাধা হলো সামাজিক সচেতনতার অভাব ও আত্মহত্যার সচেতনতায় উন্মুক্ত আলোচনার অভাব এবং এ বিষয়ে সঠিক তথ্যের অভাব।
আত্মহত্যার সংবেদনশীলতা এবং কিছু দেশে আত্মঘাতী আচরণের অবৈধতার জন্য অনেক সময়ই আত্মহত্যার বিষয়টি সাধারণ মৃত্যু হিসেবেও শ্রেণীভূক্ত করা হয়ে থাকে।
আত্নহত্যার কারণ ও পরিসংখ্যান:
কারণ: পারিবারিক নির্যাতন, কলহ, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, পরীক্ষা-প্রেমে ব্যর্থতা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, প্রাত্যহিক জীবনের অস্থিরতা, নৈতিক অবক্ষয় ও মাদক ইত্যাদি কারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
পরিসংখ্যান:
২০১৪ সালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন মোতাবেক, প্রতি বছর বিশ্বে ৮ লাখেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করে। এছাড়া এর প্রায় ১৫-২০ গুণ মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মহত্যা প্রবণতার ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম। বাংলাদেশে প্রতি বছর কমপক্ষে ১৩-৬৪ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। দেশে আত্মহত্যায় মৃত্যুহার প্রতি লাখ মানুষে কমপক্ষে ৭.৮-৩৯.৬ জন।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। ঐ ৮ মাসে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৯৪ শতাংশ স্কুলগামী শিক্ষার্থী।
আত্মহত্যায় অনেকগুলো আন্তঃসম্পর্কিত এবং অন্তর্নিহিত বিষয় কাজ করে, যা ব্যথা এবং হতাশার অনুভূতি সৃষ্টি করে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি করতে পারে। নিজেকে হত্যার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান, যেমন- অস্ত্র, ঔষধ এবং বিষও অনেক সময় এর প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
এবি/ এইচএন