জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার প্রায় ৫০০ বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব সমৃদ্ধ হিন্দু ধর্মীয় চারটি শিব-মন্দির এখন অযত্ন-অবহেলায় অস্তিত্ব বিলিনের পথে। বর্তমান মন্দিরগুলোতে শ্যাওলা ও বিভিন্ন গাছ-গাছড়াসহ আগাছা জন্মেছে; ঢেকে গেছে নানান গাছের শেকড় ও লতাপাতা দিয়ে। এর বেশির ভাগ জমি ইতোমধ্যে অবৈধ দখলে চলে গেছে। চুরি আর লুটপাট হয়েছে মন্দিরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শিবলিঙ্গসহ মূল্যবান বহু মালামাল। ধ্বসে পড়ছে দেয়ালের পলেস্তারা ও ইট। ফলে যে কোন সময় পথচারিদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
ইতোমধ্যে উপজেলার কয়েকটি মন্দিরের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। গবেষকদের মতে, উপজেলায় যেকয়টি প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন আছে, সঠিক সময়ে সেগুলোর সুপরিকল্পিত সংস্কার প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, কালাই উপজেলার তালোড়া-বাইগুনী শিবমন্দির, কালাইয়ের হাট এলাকার শিবমন্দির এবং জামুরা-বাসুরা গ্রামের দুটি শিব-মন্দির বর্তমানে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ওইসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো অযত্ন-অবহেলায় দিনের পর দিন বিলুপ্তির প্রহর গুনছে। আগের দিনে মন্দিরগুলোতে সুন্দর সুন্দর পোড়ামাটির ফলক, লতাপাতা, জ্যামিতিক নকশা ইত্যাদি উপাদান দ্বারা সুশোভিত ছিল। বর্তমানে ওই উপাদানগুলো বিলুপ্ত হয়েছে।
এদিকে উপজেলার যে কয়টি শিব-মন্দিরের অস্তিত্ব বিলিন হয়ে গেছে, সে তালিকায় আছে-দেওগ্রামের একটি শিব-মন্দির, জগডুম্বর গ্রামের একটি শিবমন্দির, বলিগ্রামের একটি শিব-মন্দির এবং শিমরাইল গ্রামের একটি শিব-মন্দির। এলাকার সচেতন হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবি, ঐতিহ্যবাহী ওইসব শিব-মন্দির সংরক্ষণে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় এসব মন্দিরের অস্তিত্ব ধীরে ধীরে বিলীন হবে।
কালাই উপজেলার জামুরা-বাসুরা গ্রামের শ্রী রতন চন্দ্র, গনেশ, ও উপজেলার বাইগুনী গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মুনীষ চৌধুরী অভিযোগ করে জানান, ইতোমধ্যেই ওইসব শিব-মন্দির থেকে চুরি হয়ে গেছে মূল্যবান মূর্তি, টেরাকোটা সমৃদ্ধ ইট, কষ্টিপাথর সহ উপাসনার নানান উপকরণ। এখনও যেটুকু অস্তিত্ব টিকে আছে, অযত্ন আর অবহেলায় দিনের পর দিন সেগুলো বিলুপ্তির পথে।
উপজেলার পুনট গ্রামের লোক গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুল মজিদ বলেন, তালোড়া-বাইগুনীর শিব-মন্দিরসহ উপজেলার অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা সমূহ সরকারিভাবে চিহ্নিতকরণসহ সেগুলোর সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
কালাই উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কালাই এম.ইউ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সমীর কুন্ডু আক্ষেপ করে বলেন, কালাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত প্রায় ৫০০ বছরের পুরাতন মন্দিরসহ আসপাশের জমিগুলো অবৈধ দখলে আছে। সেগুলো দখলমুক্ত করতে হবে। নিতে হবে সংস্কারের উদ্যোগ।
এই বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, উপজেলার ওইসব শিবমন্দির সংলগ্ন এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর সেগুলো সংস্কার বা পুনঃনির্মাণের জন্য পর্যটন মন্ত্রণালয়ে লিখিত ভাবে সুপারিশ পাঠানো হবে।
আমারবাঙলা/ইউকে