লাইফস্টাইল ডেস্ক: আকাশ পথে বিমানে যাতায়াত যাত্রীদের ভ্রমণকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। পাশাপশি বিমানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বেশ ভোগান্তির কারণ হতে পারে ফ্লাইট বিলম্ব বা ফ্লাইট বাতিল।
তবে অধিকাংশ ভ্রমণকারীর কাছে ট্রিপে ঘটে এমন বাজে অভিজ্ঞতার তালিকায় লাগেজ হারানোর বিষয়টি উপরের দিকে থাকে। শুধুমাত্র এ কারণে অনেক যাত্রী কেবল একটি ব্যাগ সাথে নেন, যেন মালপত্রগুলো নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছায়।
বিমানবন্দরে সকল যাত্রীদের লাগেজ চেক করা হয়। লাগেজ যেন না হারায়, সেজন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
ভ্রমণ বিশেষজ্ঞদের মতে, যাত্রীদের বেশ কিছু ভুলে বিমান ভ্রমণে লাগেজ হারানোর ঘটনা ঘটতে পারে।
তাহলে লাগেজ হারানোর কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক।
১) পুরোনো ট্যাগ ও স্টিকার না সরানো:
আপনি যতবার বিমান ভ্রমণ করেন, প্রতিবারই চেকিংয়ের অংশ হিসেবে লাগেজে স্টিাকার লাগানো হয়। এই স্টিকারগুলোর ব্যাপারে আপনি যদি সতর্ক না হোক, তাহলে এটি বিমানকর্মীদের বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে।
মার্কিন লাগেজ ফরওয়ার্ড কোম্পানির প্রধান নির্বাহী অড্রে কোহাউট বলেন, ‘প্রতিটি লাগেজ সঠিক ফ্লাইটে উঠছে তা নিশ্চিত করতে ফ্লাইট ক্রুরা লাগেজের বর্তমান ট্যাগ ও স্টিকারের ওপর নির্ভর করে।
যদি আপনার লাগেজে একাধিক পুরানো স্টিকার এবং ট্যাগ থাকে, তাহলে কার্গো ক্রুদের ভুল বারকোড স্ক্যান করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ কারণে বিমান ভ্রমণের আগে লাগেজে থাকা পুরোনো স্টিকার ও ট্যাগগুলো তুলে ফেলা উচিত।’
২) লাগেজ নির্বাচনে ভুল:
শুধুমাত্র অব্যবস্থাপনার কারণে লাগেজ হারানো যায় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, কখনো কখনো অনাকাঙ্খিত ঘটনার কারণেও লাগেজ হারায়।
মার্কিন ট্র্যাভেল কোম্পানি রেটপাঙ্কের প্রধান নির্বাহী ও ভ্রমণ বিশেষজ্ঞ জাস্টিন আলবার্টিনাস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আপনার মতো একই ধরনের স্যুটকেস আরো অনেকেরই থাকতে পারে। ফলে ভুল করে অন্যকেউ লাগেজ চেকিং মেশিন থেকে আপনার স্যুটকেস নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এক্ষেত্রে আপনার স্যুটকেসে কিছু ব্যতিক্রমী স্টিকার লাগাতে পারেন কিংবা এমন কালারের স্যুটকেস নিন, যেটি অন্য কারো সঙ্গে মিলবে না।’
৩) লাগেজের জটলা পাঁকানো:
ফ্লাইট কম্পেনশন ওয়েবসাইট এয়ার অ্যাডভাইজার এর প্রধান নির্বাহী আন্তন রাদচেঙ্কো বলেন, ‘যাত্রীরা প্রায়শই সহজে বহন করার জন্য স্ট্র্যাপযুক্ত লাগেজ ব্যবহার করে।
তবে, এগুলো মেশিনে আটকে যায় বা দুর্ঘটনাক্রমে অন্য লোকের লাগেজের সাথে মিশে যায়, ফলে বিমানকর্মীরা ভুলভাবে মনে করতে পারে যে, সেগুলো একসঙ্গে আছে।’
৪) দ্বিতীয়বার ট্যাগ চেক না করা:
ভুল হতেই পারে, বিশেষ করে বিমানবন্দরের মতো ব্যস্ত এলাকায়। এ কারণে বিমানযাত্রায় প্রয়োজনীয় সবকিছুতেই দ্বিতীয়বার নজর দেওয়া জরুরি।
দ্য পয়েন্টস গাই-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ক্লিন্ট পেজ হেন্ডারসন বলেন, ‘যখন আপনার লাগেজ চেকিং হচ্ছে, তখন ভালোভাবে নিশ্চিত করুন- লাগেজে যে প্রিন্টেড ট্যাগ লাগানো হয়েছে তাতে সঠিক তথ্য রয়েছে। বিমানবন্দরের নাম ও কোড নম্বর, আপনার নাম, ফ্লাইটের নম্বর-সব তথ্য দ্বিতীয়বার মিলিয়ে দেখুন।’
তিনি আরো বলেন, ‘যদি আপনি এলিট ও প্রয়োরিটি ট্যাগের উপযুক্ত ভ্রমণকারী হোন, তাহলে নিশ্চিত হয়ে নিন সেগুলোও যুক্ত হয়েছে কিনা, যাতে আপনার লাগেজ দ্রুত বিমানে পৌঁছায়। এছাড়া আপনি গেটের দিকে যাওয়ার আগে, লাগেজ সঠিক পথে যাচ্ছে কিনা সেদিকেও নজর রাখুন। আপনার লাগেজ কনভেয়র বেল্টে রাখা হয়েছে বা কার্টে যোগ হয়েছে, তা নিশ্চিত করুন।’
৫) বিমানবন্দরে খুব দেরিতে বা খুব তাড়াতাড়ি যাওয়া:
বিমানবন্দরে দেরি করে পৌঁছানোর পর তাড়াহুড়া করাটা লাগেজ হারানোর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। হেন্ডারসন বলেন, ‘আবার এমনও হতে পারে যে, আপনি হয়তো ছোট একটি বিমানের ফ্লাইটে যাবেন, যা যাত্রীদের মাধ্যমে দ্রুত পূর্ণ হতে পারে।
সেক্ষেত্রে ফ্লাইট প্রত্যাশিত সময়ের আগে ছাড়ার সুযোগ থাকে। আপনার লাগেজ শেষ মূহূর্তে চেকিং করা ছেড়ে দেবেন না।’
আবার মজার ব্যাপার হলো, নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই লাগেজ চেকিংয়ে দেওয়াটাও উচিত নয়। হেন্ডারসন সতর্ক করে বলেন, ‘আপনি চেক ইন করার জন্য চার থেকে ছয় ঘণ্টা আগে প্রি-ডিপারচার করলে, লাগেজ ফ্লাইট এলাকায় যাওয়ার পরিবর্তে হোল্ডিং এলাকায় চলে যেতে পারে।’
৬) অতিরিক্ত নিরাপত্তা পদক্ষেপ না নেওয়া:
লাগেজের উপরে সঠিক তথ্য থাকা হলো, সেটি ফেরত পাওয়া নিশ্চিতের জন্য আপনার নেওয়া প্রথম পদক্ষেপ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন, যা লাগেজ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দেবে।
হেন্ডারসন বলেন, ‘লাগেজের বাইরে ট্যাগের পাশাপাশি লাগেজের ভেতরেও ট্যাগ যুক্ত করুন। কোনো কারণে বাইরের ট্যাগটি ছিঁড়ে গেলে বা ভেঙে গেলে বিমানকর্মীরা ভেতরের ট্যাগ দেখে আপনার স্যুটকেস আপনার কাছে ফেরত দিতে পারবে।’
অ্যাপল এয়ারট্যাগপ্রেমী হেন্ডারসন আরো বলেন, ‘আপনার যদি অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে লাগেজে একটি ট্র্যাকিং ডিভাইস ব্যবহার করতে পারেন। ’তথ্যসূত্র: বেস্ট লাইফ
এবি/এইচএন