বিপদ আছে জানা থাকলে যেকোনো বিষয় থেকে মানুষ দূরে থাকে। একটি মাছ যেটি সঠিকভাবে রান্না করা না হলে সমূহ বিপদ; তারপরও মানুষ সেটি খেতে কেন পাগল? জানা যায়, এই মাছ প্রশিক্ষিত শেফদের দ্বারা রান্না করা হয়। রান্নায় সামান্য ভুলই হতে পারে মৃত্যুর কারণ। বিষাক্ত জেনেও জাপানে এই মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে শীতকালে এই মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকে জাপানে। এই মাছে রান্না করা যেকোনো খাবার ভীষণ সুস্বাদু বলে পরিচিত। চাহিদা বেশি হওয়ায় এই মাছের দামও আকাশছোঁয়া।
দেখতে গোলগাল। গায়ে ছোপ ছোপ দাগ। চোখ দুটো সবুজ। সমুদ্রে অতলে বাসকরা এই মাছের নাম ফুগুমাছ। জাপানে পরিচিত ব্লোফিশ নামে। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এই মাছকে পটকা মাছ হিসেবে ডাকা হয়। এই নামটির উৎপত্তি মাছের সেই বৈশিষ্ট্য থেকে, যেখানে এটি বিপদের সময় নিজেকে ফুলিয়ে বড় আকার ধারণ করতে পারে। এর শরীরে রয়েছে টেট্রোডোটক্সিন নামে এক ধরনের বিষ। বলা হয়, এই বিষ পটাশিয়াম সায়ানাইডের তুলনায় প্রায় এক হাজার গুণ বেশি বিষাক্ত। যার এক গ্রাম বিষই কয়েকজন মানুষের প্রাণ নিতে যথেষ্ট। তা সত্ত্বেও, এই বিষাক্ত মাছের স্বাদেই মজে গিয়েছে এশিয়ান দেশ জাপান।
কিন্তু কী এমন স্বাদ আছে এই মাছে, যার জন্য মৃত্যুর ঝুঁকিও নিতে রাজী জাপানের মানুষ। শুধু নিজেরাই মুগ্ধ তা নয়, পর্যটকদের কাছেও ফুগু মাছের রয়েছে আলাদা কদর। যার সুবাদে প্রতিবছর জাপানের রেস্টুরেন্টগুলো আয় করে মোটা অঙ্কের অর্থ। মূলত এই বিষাক্ত মাছের প্রতি আকর্ষণের প্রধান কারণ হলো, এর অসাধারণ স্বাদ। অনেকেই মনে করেন, এটি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক ধরনের ভিন্ন অনুভূতি আসে, যা অন্য কোনো খাবারে পাওয়া যায় না। আর এই কারণে, ফুগু মাছ জাপানের খাদ্য সংস্কৃতির একটি বড় অংশ হয়ে উঠেছে।
তবে সুস্বাদু এই মাছ রান্নার বিধিও বেশ কড়া। এর যকৃত, ক্ষুদ্রান্ত্র, ডিম্বাশয়, ত্বক প্রভৃতি বাদ দিয়ে রান্না করতে হয় । কারণ এই সব অঙ্গে রয়েছে ভীষণ বিষ। তবে এই মাছের বিষাক্ততা এবং এর বিপদ মাথায় রেখেই, ফুগু মাছ খাওয়ার আগে প্রতিটি দেশেই বিভিন্ন ধরনের সতর্কতা মেনে চলা হয়। জাপানে ফুগু পরিবেশন করার আগে সরকার থেকে শেফদের কঠোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর লাইসেন্সপ্রাপ্ত রেস্তোরাঁতেই কেবল এই মাছ পরিবেশন করা হয়। কেননা শুধু অভিজ্ঞ শেফরাই সঠিকভাবে মাছ থেকে বিষ আলাদা করে তা নিরাপদভাবে পরিবেশন করতে পারেন।
তবে শুধুমাত্র জাপানেই নয়, সাম্প্রতিককালে ফুগু মাছ খাওয়ার রীতি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে অন্যান্য দেশেও । দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও বিশেষ কিছু রেস্তোরাঁয় পরিবেশন করা হয় ফুগু। কিন্তু যেকোনো দেশে এই মাছের পরিবেশনা করতে হলে, শেফদের প্রয়োজন হয় বিশেষ লাইসেন্স।
আমারবাঙলা/আরইউ