লাইফস্টাইল ডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেলে, এই অবস্থাকে বলা হয় হাইপার ইউরিসেমিয়া। শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে কি খাবেন, কি খাবেন না এটা নিয়ে সবাই খুব দু:শ্চিন্তায় পড়তে হয়। আসুন জেনে নিই ইউরিক অ্যাসিডের নানা বিষয় নিয়ে।
অতিরিক্ত প্রোটিন বা আমিষ খেলে অথবা অ্যালকোহল বেশি খেলে দেহে পিউরিন নামক নন এসেনসিয়াল এমাইনো অ্যাসিড তৈরি হয়। এই পিউরিন থেকে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। ইউরিক অ্যাসিড প্রথমে রক্তে চলে যায়। সেখান থেকে কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এটা টক্সিক এলিমেন্ট।
ইউরিক অ্যাসিড কমাতে যা করবেন-
১. পানি: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। দুই থেকে ২.৫ লিটার। পানি যে কোনো ধরনের টক্সিন দূর করতে সহায়তা করে।
২. ওজন: ওজন স্বাভাবিক রাখতে হবে। ওজন বাড়তি থাকলেই, ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৩. ব্যায়াম: প্রতি দিন ১ ঘন্টা বা ৪৫ মিনিট হাটুন বা যেকোন ব্যায়াম করুন।
৪. ভিটামিন: সি জাতীয় ফল যেমন- লেবু, সবুজ আপেল, পেয়ারা, কমলা,আমড়া ইত্যাদি খেতে হবে।
৫. গ্রিন টি: গ্রিন টি ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সহায়তা করে। তাই ইউরিক অ্যাসিড কমাতে নিয়মিত গ্রিন টি পান করতে পারেন।
৬. অধিক ফাইবার / আঁশযুক্ত খাবার: অধিক ফাইবার যুক্ত সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল প্রচুর পরিমানে খেতে হবে।
৭. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার: অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এতে উপস্থিত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটারি গুণ শরীরে ক্ষারীয় অ্যাসিডের ভারসাম্য বজায় রাখে।
৮. চর্বিহীন মাংস: মাছ, মুরগির মাংস, ডিম পরিমান মত খেতে হবে।
৯. রসুন: পতিদিন খাবারে ১-২ কোয়া রসুন যোগ করুন। এতে রয়েছে প্রদাহরোধী ক্ষমতা।
১১. অলিভ ওয়েল: শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসতে অলিভ অয়েলের জুড়ি নেই। অলিভ অয়েলে রয়েছে প্রদাহরোধী ক্ষমতা।
যেসব খাবার খাওয়া যাবে না-
১.মাছ, মাংস প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তাই প্রতিদিন প্রোটিনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
২. অর্গান মিট অর্থাৎ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাতীয় মাংস যেমন- কলিজা, মগজ, জিহ্বা, ফুসফুস, কিডনি ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। কারণ এগুলো ইউরিক এসিড বাড়ায়।
৩. চিনিযুক্ত পানীয়, অ্যালকোহোল এবং ক্যাফেন জাতীয় পানীয় খাওয়া যাবে না।
৪. সামুদিক মাছ খাবেন না।
৫. দেশী ছোলা, রাজমা, কাবুলি ছোলা, মটর, ডাল খাবেন না।
৬. দুধ, দুধ জাতীয়, ফুল ক্রিম ইত্যাদি খাবার খাবেন না
৭. পালং শাক,ফুলকফি,মাশরুম, মটরশুঁটি।
৮.খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দিন। পাতে লবন নিবেন না। প্যাকেটজাত খাবার খাবেন না। প্যাকেটজাত খাবারে অধিক পরিমাণে লবণ থাকে।
উচ্চমাত্রার ইউরিক অ্যাসিডের ভয়াবহতা-
১. ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বিশেষ করে কিডনির উপরে দীর্ঘদিন জমলে রেনাল স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
২.কিডনি ঠিক মত কাজ করে না এবং মুত্রের মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিড ও অন্যান্য বর্জ্য শরীর থেকে বের হতে পারে না।
৩. দীঘমেয়াদী এই সমস্যা থাকলে কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয় এবং কিডনি ড্যামেজও হয়।
৪. অতিরিক্ত ইউরিক এসিড শরীরের হাড়ের বিভিন্ন জয়েন্টে ক্রিস্টাল এর মত হয়ে জমে যায়, যাতে করে অনেক রোগীর হাড়ের সন্ধিস্থলে ফুলে যায় এবং খুব ব্যাথা হয়। এই রোগের নামই গেটে বাত।
এবি/ও